Home / সারাদেশ / দেশে সাপের ছোবলে ২০-২২ % মানুষের মৃত্যু
snake

দেশে সাপের ছোবলে ২০-২২ % মানুষের মৃত্যু

দেশে প্রতিবছর চার লাখের বেশি মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হয়। এর মধ্যে ২৪ % বিষধর সাপের ছোবল। অর্থাৎ অন্তত সাড়ে ৯৬ হাজার মানুষ বিষধর সাপের ছোবলের শিকার হন। তাদের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যান। সে হিসাবে সাপের ছোবলে প্রতিদিন দেশে গড়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এর বাইরে কত হাজার মানুষের অঙ্গহানি বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়,সেই পরিসংখ্যান নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয় সমন্বিত চিকিৎসার অভাব ও সময়ক্ষেপণের কারণে। অথচ দ্রুত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আক্রান্তকে বাঁচানো সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে হাসপাতালে সাপের ছোবলের চিকিৎসা নিতে আসা ২৪ হাজার ৪৩২ জনের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১৮ জন। এসব আক্রান্তের প্রায় সবাই প্রথমে ওঝা বা বৈদ্যের কাছে গিয়েছেন ঝাড়ফুঁক করাতে।

অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা.সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, সবচেয়ে বেশি সাপের ছোবলের ঘটনা বরিশালে। তবে মৃত্যু বেশি পদ্মাপারের বৃহত্তর ফরিদপুর ও রাজশাহীতে। এসব এলাকায় বেশির ভাগ বিষধর সাপের ছোবলের ঘটনা ঘটে। বরিশালে বিষধর সাপ তেমন নেই।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব সাপ দিবস। দিনটি বিশেষভাবে পালনের উদ্দেশ্য হলো, সাপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক সত্য দিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা ভেঙে প্রাণীটির সঙ্গে সহাবস্থানে উৎসাহিত করা। প্রতিবছর ১৬ জুলাই এই দিবস পালিত হয়।

বছরের দু সময়ে সাপ বেশি ছোবল দেয়

দেশে প্রথম সাপের ছোবলের শিকার ব্যক্তিকে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.এম এ ফয়েজ। তিনি সমকালকে বলেন, বছরে দুটি চিত্র দেখা যায়। একটি হলো বর্ষায়। এ সময় সাপ ও মানুষের সংস্পর্শ বেড়ে যায়। জুন, জুলাই ও আগস্টেও সাপের ছোবলের ঘটনা বেশি হয়। এ ছাড়া আরেকটি চিত্র দেখা যায় সাপের প্রজননের সময় অক্টোবরে মাসে। সে সময়ও অসাবধানতায় মানুষ কাছাকাছি গেলে সাপ ভয় পেয়ে ছোবল দেয়।

অ্যান্টিভেনমে মৃত্যু কতটা কমছে

জানা গেছে,বাংলাদেশে প্রয়োগ করা পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম সব ধরনের সাপের বিষের বিপরীতে কার্যকর নয়। বিষধর গোখরা,শঙ্খিনী ও রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া প্রজাতির তিনটি সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবে দেশে এ অ্যান্টিভেনম প্রচলিত। তবে সামুদ্রিক সাপ,পিট ভাইপার ও দুর্লভ ক্রেইটসহ অন্যান্য বিষধর সাপের বিষের ক্ষেত্রে এ অ্যান্টিভেনম কার্যকর নয়।

অধ্যাপক ডা.ফয়েজ জানান,বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনমগুলো ব্যবহার করা হয়,সেগুলো দক্ষিণ ভারতের চার ধরনের সাপ থেকে বিষ নিয়ে তৈরি। এটি যে খুব ভালো মানের অ্যান্টিভেনম, তা নয়। প্রায় শত বছরের পুরোনো প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় এগুলো।

ডা.ফয়েজ আরও বলেন,অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০-২২ % রোগীর মৃত্যু হয়। এখানে সময়মতো এবং সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা হলো, আমাদের সব উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে সমন্বিত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অন্তত সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা সাপে ছোবলের রোগীর জন্য সমন্বিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।

সাপের ছোবল সংকট নেই

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ২০-৩০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়। বিষধর সাপে ছোবলের শিকারদের জন্য ১০ ভায়াল বা এক ডোজ অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন। সে হিসাবে সরকার বছরে দু-তিন হাজার সাপের ছোবলে আক্রান্তদের জন্য অ্যান্টিভেনম কিনছে।

অধ্যাপক ডা.সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন,সাপে ছোবলের শিকার সব মানুষ যদি চিকিৎসকের কাছে যায়, তাহলে বছরে অন্তত ৭০ হাজার ডোজ অ্যান্টিভেনম দরকার। কিন্তু ২৫ হাজারের বেশি কখনও ব্যবহার হয় না। কারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য আসে না। চাহিদা দিয়ে অ্যান্টিভেনম পায়নি–এমন ঘটনা নেই। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ১০ হাজার ভায়াল কিনেছে। এ ছাড়া ১০ হাজার ভায়াল দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সর্বশেষ গত দু’ মাসে আড়াই হাজার ভায়াল সরবরাহ করেছি। বর্তমানে মজুত রয়েছে ৬৫০ ভায়াল।

চিকিৎসকরা জানান,বিষধর সাপে ছোবলের স্থান দ্রুত ফুলে যায়,ক্রমাগত রক্তপাত হয়। আক্রান্তের ঘুমঘুম ভাব হয় বা চোখের ওপরের পাতা বুজে আসে। প্রস্রাব কমে যায় বা কালো রঙের প্রস্রাব হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে,বিষধর সাপ ছোবল দিয়েছে।

সাপে কাটা অঙ্গ বিশ্রামে ও অচল করে রাখতে হবে। ছোবলের শিকার ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দংশিত স্থানে কোনো রকম গিঁট দেয়া যাবে না। কাঁটা বা সুঁই ফোটানো কিংবা কোনো কিছুর প্রলেপ দেয়া যাবে না। ওঝা বা বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা কিংবা ঝাড়ফুঁক করে সময় নষ্ট করা যাবে না।

১৬ জুলাই ২০২৫
এজি