Home / চাঁদপুর / বাবুরহাটে পৈতৃক সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে নাটকীয়তা, মামলা অমান্য করে নির্মাণ কাজ
বাবুরহাটে

বাবুরহাটে পৈতৃক সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে নাটকীয়তা, মামলা অমান্য করে নির্মাণ কাজ

চাঁদপুরের বাবুরহাটে শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনার অন্তরালে অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে সম্পত্তিগত বিরোধে আদালতকে অবমাননা করে জোর পূর্বক দখলের অভিযোগ। যেখানে প্রকৃত সম্পত্তির মালিকদের জায়গা প্রভাব খাটিয়ে জোর পূর্বক তিনি নিজেই দখল করে রেখেছেন। আদালতে ভুক্তভোগীদের করা উচ্ছেদ মামলা চলমান থাকা সত্বেও নজরুল ইসলাম জোর পূর্বক সে জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে সেখানে বাঁধা দেন ভুক্তভোগী প্রকৃত মালিক পক্ষরা। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর হামলা চালান নজরুল ইসলাম। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে। আর এই প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে নজরুল শেখ ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়টিকে শিক্ষকের তকমা লাগিয়ে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে নানা নাটকীয়তা করে মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলা পরিষদের পূর্ব পাশে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে চলমান বিরোধ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মোকাম বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান উচ্ছেদ মামলা (মোকাদ্দমা নং ৬৩,২২) থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলাম সালিসি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ শুরু করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই বিষয়ে মৃত আব্দুল মতিন শেখের ছেলে মনির শেখ, বিল্লাল শেখ, লিটন শেখ, সুমন শেখসহ সঠিক কাগজ পত্রে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক পরিবারের সদস্যরা জানায় ৪৮ নং শিলন্দিয়া মৌজার ১৭২৩ খতিয়ান ভুক্ত ১৭ দাগের ৩৮ শতাংশ ভুমি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এর মালিকানা নিয়ে চাঁদপুর আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ শেখ নজরুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের জমি দখলে রেখেছে। আওয়ামীলীগের শাসনামলে তার এমন প্রভাব বিস্তারে তারা যতবারই নিজেদের সম্পত্তিতে ভোগ দখলে যেতে চেয়েছেন, ততবারই নজরুল শেখ গংরা দলবল ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের ওপর হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের বিল্লাল শেখ বলেন, আমরা বৈধ মালিক হয়েও যতবার আমাদের জমিতে প্রবেশ করতে গিয়েছি, ততবার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী ধারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, পরিবারের লোকজনকে আহত করেছে। এবারও তারা আদালতের উচ্ছেদ মামলা চলমান থাকা সত্বেও গত ৯ আগস্ট স্থাপনা নির্মান করতে ইট, বালু সিমেন্ট এনে নির্মান কাজের প্রস্তুতি নেন। আমরা বাঁধা দিতে গেলে উল্টো মারধর করে আমাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দেন এবং পত্রিকায় আমাদের নামে মিথ্যে প্রচার করেন।

মনির শেখ গংদের অভিযোগ, গত ২৫ মে চাঁদপুর মডেল থানায় উভয় পক্ষের সালিসে সিদ্ধান্ত হয়, মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জায়গা যে অবস্থায় আছে সেভাবেই থাকবে। কিন্তু ৯ আগস্ট দুপুরে নজরুল ইসলাম গং ইট, বালি, সিমেন্ট এনে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বাঁধা দিলে আমাদের মারধর করে থানায় উল্টো অভিযোগ দেন এবং বিষয়টিকে ‘শিক্ষক লাঞ্ছিত’ ইস্যু বানিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করেন।

স্থানীয়দের মতে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পত্তিগত বিরোধ, কিন্তু নজরুল ইসলাম নিজের শিক্ষক পরিচয় ব্যবহার করে সহানুভূতি আদায় এবং প্রতিপক্ষকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই আবুল কালাম গাজী বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেখানে কোন পক্ষই কোন প্রকার কাজ করতে পারবেনা। এরকম যদি কোন পক্ষ করে থাকে তাহলে সেটা আদালতে লিখিত আকারে দাখিল করতে হবে। তারপর সেটি আদালতই আইনগত সিদ্ধান্ত নিবে। উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার নিষ্পত্তির আগে কারও পক্ষেই নতুন দখল বা নির্মাণ কাজ করা যাবে না।

মনির শেখ গংয়ের দাবি তারা দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বৈধ পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেতে চান এবং ‘শিক্ষক লাঞ্ছিতের আড়ালে আসল ঘটনাকে বিকৃত করে মিথ্যা প্রচারণার নিন্দা জানান।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে শেখ নজরুল ইসলামের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পত্তির বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সেটি আদালত বুঝবে। তারপর যখন প্রশ্ন করা হয়, এটি তো আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরোধের বিষয় সেটিকে শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় টানলেন কেনো..? এমন প্রশ্ন করতেই তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন।’

নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১১ আগস্ট ২০২৫