Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জের রাব্বি ওমানে রহস্যজনক মৃত্যু
ওমানে

ফরিদগঞ্জের রাব্বি ওমানে রহস্যজনক মৃত্যু

“ছেলের মামা শ্বশুর ওমানে থাকায় ভেবেছিলাম তাদের ছায়ায় থাকলে ভালো থাকবে। সংসারে সচ্ছলতা আনবে বলে একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা-ই রক্ষক হয়ে ভক্ষক হলো। জীবিত ছেলেকে লাশ বানিয়ে বাড়ি পাঠালো। পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুত্রবধূকেও কৌশলে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে তারপর আমাদের জানালো ছেলের মৃত্যুর খবর। সাত দিন পর ছেলের মরদেহ বাড়ি এলেও পুত্রবধূ কিংবা তার পরিবারের কেউ আসেনি। এতে নিশ্চিত হয়েছি, আমার ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে তারা জড়িত। আমি ছেলের হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।”

এভাবেই বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মিজানুর রহমান কালু।

ওমানে প্রবাসে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা যাওয়া যুবকের নাম মো. রাব্বি (২৭)। তিনি উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী গ্রামের বাবুর বাড়ির মিজানুর রহমান কালুর একমাত্র ছেলে।

গত ৩ মাস আগে জীবিকার তাগিদে মামা শ্বশুর জহিরের দেওয়া ভিসায় রাব্বি পাড়ি জমান ওমানে। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে । রোববার (৬ জুলাই ২০২৫) ওমানে তার মৃত্যু হয়।

শনিবার (১২ জুলাই) রাতে রাব্বির মরদেহ বাংলাদেশে ফেরে। পরদিন রোববার (১৩ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত থানাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দাফনের ব্যবস্থা নেন স্বজনেরা। তবে নিহতের পরিবার জানিয়েছে, তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।

পরিবারের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর তিন বছর আগে রাব্বি বিয়ে করেন একই গ্রামের মুদি দোকানি বাবুল মিয়ার মেয়ে নুপুর আক্তার ভাবনাকে। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে ১০ মাস বয়সী পুত্র সন্তান রয়েছে।

প্রবাসে যাওয়ার পর থেকেই পারিবারিক কলহ শুরু হয়। রাব্বির ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠে। স্বজনদের দাবি, মামা শ্বশুর জহির ও তার লোকজন একাধিকবার রাব্বিকে মারধর করেছে।

রাব্বির বাবা মিজানুর রহমান কালু জানান, গত ৩ জুলাই ওমানে কর্মরত অবস্থায় ছেলেকে মারধর করেন মামা শ্বশুর জহির। বিষয়টি স্থানীয় কফিলকে জানালে তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

এরপর ৬ জুলাই সকালে নুপুর আক্তারকে তার আরেক মামা শরীফ হোসেন কৌশলে নিয়ে যান। ওই দিন দুপুরেই ওমানে থাকা জহির হোসেন খবর দেন, রাব্বি আত্মহত্যা করেছে।

রাব্বির চাচাতো ভাই জসিমসহ আশপাশের লোকজনও দাবি করেছেন, রাব্বির ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

রাব্বির মামা শ্বশুর মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, “ওমানে রাব্বির আত্মহত্যার বিষয়টি সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। নুপুরকে মারধরের চেষ্টা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। রাব্বির মৃত্যুর পর আমাকে মারধরও করা হয়েছে।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সেলিম জিতু বলেন, “রাব্বির মৃত্যু দুঃখজনক। আমি চাই, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সঠিক তদন্ত হোক। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।”

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১৩ জুলাই ২০২৫