Home / বিশেষ সংবাদ / আমি খাটে ঘুমিয়েছি, নূর হোসেন সোফায় : ওই রাতে সে…
আমি খাটে ঘুমিয়েছি, নূর হোসেন সোফায় : ওই রাতে সে...

আমি খাটে ঘুমিয়েছি, নূর হোসেন সোফায় : ওই রাতে সে…

”পাশাপাশি রুমে থাকলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। আর হোটেল শেরাটনে রাতে থাকলেও আলাদা ছিলাম দুজন। আমি খাটে ঘুমিয়েছি, আর নূর হোসেন সোফায়। কারণ জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মদ খেয়ে ওই রাতে মাতাল ছিল নূর।”

এভাবে মিডিয়ার সামনে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন নীলা।

নূর হোসেন শুধু ভয়ঙ্কর এক ত্রাসের নামই নয় তিনি এক নারী লোভীও। তার খপ্পরে পরে স্বামী সংসার হারাতে হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলাকে। তার উপর নূর হোসেনের চোখ পড়ার কারণেই স্বামী সংসার হারিয়ে নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হয়ে থাকতে হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরাও ত্যাগ করেছে তাকে। নূর হোসেনের কারণে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

নীলা নিজেই জানিয়েছেন কি করে নূর হোসেন তাকে রক্ষিতা করে রাখতে চেয়েছিলো। কিভাবে নানা কূটকৌশল করে তার নামে বদনাম ছড়িয়ে বাধ্য করেছে নূর হোসেনের কাছে যেতে। সাত খুনের ঘটনার পরও নূর হোসেন তাকে নিয়ে ভারতে থাকতে চেয়েছিলেন। এসব ঘটনা নীলা নিজেই জানিয়েছেন গণ্যমাধ্যমকে।

তিনি জানান, ”আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমার ওপর। সে আমাকে ‘রক্ষিতা’ বানাতে চেয়েছিল। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এজন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি।”

নীলার ভাষ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নির্বাচনের পর মূলত নূর হোসেন তার প্রতি কু-নজর দিতে শুরু করে। প্যানেল মেয়র নির্বাচনে নূর হোসেনের হয়ে কাজ করেন নীলা। এরপর নূর হোসেন কারণে অকারণে তাকে ডেকে পাঠাতো। বাসার সামনে গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে যেতো। নানারকম সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করতো, না নিতে চাইলেও তিনি জোর করে সাহায্য করতো।

নীলা বলেন, ”আমাকে পেতে নূর সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকে। আমার মন জয় করতে কাজে অকাজে বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। সময় অসময়ে শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডের নূরের কাউন্সিলর অফিসে ডেকে পাঠাতেন। একদিন বলেই বসলেন, নীলা আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি- এটা বোঝ না কেন? তুমি চাইলে তোমাকে আলাদা বাড়ি-গাড়ি দিয়ে ‘রাজার হালে’ রাখতে পারি। তুমি কখন আসতে চাও বলো।”

তিনি বলেন, ”নূর হোসেনের এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ করে বলি— আপনি আমার চাচা। বয়সের পার্থক্য দ্বিগুণ। এছাড়া স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার আমার। কী প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক করব? প্রতিবাদের পর আমি নূরের ফোন ধরা বন্ধ করে বাড়িতে চলে আসি। বাইরে বেরুনো বন্ধ করে দেই। এ সময় নূর তার সহযোগী আরিফুল হক হাসান ও শাহজাহানকে বাড়িতে পাঠায়। একবারের জন্য হলেও নূর হোসেনের ফোন ধরতে বলেন। এ সময় নূর হোসেন ফোন করে বলেন, নীলা তুমি আমার সম্পর্কে জানো। যা বলি তার চেয়েও বেশি করি। আমার কথা না শুনলে এবং কাছে না এলে বড় বিপদ হবে তোমার। তুমি স্বামীকে আর তোমার সন্তান হারাবে বাবাকে। এখন ভেবে সিদ্ধান্ত নাও।”

”একদিকে নূর হোসেন এলাকায় ছড়িয়ে দেয় তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এমন খবর। অন্যদিকে হুমকি দিতে থাকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও লাভ নেই।”

এ বিষয়ে নীলার দাবি, ”নূরের আকাঙ্ক্ষা ছিল নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের এমপি-মেয়র হওয়া। নূর হোসেন প্রায়ই অহঙ্কার নিয়ে বলতেন, শামীম ওসমান- আইভীর চেয়ে আমি অনেক বেশি টাকার মালিক। জনপ্রিয়তা নয়, এখন টাকা থাকলেই সব হয়। নমিনেশন-ভোট কেনা যায়। আমার টাকার গন্ধে এমপি, ডিসি, এসপি, র‌্যাব, সার্কেল এসপি, ওসি, এসআইসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ক্যাডাররা ঘুরঘুর করে। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ না করে উল্টো চামচামি করে।”

তিনি বলেন, ”সিদ্ধিরগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ নূর হোসেনের নির্যাতনের শিকার। মানসিক-শারীরিকভাবে অনেকেই পঙ্গু। বিচার চাইতে গিয়ে হামলা-মামলায় এলাকা ছাড়া। আমি বিচার চাইতে গেলে পরিণাম হয়তো আরও ভয়াবহ হবে। কারণ থানা পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ ক্ষমতাধররাও নূর হোসেনের কেনা ‘গোলাম’।”

নীলার ভাষ্যমতে, এক পর্যায়ে সে বাধ্য হয়ে স্বামীর প্রাণ রক্ষার্থে স্বামীকে তালাক দেয়। তবে নূর হোসেনকে বিয়ে করেননি। যদিও তার সাথে হোটেল শেরাটনে একসাথে রাত্রী যাপন, ভারতে সফর করেছেন বলে নিজেই স্বীকার করে বলেন, ”তখন আমার মেয়ের বয়স ৫ বছর। তাকে দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে ভর্তি করতে ভারতে যাই। ভর্তির সময় নূর হোসেন আমার সন্তানের অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষরও করেন। তবে তার আরেক বন্ধুর ফ্যামিলির সাথে যায়। এ কারণে পাশাপাশি রুমে থাকলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। আর হোটেল শেরাটনে রাতে থাকলেও আলাদা ছিলাম দুজন। আমি খাটে ঘুমিয়েছি, আর নূর হোসেন সোফায়। কারণ জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মদ খেয়ে ওই রাতে মাতাল ছিল নূর।”

তিনি জানান, নূর হোসেন তার বাসায় প্রায়ই নানা ধরনের গিফট পাঠাতো, ৩২ লাখ টাকা দামের একটি এলিয়েন গাড়ি পাঠিয়েছিলো। সেই গাড়ি পরে ফেরত পাঠানো হয় বলে নীলা জানান। এছাড়া তার নামে থাকা জমির উপর বাড়ি নির্মাণকালে নূর হোসেন ইট-বালু-রড পাঠিয়েছিলো। অবশ্য বিভিন্ন কাজের কমিশন বাবদ তিনি নূর হোসেনের কাছে ৩৫ লাখ টাকা পেতেন বলেও গণমাধ্যমকে জানান।

নিউজ ডেস্ক ।।  আপডেট: ০১:৪৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৫, রোববার

ডিএইচ