জনসংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও ভোটার হিসেবে পিছিয়ে আছে নারী ভোটাররা। ৩১ আগস্ট প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তালিকানুসারে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে নারী ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন আর পুরুষ ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন। নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার বেশি ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৩৬ জন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটার করার কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। ভোটার হতে উৎসাহিত করতে প্রচারণাও চালানো হয়েছে। এদিকে নারী নেতৃবৃন্দ মনে করেন, নারীরা ভোটার হলে রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণে আগ্রহ বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী এখনো অনেক পেছনে। একজন প্রধানমন্ত্রী একজন বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়ে নারীর সামগ্রিক রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে বলা যায় না। কারণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী দলে প্রতি কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৩ শতাংশের এখনো পূরণ হয়নি। ৭১ সাল থেকে সংরক্ষিত আসনে নারীর সংখ্যা বেড়েছে কম। নারীকে মনোনয়ন দিতে নারীর ভোটার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন নারী নেতৃবৃন্দ।
নারীরা ভোটার হলে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, সাধারণ আসনে নারীকে মনোনয়ন দিতে চায়না পুরুষতন্ত্র। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হয় না। তাই ভোটারদের সংখ্যা বাড়ালেও পুরো রাজনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
বিজ্ঞজনেরা যা বলেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমা, চিকিৎসা সেবার উন্নতিসহ বিভিন্ন কারণে ২০০০ সালের পর থেকে নারীর আয়ুষ্কাল বাড়তে শুরু করে। ২০২৩ সালে এসে নারীর
সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সেন্সাস রিপোর্ট: ২০২২ এর তথ্যমতে, ২০-২৪ বছরের জনসংখ্যার মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। এই বয়সের নারী ভোটার হওয়ার কথা থাকলেও নারী ভোটার নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র করার বিষয়গুলোতে পিছিয়ে আছে। তাই তারা ভোটার কম।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য কল্পনা আক্তার বলেন, রাতের ভোট, ভোট চুরি, ডাকাতি এসব নানা কারণে ভোটার হওয়া ওপর আগ্রহ নেই একশ্রেণির মানুষের। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা নারীদের নিবন্ধনজনিত কার্যক্রমের জন্য পুরুষের ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছে সমাজ। ফলে তারা নিজেরা নিবন্ধন করে ভোটার হতে পারে না। আবার এক-দুই দিনে ছুটি নিয়ে বেতন কেটে গ্রামের বাড়ি গিয়ে ভোটার হওয়া তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। ফলে এই শ্রেণির নারীরা ভোটার হন কম।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এক শ্রেণির নারীদের মধ্যে ভোটার হওয়ার বিষয় সচেতনতা কম। তারা ভোটার হতে চান না। বিশেষ করে গার্মেন্টকর্মী। তারা কাজের জন্য শহরে থাকেন, ভোটার হতে গ্রামে যান না। ফলে ভোটার হতে পারেন না। নারীর অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বৃদ্ধিতে নারী আন্দোলনকে নারী ভোটার বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ভোটের স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলো নারীকে ভোটার বৃদ্ধি করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনে ভোটার করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোটার হতে উৎসাহিত করতে প্রচারণাও চালিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বস্তি এলাকাসহ ভাসমান ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে বেদে, যাযাবর গোষ্ঠীকেও ভোটার করার কার্যক্রমও নির্বাচন কমিশনের আছে। তবে কাউকে জোর করে নির্বাচন কমিশন ভোটার বানাতে পারে না। এখনো সময় আছে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যে নাগরিকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে সে ভোটার হতে পারবে। (ইত্তেফাক)
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur