ঈদ মানেই নতুন কাপড় পরার আনন্দ। আর কেনাকাটার ধুম। ঈদুল ফিতরের এখনও বাকি ২০ দিন। মঙ্গলবার গেছে ১১তম রোজা। তবে এবার রোজার শুরু থেকেই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদের কেনাকাটা।
এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। মূলত ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই অনেকে ঈদের কেনাকাটা করে ফেলছেন। তাই রমজানের শুরুতেই ঈদের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহি ছেংগারচর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ কেন্দ্র করে এসব এলাকার ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে বাহারি সব পোশাকে। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও ছোটদের পোশাক- সব কিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শতভাগ নতুনত্ব। অন্যদিকে শহরে জুতার দোকানগুলোয় বেচাকেনা বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ এসেছেন ঘুরে দেখতে। কেউ বুঝতে এসেছেন দাম-দর করতে। কেউ আবার বাজেটের মধ্য পছন্দের ঈদ পোশাক কিনতে পেরে খুশি। তরুণ-তরুণীদের নজর এবার বেশ জমকালো ও আরামদায়ক পোশাকের দিকে।
যারা ঈদে পরিবারের সদস্যদের কেনা কাটার ঝামেলা এড়িয়ে স্বস্তিতে থাকতে চান তারা রমজানের শুরুতেই সেই কাজটি সারতে উপজেলার বিপনী বিতানগুলোতে ভিড় করছেন। বিভিন্ন বিপনী বিতানগুলোতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন নিম্নবিত্ত মানুষের সরব উপস্থিতি। অনেকেই এসেছেন নিজের এবং পরিবারের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে এসব মার্কেটে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। ক্রেতাদের উপস্থিতি আর বিক্রেতাদের হাঁক ডাকে এসব এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। কেনাকাটা পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নেই পিছিয়ে। তাছাড়া নিত্যনতুন ডিজাইনের মালামাল চলে আসায় তাতে কাস্টমারদের চাহিদা বাড়ছে।
উজেলার ছেংগারচর বাজার ফিক্সড প্রাইজের এমএস ফ্যাশন ফ্যাশন হাউজ, এশিয়ান কালেকশন এন্ড টেইলার্স, মদিনা মাকের্ট, ফাহিমা ফ্যাশন, দর্জি মার্কেট, ভুইয়া মার্কেট, হাজি মার্কেট, ছেংগারচর কলেজ মার্কেট, সোদিয়া প্লাজা, নাহার প্লাজা ও উপজেলার নতুন বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সাধারণও পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্যকে নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরছেন পছন্দের পোশাকটি ক্রয় করতে। লক্ষ্য করা গেছে, দিনের বেলা সকাল থেকে ইফতারির আগ পর্যন্ত ও সন্ধ্যার পর রাত পর্যন্ত দোকান ও শো-রুমগুলোতে নারী-পুরুষরা কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছোট-বড় সব ব্র্যান্ডই ছোটদের জন্য জমকালো নকশা আর বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে। হাজারো ডিজাইন ও কালারের মাঝে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বেছে নিচ্ছে শিশুরা। চাহিদার সঙ্গে পছন্দমতো বাচ্চাদের জন্য পাঞ্জাবি ও শার্ট কিনছেন অভিভাবকরা।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত দুই ঈদ বাজারের তুলনায় এবারে হয়তো ভালো ব্যবসা হবে। তারা যে পণ্যগুলো নিয়ে হাজির হয়েছেন তা ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে।
ছেংগারচর বাজারের ফিক্সড প্রাইজ এমএস ফ্যাশন এর পরিচালক আব্দুল মোতালেব সরকার ও এশিয়ান কালেকশন এন্ড টেইলার্স ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন মঞ্জুর বলেন, এবছর রোজার শুরুতেই ব্যবসা জমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন প্রকরের ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে রমজানের শুরুতেই হরেক রকম ডিজাইনের শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য নানা পোশাক কালেকশন করেছেন। করেছেন বিভিন্ন প্রকারের পাঞ্জাবি ও কসমেটিকস।
বিভিন্ন মার্কেটের দোকানিরা জানান, বেচাকেনার শীর্ষে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শার্ট-প্যান্ট; মেয়েদের শাড়ি, চুড়ি থ্র্রি-পিস; বাচ্চাদের পোশাক ইত্যাদি। তবে এবার রমজানে শুরুর দিক থেকেই প্রায় সব দোকানে বেচাকেনা ভালো।
বিক্রেতারা আরও জানান, ঈদের আরও ২০ দিন বাকি থাকলেও বেচাকেনা পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেছে। এবার রোজা শুরু থেকেই টুকটাক ক্রেতাদের দেখা পেয়েছেন তারা। ঈদের কাছাকাছি সময়ে বিক্রি আরও বেশি হবে বলে আশাবাদী তারা। এদিকে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে বিভিন্ন ভাসমান দোকান এবং অস্থায়ী কিছু দোকান ও আশপাশের দোকানগুলোয় ভালো বেচাকেনা হতে দেখা যায়।
ছেংগারচর পৌরসভার ঠাকুরচর এলাকা থেকে আসা এক প্রাইমারি স্কুল টিচার জেসমিন আক্তার জানান, বাজারের পণ্যের সময় বেশ, কিন্তু তুলনামূলক দাম বেড়েছে। রমজানের শুরুতেই কেনাকাটা করতে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দিন যত যাবে মার্কেটে ভিড় তত বাড়বে, আর এ কারণেই কেনাকাটা আগেভাগে শেষ করতে চাইছি।’
এছাড়া কথা হলে, আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, আর কয়েকদিনের মধ্যে কেনাকাটায় মানুষজনের ভিড় বেড়ে যাবে। তাই, একটু আগেভাগে কেনাকাটা করে নিচ্ছেন। দাম নিয়ে কেউ বেশি বা আগের মতো বলে জানান। শো-রুম ও দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানান, কেনাকাটা ভালোই হচ্ছে। দামো সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। আর প্রতিটি শো-রুম ও দোকানে আধুনিক রুচি-সম্মত কাপড়-চোপড়ের কালেকশনও মজুদ করা হয়েছে। স্যান্ডেল-জুতার দোকানগুলোতেও নতুন-নতুন বাহারি কালেকশনের সমাহার রয়েছে বলে স্যান্ডেল-জুতার দোকানের মালিকরা জানান।
এবারের ঈদের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কেনাকাটার নিরাপত্তার নিশ্চিত করার প্রসঙ্গে মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হক বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলার যতগুলো বিপনী বিতান রয়েছে সব জায়গাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সাদা পোশাকে আমাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা সকল বাজারগুলোতেই জোরদার করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১১ মার্চ ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur