Home / বিশেষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াকফ এস্টেট শতাব্দীকাল থেকেই সেবামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করছে
minar-

হাজীগঞ্জে মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াকফ এস্টেট শতাব্দীকাল থেকেই সেবামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করছে

ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং গণমানুষের সেবার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স ‘‘ চাঁদপুর ধন্য-হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের জন্য।”শতাব্দীকাল থেকেই আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াকফ এস্টেট নানামুখী সেবা-উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করছে । যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

ধর্ম বিষয়ক কার্যক্রম : গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত : সলমানগণের ধর্ম-কর্মের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে প্রতিদিন কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষজন হৃদয়ের টানে এখানে এসে নামাজ আদায় করে প্রশান্তি অনুভব করেন। ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের আত্মিক প্রশান্তি লাভের পাশাপাশি ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক কল্যাণ লাভের প্রত্যাশায় ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। অত্র মসজিদে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসল্লিগণের নামাজ ও নামাজের প্রাসঙ্গিক সেবা, অযু-পানি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলো-বাতাস, ধর্মীয় কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ সাধ্যের মধ্যে সর্বোত্তম সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

গুরুত্বপূর্ণ দিবস : বর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে প্রতি বছর পবিত্র মিলাদুন্নবী (সাঃ)। পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.), পবিত্র শবেমেরাজ, পবিত্র শবেবরাত, পবিত্র শবেকদর, পবিত্র আশুরাসহ বিভিন্ন সময়ে ওয়াজ মাহফিলের এ দ্বীনি আমলের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

বয়স্কদের পবিত্র কোরআন শিক্ষা : বয়স্ক দ্বীনদার অনেক মানুষ আছেন যারা সহিহ শুদ্ধ করে কোরআন শরীফ পড়তে জানেন না। ছোট বেলায় শিখলেও চর্চার অভাবে ভুলে গেছেন। তাদের জন্য অত্র এস্টেটে সহিহ-শুদ্ধরূপে পবিত্র কোরআন শরীফ শিক্ষা, পবিত্র নামাজ আদায় সংক্রান্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

মহিলাগণের দ্বীনি কার্যক্রম- : পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের দ্বীনি এলেম শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। সেই বিবেচনায় মহিলাগণকে সহি-শুদ্ধভাবে দ্বীনি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি ইংরেজী মাসের প্রথম মঙ্গলবার, মসজিদে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত নামাজের স্থানেই মহিলাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বিষয়ে বয়ান পেশ করে সহিহ শুদ্ধরূপে দ্বীন পালনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষা- : যে সকল শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পড়া-শুনা না করে কেবলমাত্র স্কুলে লেখাপড়া করছে, তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে নামাজসহ প্রাসঙ্গিক দ্বীনদারীর বিষয় চিন্তা করে তাদের জন্য নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পবিত্র রমজানের ব্যবস্থাপনা : পবিত্র রমজান মাসে সেহরী ও ইফতারের সময়সূচী সর্বসাধারণের জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে, হাজীগঞ্জে রমজান অতিবাহিত হয় তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ও বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশে। রমজান মাসে রোজাদারগণের ইফতার ও সেহরী খাওয়ার সুবিধার্থে স্মরণাতীত কাল থেকে সাইরেন বাজানোর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।রমজানের শেষ দশকে প্রায় কয়েকশত এতেকাফকারীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। রমজান মাসে ইফতারের সময় আগত পথচারী ও সর্বসাধারণের জন্য ইফতারের উন্মুক্ত ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রতি বছর বিভিন্ন ব্যক্তি ও মসজিদে বিনামূল্যে পবিত্র কোরআন শরীফ বিতরণ করা হয়। পবিত্র কোরবানীর ফাজায়েল ও মাসায়েলের উপর হ্যান্ডবিল বিতরণ করে শুদ্ধরূপে পবিত্র কোরবানীর কার্যসম্পাদনে কোরবানী দাতাগনকে অভিজ্ঞ করে তোলা হয়। মসজিদ-মাদ্রাসার গরিব স্টাফ-কর্মচারীদের মধ্যে কোরবানীর গোস্ত প্রদান করা হয়।

জুময়াতুল বিদা : এক সময়ে পাক ভারত উপমহাদেশের মধ্যে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ অনন্য বৃহত্তম জুমআতুল বিদা নামাজের জামাত উদযাপনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাত ছিল। ঐতিহ্যের সে ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট করে লক্ষাধিক রোজাদার মুসল্লি জুমআর জামাতে সমবেত হন। এতে অসংখ্য আলেমে দ্বীন, অলি-বুজর্গ, হাজীসাহেবান, দুস্ত-এতিম, অসহায় তথা সর্বস্তরের সম্মানিত রোজাদার আল্লাহভীরু নবীপ্রেমিক মানুষ এবাদত বন্দেগী করেন। দোয়া মুনাজাত তসবিহ-তাহলিল আদায় করে মনের নেক মাকছুদ পূরণের আশায় দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সকল স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ, এলাকার যুব সমাজ, সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন নামাজের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।

দাফন-কাফন : সাধারণত মুসলমানদের জীবনে শেষ ইচ্ছা থাকে মসজিদের পাশে শায়িত হওয়া। সে লক্ষ্যে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পাশে সর্বসাধারণের জন্য আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) পারিবারিক কবরস্থানকে সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার প্রেক্ষিতে কবরস্ত করার জন্য সাধ্যমত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে অলি, বুজুর্গ ও আল্লাহভীরু নেকবান্দাদের সাথে দুস্ত, গরিব ও অসহায় মানুষও শায়িত আছেন। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। কবর স্থানের জায়গা সম্প্রসারণ অতীব জরুরি।

Hajigonj-Boro-Masjid

শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম : আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) দ্বীনদার মুসল্লি গড়ে তোলার পাশাপাশী দ্বীনি কার্যক্রমের স্বার্থে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সম্পাদিত দলিলে তিনি উল্লেখ করেন যে ‘মুসল্লিগণ হলেন মসজিদের খোরাক। এলেম ছাড় নামাজ রূহ ছাড়া শরীরের মত’ এলমে দ্বীন তথা কোরআনের শিক্ষা প্রদানের জন্যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অতীব প্রয়োজন’। ‘সে চিন্তা চেতনার প্রেক্ষিতে তিনি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মাদ্রাসা গড়ে তোলেন – আলহামদুলিল্লাহ।

আহমাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা : মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) কর্তৃক অত্র এলাকায় ধর্মীয়ভাবে জ্ঞানী মুসলমানদের দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যানের লক্ষ্যে ছহি শুদ্ধ রূপে নামাজ আদায়ের কথা চিন্তা করে মসজিদ প্রতিষ্ঠার সূচনার পাশাপাশি মক্তব চালু করেন। উক্ত মক্তবে কায়দা, আমপারা, কোরআন শিক্ষা পাঠ দানের মধ্য দিয়ে অত্র এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষার গোড়াপত্তন করেন- আলহামদুলিল্লাহ।
স্থাপিত মক্তবকে পর্যায়ক্রমে ‘ইসলামীয়া মাদ্রাসা’ হিসাবে গড়ে তোলের লক্ষ্যে আরবী, ফার্সী, উর্দু, বাংলা, ইংরেজী পড়াশুনার উদ্দেশ্যে জামাতে ছুয়াম পর্যন্ত উন্নীত করে ১৯৪৩ সনে দলিল সম্পাদন করেন। পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরপূর্বক মসজিদের সম্মুখস্ত পূর্ব উত্তর সীমানায় দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময়ে মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করেন হাটিলা নিবাসী হযরত মাওলানা মুহাম্মদ খলিলুর রহমান (রহ.)।

দ্বীন কার্যক্রমের পাশাপাশি মাদ্রাসাটির একজন স্বনামধন্য সুপার হযরত মাওলানা ইউছুফ সাহেব এক পর্যায়ে শিরক্ ও বিদাতের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য যে অত্র মসজিদের তৎকালীন পেশ ইমাম এবং খতিব হযরত মাও: আবেদ শাহ সাহেব কর্তৃক ধর্মের নামে বেদাতী কার্যক্রমের কারণে এলাকার মুসলমানদের মাঝে বিভেদ, ফেৎনা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিষয়ের প্রেক্ষিতে পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমগণের কাছ থেকে ফতুয়া এনে হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) সাহেব বেদাতী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অসাধারন ভূমিকা রেখে স্মরনীয় এবং বরনীয় হয়ে আছেন।

আল্লাহ ওনাকে বেহেস্তের উত্তম স্থানে অধিষ্ঠিত করুন-আমিন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে উক্ত মাদ্রাসার দ্বীনি কার্যক্রম প্রচার এবং প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে মোতাওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব নেতৃত্ব এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতারা প্রেক্ষিতে মাদ্রাসাটিকে মসজিদ সংলগ্ন সম্মুখ ভাগ থেকে আবারও উত্তর দিকে পাটওয়ারী পরিবারের সম্পত্তি দান প্রক্রিয়া মধ্য দিয়ে স্থানান্তরিত হয়। এলাকার ধর্মীয় স্বার্থ বিবেচনায় মোতাওয়াল্লী হিসেবে বিশেষ উদ্যোগ এবং দায়িত্ব গ্রহণ করে কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন। কামিল পর্যায়ে উন্নীত করার এই কার্যক্রমে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রব কাফী সাহেব, ইমাম রফিক আহমেদ সাহেব অনন্য অসাধারণ ভূমিকা রেখে স্মরণীয় এবং বরণীয় হয়ে আছেন। মাদ্রাসাটি এম.এ মতিন এমপি সাহেবের সহযোগিতায় এমপিও ভূক্তি লাভকরে।

বর্তমানে এখানে অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক ভাল এবং বড় মনের মানুষ হিসাবে তিনি সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। অধ্যক্ষ সাহেবের নেতৃত্বে সুযোগ্য শিক্ষক মন্ডলীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা প্রায় ৩ হাজার (তিন হাজার) শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। মাদ্রাসা শিক্ষার গুনগতমান ও ফলাফলে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভে সক্ষম হয়েছে। এখানে ভবিষ্যতে অন্যান্য বিভাগ ও শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

আহমাদিয়া কাওমী মাদ্রাসা : আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) কর্তৃক ভিন্ন ধারায় পবিত্র কালামে পাক তেলাওয়াত করার পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্যেগ গ্রহন করেন। তিনি ‘কারিয়ানা পদ্ধতিতে’ পবিত্র কালামে পাক শিক্ষার জন্য একজন স্বনাম ধন্য কারী সাহেবকে নিয়োগ দিয়ে কারিয়ানা পদ্ধতিতে সহিহ শুদ্ধ রূপে পবিত্র কালামে পাক তেলাওয়াতসহ দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৬৪ সালে ফোরকানীয়া মাদ্রাসার জন্য দলিল সম্পাদনের মধ্য দিয়ে কাওমী নেছাবের খারেজী মাদ্রাসা নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীতে কারী মানছুর আহমেদ সাহেবের তত্ত্বাবধানে মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়। অতঃপর হাফেজ মাওঃ রফিক আহমেদ সাহেবের পরামর্শে মোতওয়াল্লী আলমগীর কবির পাটওয়ারীর বিশেষ উদ্যোগে মনিরিয়া নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মাও লুৎফর রহমানকে নূরানী মাদ্রাসার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ইতপূর্বে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা সাঈদ আহমাদ মোজাদ্দেদী সাহেবের তত্বাবধানে মোতওয়াল্লী মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী সাহেবের উদ্যোগে হাফেজী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমাম সাহেবের পর হাফেজ আনোয়ার অত:পর মাও: লকিয়ত উল্লাহ সাহেবের মাধ্যমে হাজী মনিরুদ্দিন মনাই হাজী রহ.হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। উক্ত হাফেজী মাদ্রাসা পরিচালনায় অত্র এলাকার মনোযোগ আকর্ষণ করেন্ ।

Hajigonj Masjid

নাঙ্গল কোর্ট নিবাসী হাফেজ মাও: ইউসুফ সাহেব। তিনি সকলের শ্রদ্ধা ভক্তি অর্জন করেন। মোতাওয়াল্লী মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারীর উদ্যোগ ও নেতৃত্বে নূরানীর পাশাপাশি হাফেজী মাদ্রাসা অত:পর কাওমী নেসাবের দ্বীনি মাদ্রাসা হিসেবে জামিয়া আহমাদিয়া কাওমী মাদ্রাসা গত ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।তখনকার অবস্থার আলোকে অত্র এলাকায় কাওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ছিল, দুঃসাহসী কাজ, যা আগুনে ঘি ঢালার মত। প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে মোতওয়াল্লী আলমগীর কবির পাটওয়ারীর বলিষ্ট নেতৃত্ব এবং ইমাম রফিক আহমেদ সাহেবের সবাত্মক সহযোগিতায় চরমোনাই এর সম্মানীত পীর হযরত মাও: ফজলুল করিম সাহেবের দোয়া এবং পরামর্শে বি. এম.কলিম উল্লাহ, হাতেম প্রমুৃখ ্ ।

কর্ম-সংস্থান বিষয়ক কার্যক্রম : বিনিয়োগে উন্নয়ন। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারীগণ সাধারণত বিশ্বস্ততার সাথে পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করার জন্য উপযুক্ত স্থান, সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশের অভাব বোধ করে থাকেন। যার প্রেক্ষিতে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ অনেক সময় নির্ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন না। সে বিবেচনায় আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) ওয়াক্ত এস্টেট তার দ্বীনি কার্যক্রমের পাশাপাশি দোকান ঘর ও মার্কেট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শত শত পরিবারের কোটি কোটি টাকা নিরাপদে ‘বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে উদ্যেক্তা বানিয়েছে। ওয়াক্বিফ কর্তৃক সৃজিত এবং প্রতিষ্ঠিত এস্টেটের পরবর্তী মোতাওয়াল্লী মো.মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী (রহ.) অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অত্র এস্টেটের সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষাসহ সম্মানিত মুসল্লিগণের সেবা কার্যক্রমে তাঁর ভাইগণসহ সকলে নিবেদিত ছিলেন।

ওয়াক্বিফ এবং তার পরবর্তী মোতাওয়াল্লী সাহেবের প্রচেষ্টায় নির্মিত ভাড়া ঘরের সম্পত্তির সাথে আরও সম্পত্তি ক্রয়পূর্বক মোতাওয়াল্লী ড.আলমগীর কবির পাটওয়ারী যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে তোলেন জরাজীর্ণ দোকানঘরের পরিবর্তে বহুতলবিশিষ্ট কাওমী মাদ্রাসা মার্কেট, হাজীগঞ্জ প্লাজা মার্কেট, হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেট, রজনীগদ্ধা মার্কেট এবং নির্মাণাধীন ‘বিজনেস পাক, মকিমউদ্দিন শপিং সেন্টার’। যা কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে সক্ষম হবে – ইনশাআল্লাহ। মসজিদ-মাদ্রাসার ভাড়াটিয়াগণ এস্টেট কর্তৃক প্রদত্ত সেবা এবং দীর্ঘ কালীন কক্ষ ব্যবহারের সুবিধাসহ আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান আলহামদুলিল্লাহ। আর সে কারণে অত্র এস্টেটের দোকানঘরের চাহিদা অনেক বেশি ।

শতাব্দীকাল

এসবের কারণে কয়েক শত দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। অত্র এস্টেটের মাধ্যমে আধুনিকতার ছোয়ায় দৃশ্যমান উন্নয়নের কারনে অত্র এলাকার সম্পত্তির দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়েছে। জীবন- যাত্রার মান দিন দিন বেড়েই চলছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিনিয়োগকারীগন নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহসী হয়েছেন। অবকাঠামো উন্নয়নে ঝুকি নিচ্ছেন। এতে করে পৌর সভাসহ সকল সরকারী- বেসরকারী সংস্কার আয়ও বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। জীর্ণ হীগঞ্জ হয়ে উঠবে আধুনিক হাজীগঞ্জ। এটি আজ সমৃদ্ধ হাজীগঞ্জ। বহু লোকের জীবন মান অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

অর এস্টেটের ভাড়াটিয়াগণ ভাগ্যবান। ভাড়াটিয়গণের প্রদেয় টাকা নামাজ এবং দ্বীনি কার্যক্রমসহ মানব কল্যানসহ প্রাসঙ্গিক সেবা কার্যক্রমে ব্যয় হয়। ভাড়ার টাকা দ্বীনি কার্যক্রমে ব্যয় হওয়ার কারনে সম্মানিত ভাড়াটিয়াগণ ভাড়া পরিশোধের পাশাপাশি ‘ছাওয়াব’ লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে। অত্র এস্টেটের সম্মানিত ভাড়াটিয়াগণ ভাগ্যবান। সমাজ সেবা বিষয়ক কার্যক্রম : ক. দরিদ্র ও অসহায়দের সাধ্যমত সহযোগিতা প্রদান। খ. ধর্মীয়, জাতীয় দিবস এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান-অনুদান প্রদান। গ. হাজীগঞ্জ বাজারে কেনা-কাটার জন্য আগত জনসাধারণ, পথচারী এবং মহিলাদের জন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর সুবিধা প্রদান।

ঘ. মুসল্লিগণের ওযুর পাশাপাশি বাজারে আগত সাধারণ মানুষের জন্য আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। ঙ. বাজারে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আগুন লাগলে অগ্নি নির্বাপণের জন্য মসজিদ-মাদ্রাসার রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। চ. বিভিন্ন দোকান-পাট এবং খাবার হোটেলে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি বিনামূল্যে নেয়ার সুযোগ। ছ. কোটি কোটি টাকার মূল্যবান জায়গায় অবস্থিত দোকান ঘর ভেঙ্গে মসজিদের সামনের স্থান উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এতে সম্মানিত মুসল্লিগণ নামাজসহ প্রাসঙ্গিক এবাদতের জন্য শরীর ও মন ঠিক রেখে আল্লাহ্পাকের নিকট শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ লাভ করছেন। ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক কার্যক্রম : বন্যা, খরা কিংবা দুর্যোগকালীন সময়ে জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আর্তমানবতার সেবা প্রদান, শরণার্থীদেরকে সাহায্য প্রদান, গৃহহীনদের গৃহদান, অসহায় ও দুস্তদের সহযোগিতা প্রদান, বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারিভাবে গৃহীত ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কার্যক্রমে সাধ্যমত সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

শিরক-বিদাত মুক্ত কার্যক্রম : আল্লাহ তায়ালা শিরক-এর গুনাহ ক্ষমা করবেন না (আল-কোরআন)। সে প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, উক্ত মসজিদের পাশে শায়িত আছেন এ মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াক্বিফ, হাজী আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.)। আরও শায়িত আছেন,সুন্নাতে রাসুল (সা.) হিসেবে যিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, হাজীগঞ্জের হাজী, হযরত মনিরউদ্দিন ওরফে মনাই হাজী (রহ.)।

hajigong
তাছাড়াও যার পবিত্র নামের স্মরণে মকিমাবাদ গ্রামের নামকরণ হয়েছিল, সেই হযরত মুকিমউদ্দিন (রহ.) সহ অনেক আল্লাহর অলি-বুজুর্গ এবং আল্লাহ ভীরু নেক বান্দাগন। তাদের প্রত্যেকের নামে ভিন্ন ভিন্ন দিবসে ওরশ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা করে মসজিদ কমপ্লেক্সকে আরও জমজমাট করা যেত। কিন্তু যেহেতু আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)র মুরিদ ছিলেন, সেহেতু শিরকু-বিদ্যুত ঘটে যাওয়ার ভয়ে এ কমপ্লেক্সে তা করা হয় না-আলহামদুলিল্লাহ। তথ্য সুত্র : স্মারকগ্রন্থ ।

সম্পাদনা : আবদুল গনি
২০ আগস্ট ২০২৫
এজি