কচুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সরাইলকান্দি। চারদিকে সবুজ মাঠ, খোলা প্রকৃতি—সেই মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটি ভবন, যার নাম সরাইলকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামের মানুষদের কাছে এটাই ভরসার জায়গা, সান্ত্বনার আশ্রয়। কারণ, এখান থেকেই মিলছে তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সঠিক পরামর্শ আর নতুন করে বাঁচার আশা।
প্রতিদিন সকাল ৯টা বাজতেই দরজায় কড়া নাড়ে কোনো না কোনো রোগী। গর্ভবতী মায়েরা আসেন ওজন মাপতে, রক্তচাপ কিংবা ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে। শুধু তাই নয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুর যত্ন নিয়ে এখানে দেওয়া হয় পরামর্শ। “আমরা এখানে এলে শুধু ওষুধ পাই না, পাই ভরসাও। স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের মা–বোনের মতো যত্ন নিয়ে কথা শোনেন”—বলছিলেন এক গর্ভবতী মা।
প্রতি মাসে একবার ক্লিনিক প্রাঙ্গণে বসে কিশোর-কিশোরীদের সেমিনার। বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তিত সময়ে স্বাস্থ্য পরিচর্যা সমন্ধে পরামর্শ প্রদান করা হয়। এই আয়োজন তাদের কাছে যেন বন্ধুর মতো পরামর্শদাতা।
এ ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বাধন বসু। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চাকরি স্থানান্তরজনিত জটিলতায় বেতন পাচ্ছেন না, তবুও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
“মানুষ আমার কাছে আসে, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। যতটুকু পারি সাহায্য করি”—বলছিলেন তিনি শান্ত হাসি মুখে। রোগীরা বলেন, “উনি আমাদের ভরসা। বিনা পয়সায়, আন্তরিকভাবে সেবা দেন—এমন মানুষ খুব কমই আছে।”
সেবার পাশাপাশি রয়েছে সীমাবদ্ধতাও। ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, যে কারণে ভবনটি এখন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। তবুও সীমিত সম্পদ নিয়েই এখানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা চলছে, চলছে সেবা কার্যক্রম।
সরাইলকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক আজ প্রান্তিক মানুষের আস্থার নাম। এখানে হয়তো বড় কোনো চিকিৎসা হয় না, হয়তো সীমাবদ্ধতা অনেক, কিন্তু বিনামূল্যে পরামর্শ, ঔষধ বিতরণ আর সচেতনতার আলো ছড়িয়ে মানুষকে সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে দিচ্ছে এই ছোট্ট ক্লিনিক।
কচুয়া প্রতিনিধি/ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur