র্যাঙ্কিংয়ে জিম্বাবুয়ে এখন তলানিতে। সর্বশেষ ১০ ওয়ানডের একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি মাসাকাদজা-টেলর-সিকান্দার-চিগুম্বুরারা। সেখানে বাংলাদেশ এখন র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বর। পারফরম্যান্সের গ্রাফটাও আছে উপরের দিকে। মাশরাফির নেতৃত্বে টগবগ করে ফুটছে টাইগাররা।
এই তো সেদিন দুই প্রধান চালিকাশক্তি তামিম-সাকিব ছাড়াও পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলল মাশরাফির দল। রূদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ বলে গিয়ে হার মানলেও রোহিত-ধোনি-ধাওয়ান-বুমরাহ-জাদেজাদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছিল টাইগাররা।
এবার ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও তামিম-সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ। ইতিহাস পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সাফল্যের দুই প্রধান কারিগর তামিম-সাকিব। ব্যাট হাতে তামিম দলের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি বলতেই তামিমের চওড়া ব্যাট। আগের মতো তেড়েফুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও চটকদার স্ট্রোক খেলা বাদ দিয়ে তামিম এখন অনেক পরিণত। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে মাঠ গরম করার চেয়ে লম্বা ইনিংস খেলায় অধিক মনোযোগী।
আমি উইকেটে থাকলেই রান আসবে, স্কোরবোর্ড মোটাতাজা হবে-এই বোধ উপলব্ধি থেকেই ব্যাটিং স্টাইল পাল্টে ড্যাশিং তামিম এখন ‘অ্যাটাকিং’ ওপেনারের বদলে দলের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা।
ওদিকে, সাকিবের কথা নতুন করে কিইবা বলার আছে। ব্যাট ও বল হাতে সব্যসাচী সাকিব যে বিশ্বসেরা, টিম বাংলাদেশের ‘প্রাণভোমরা’। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরা হয়েছেন এই সাকিব।
এমন দুজন অপরিহার্য ও অতি কার্যকর পারফরমার ছাড়া যখন এশিয়া কাপে ভারতীয়দের সঙ্গে সমান তালে লড়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে এখনকার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পেতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
তবে সাকিব-তামিমের কথা বারবার উঠে আসলেও কঠিন সত্য হলো, তারা দুজনই ১৫ জনের বাইরে। তাই দলের গঠন বিন্যাস ও লক্ষ্য-পরিকল্পনা আঁটতে হচ্ছে এই দুজনকে হিসেবের বাইরে রেখেই।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, আজ শেরে বাংলায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে কেমন হবে টিম কম্বিনেশন? কোন ১১ জন খেলবেন? যতদূর জানা গেছে, একাদশ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গী হবেন কে, নাজমুল হোসেন শান্ত নাকি ইমরুল কায়েস? তা নিয়েই চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা।
নাজমুল হোসেন এশিয়া কাপে ব্যর্থ। তিন ম্যাচে করেছিলেন সাকুল্যে ২০ রান (৬, ৭, ৭)। অন্যদিকে ইমরুল কায়েস এশিয়া কাপে পরে সুযোগ পেয়েই ওপেনিং পজিশন বদলে মিডল অর্ডারে খেলে ৭২ রানের এক ইনিংস উপহার দিয়ে টিম ম্যানেজম্যান্ট ও নির্বাচকদের আস্থাভাজন হয়েছেন। এছাড়া তার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি।
তাই লিটন দাসের সঙ্গে ইমরুলকে দিয়েই ওপেন করানোর কথাই ভাবা হচ্ছে বেশি। লিটন-ইমরুল জুটিকে ব্যাট হাতে নামতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তারপরও শান্তর দিকে কোচ স্টিভ রোডসের আছে সুদৃষ্টি। তিনি ভবিষ্যতের কথা ভেবে তামিম-লিটনের ব্যাকআপ হিসেবে শান্তকেই পেতে চান। তাই শান্তর খেলার সম্ভাবনাও একদম শেষ হয়ে যায়নি।
এছাড়া অন্য কোনো পজিশন নিয়ে সংশয় নেই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আজ সকালে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, টিম কম্বিনেশন হবে এরকম : ছয় ব্যাটসম্যান, তিন পেসার এবং দুই স্পিনার।
এখন নিশ্চয়ই সবার জানতে আগ্রহ হচ্ছে-ব্যাটসম্যান কোন ছয়জন? লিটন, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ তো অটোমেটিক চয়েজ। শান্ত-ইমরুলের যে কোনো একজন খেলবেন ওপেনিংয়ে। মোহাম্মদ মিঠুনও প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। ব্যাটসম্যান কোটায় আরেকজন হলেন-ফজলে রাব্বি। তাকে তিন নাম্বারে খেলানোর সিদ্ধান্ত একরকম চূড়ান্ত।
এশিয়া কাপের জোড়া ফিফটি মিঠুনের অবস্থান করেছে শক্ত। তার একাদশে থাকা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুর্জা আগের দিন প্রেস কনফারেন্সেই বলে গেছেন, আমরা এখন ঘরের মাঠেও তিন পেসার নিয়েই খেলি। যদিও শেরে বাংলার উইকেট বরাবরই স্পিন সহায়ক, স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পান। তারপরও মাশরাফির ইঙ্গিত, তিন পেসার খেলানোর।
সে কারণেই টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, ‘আনপ্রেডিক্টেবল শেরে বাংলার চরিত্র একেক সময় একেক রকম। কোনো সময় বল টার্ন করে, তাই স্পিন ডিপার্টমেন্ট ঠিক রেখেই আমরা তিন পেসার খেলানোর কথা ভাবছি।’
মাশরাফি এমন ভাবতেই পারেন। কারণ তিনি নিজে এবং কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান আছেন দলে। তৃতীয় পেসার হিসেবে যার নাম সবার আগে উঠে আসে সেই রুবেল হোসেন টনসিল ও ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, এখনও এন্টোবায়োটিক খাচ্ছেন। তাই আজ তার খেলার সম্ভাবনা নেই। আজকের ম্যাচে রুবেল বিশ্রামেই থাকবেন।
তাহলে তৃতীয় পেসার কোটায় কি আবু হায়দার রনি? না, সে সম্ভাবনা কম। কারণ প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে দারুণ বল করা (৩/৩২) সাইফউদ্দিন আছেন হিসেবে এগিয়ে। থার্ড সিমার হিসেবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকেই দেখার সম্ভাবনা বেশি।
বাকি থাকলো স্পিনার কোটা। দুই স্পিনার হিসেবে অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর নাজমুল ইসলাম অপুই রহস্যময় শেরে বাংলার উইকেটে বল ঘুরানোর দায়িত্বে থাকবেন।
তাহলে এবার একাদশটা মিলিয়ে নিন :
লিটন, ইমরুল/শান্ত, ফজলে রাব্বি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, সাইফউদ্দিন, মাশরাফি, মিরাজ, নাজমুল অপু, মোস্তাফিজ।
বার্তা কক্ষ