চাঁদপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নদী সিকস্তি এলাকায় এবার হয়েছে বিপুল পরিমাণ পাট চাষ। এরমধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরগুলোতে বর্তমানে ব্যাপক হারে চাষাবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে এবার চরে সোনালি আঁশের ফসল পাট চাষ হয়েছে। পাটের পাতা সবুজ হওয়ায় চরগুলো যেন সবুজ রঙের আল্পনায় সেজে উঠছে। এক সময় ‘পাটকে সোনালী আঁশ ’বলা হতো। কিন্তু কয়েক বছর আগে এ সোনালী আঁশ কৃষকের গলার ‘ফাঁস’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল,তখন অনেক কৃষকই পাট চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-’২৫ চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় পাট চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশি, তোষা, মেষতা ও কেনাফ জাতীয় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৩ হাজার ৬শ ২৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- ৩৭ হাজার ৩শ’ ৭০ বেল । একর প্রতি উৎপাদন ১০ দশমিক ৬০ বেল। প্রতি ৫ মণ- ১ বেল।
প্রাপ্ত তথ্য মতে-চাঁদপুর সদরে চলতি মৌসুমে দেশি,তোষা,মেষতা ও কেনাফ জাতীয় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা হলো- ৭শ ৮৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- ১৬ হাজার ৪শ’ ৩৫ বেল । মতলব উত্তরে ১শ ৯৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-১ হাজার ৪শ’ ১২৫ বেল ।
মতলব দক্ষিণে ৫শ ৩৭ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-৫ হাজার ৬শ’৩৩ বেল। হাজীগঞ্জে ৪শ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-৪ হাজার ২শ’৪০ বেল। শাহরাস্তিতে ৭৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- ১শ’ ৪৮ বেল। কচুয়ায় ২শ ৮৪ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-৩ হাজার ২শ’২৩ বেল। ফরিদগঞ্জে ২শ ৫৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-১ হাজার ৪শ’ ৪৫ বেল। হাইমচরে ৪শ ৫৯ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- ৪ হাজার ১শ’ ৩১ বেল।
সরকার এ বছর সকল পণ্যে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় দেশের সব জুট মিলে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাঁচা পাট ও পাটের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। কৃষকগণও পাট চাষে আগ্রহী হয়েছে। উৎপন্ন পাটের দামও এবার ভালো পেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের এক কৃষিবিদ জানান,‘ চাষীগণ এখনও পাট সম্পূর্ণ ঘরে তোলে নি। তাই বর্তমান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা জানা যায় নি। তবে এবার পাট উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেথে পারে।’
আবারও পাটের সুদিন ফিরে আসছে। পাট চাষে আগ্রহী করতে চাষিদেরকে সরকার থেকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। গত বছর থেকে আবারও পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন চাষিরা। মাঝখানে পাটের আবাদ কমলেও আবারও পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে, পাশাপাশি পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপতানি হতো। বাংলাদেশের প্রধান রপতানিযোগ্য পণ্যের নাম ছিল সোনালি আঁশ।
কালের আবর্তে এবং প্লাস্টিক বিপ্লবের কারণে পাটের দাপট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চরে পাট চাষ করে এখন ভালো ফলন পাওয়ার স্বপ্ন বুনছে অল্প জমির পাট চাষিরা। জেলার অধিকাংশ চরের জমিতে গম, মরিচ, কাউন, পিঁয়াজ,ভুট্টা আবাদ ভালো হয়ে থাকে। বাজারে পাটের ভাল দাম থাকায় এসব ফসলগুলো ঘরে তোলার পর চাষীরা পাট চাষে ঝুঁকে পড়েন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,গত বছর পাট চাষ হয়েছিলো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমি।
আবদুল গনি
১৩ মে ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur