চাঁদপুরে চিকিৎসা সেবায় হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে মানবতার এক অনন্য বাতিঘর হয়ে উঠেছে কাজী লজ্জাতুন্নেসা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন অসহায় রোগীরা। আর স্বল্প টাকায় করতে পারছেনা বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা।
মানবতার বাতিঘর খ্যাত এই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নে অবস্থিত। ২০১৭ সালে ১৯ শতাংশ ভূমির ওপর তিন-তলা ভবনে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি নির্মাণ করেন ঢাকা মীরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রিন্স গ্ৰুপ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগীরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষার জন্য দিতে হয় কেবল নামমাত্র মূল্য। যাতে দরিদ্র মানুষ সহজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো— “এ পর্যন্ত টাকার অভাবে কোনো রোগী চিকিৎসা সেবা ছাড়া ফেরত যেতে হয়নি।”
গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই হাসপাতালটি হয়ে উঠেছে আশার আলো। প্রসূতি সেবার ব্যয়বহুল কাঠামোর বাইরে থেকে এখানে তারা পাচ্ছেন সাশ্রয়ী এবং মানবিক সেবা। ফলে তরপুরচন্ডী ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, রিকশাচালক সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন এই হাসপাতালে। তাদের মুখে একই সুর— এখানে চিকিৎসা মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, এর সাথে মেলে সহমর্মিতা এবং ভালোবাসার নিশ্চয়তা।
শহরের নামিদামি হাসপাতালে যেখানে চিকিৎসার খরচ দিনদিন বেড়েই চলেছে, সেখানে কাজী লজ্জাতুন্নেসা মেমোরিয়াল হাসপাতাল প্রমাণ করছে— অর্থ নয়, মানবতাই চিকিৎসা সেবার মূল ভিত্তি হতে পারে।চিকিৎসাসেবার আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়ানো এই হাসপাতাল আজ চাঁদপুরের হতদরিদ্র মানুষের কাছে যেন সত্যিকারের এক মানবতার বাতিঘর।
কাজী লজ্জাতুন্নেসা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক মোঃ শাহাদাত হোসেন জানান, এখানে অত্যাধূনিক স্বাস্থ্যসেবার সবরকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিশু, সার্জিক্যাল, গাইনী, মেডিসিন, এন্যাসথিশিয়া বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ইনডোর-আউটডোর, ইসিজি, এক্সরে, ওটি প্রভৃতি সেবা এবং ডেলিভারীসহ প্যাথলজিক্যাল সকল সেবা প্রদান করা হয়। দু’জন পুরুষ ও মহিলা চিকিৎসক, ৫ জন নার্স, ১০ জন আয়া ও ১ জন ফার্মসিস্ট সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, এখানে সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের তুলনামূলক কম ফ্রি পরিশোধ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীদের ওষুধের টাকাও আমাদের পরিশোধ করতে হয়। টাকার অভাবে এখান থেকে কোন রোগীকে চিকিৎসা ছাড়া ফিরে যেতে হয় না।
প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা কাজী জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এই এলাকার দরিদ্র, অসহায় এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বল্প টাকায় আধুনিক ও উন্নত সেবা দেওয়ার প্রয়াস নিয়েই ঢাকার মিরপুরের সুনামধন্য প্রিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাজী রুহুল আমিন এবং তার ছোট ভাই কাজী মো. হেলাল উদ্দিন সাহেব এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখান থেকে টাকা ইনকামের কোন চিন্তা আমাদের নেই। আমরা বিনা বেতনে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য সেবাদানে আমরা সকলের দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/ ২ অক্টোবর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur