প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। শনিবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে বনানীর ইয়র্ক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বড় মেয়ে সংগীত শিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন ফেইসবুকে। আবেগমাখা ভাষায় লিখেছেন, “আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না ?” ইয়র্ক হাসপাতালের কর্মকর্তা বলেছেন,‘ শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী । ‘
শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হবে বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের তৃতীয় পুত্র। তার চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানের শিল্পী।
তার বোন ফেরদৌসী রহমানও একজন সংগীতজ্ঞ। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামাল একজন নজরুল সংগীত শিল্পী। ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে নিয়েছেন সংগীতের তালিম।
জীবনভর গানের সঙ্গে কাটানো মুস্তাফা জামান আব্বাসী ছিলেন একজন গবেষকও। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্রের’ গবেষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজের জন্য ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে ‘আমার ঠিকান’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ শিরোনামে দুটি সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। একসময় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখতেন।
কবি,লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০। ভাওয়াইয়া গানের ওপর তার দুটি বই ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ এবং ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি-২’ এ ১২০০ গানের কথা বলা আছে।
‘আব্বাসউদ্দিন: মানুষ ও শিল্পী’’, ‘জীবন নদীর উজানে’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘বাকি জীবনের কথা’, ‘অব মিউজিক্যালস অ্যান্ড মুন্ড্যান্স’,‘জলসা থেকে জলসায়’,‘লালন যাত্রীর পশরা’, ‘মুহাম্মদের নাম’, ‘সুফি কবিতা’, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রেমের গান’, ‘গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে’,‘লঘু সংগীতের গোড়ার কথা’, ‘পুড়িব একাকী’ রয়েছে তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে।
একুশে পদক, নজরুল একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও বহু পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সেগুলোর মধ্যে আছে, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, লালন পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার,মানিক মিয়া পুরস্কার,নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন একজন শিক্ষক এবং লেখিক। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই তার মৃত্য হয়। সামিরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসী তাদের দু’ মেয়ে।
১০ মে ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur