Home / চাঁদপুর / ছাত্রসেনার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চাঁদপুরে ছাত্রসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি
ছাত্রসেনার

ছাত্রসেনার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চাঁদপুরে ছাত্রসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব ও সংগ্রামের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ২৫ জানুয়ারি সকালে সংগঠনের চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মাঠে ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলার সভাপতি কামরুল হাসান বাবুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব জননেতা অধ্যক্ষ আল্লামা স.উ.ম আবদুস সামাদ। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাত্রনেতা মুহাম্মদ আজাদ হুসাইন । বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা শায়খ আবু সুফিয়ান খান আবেদী আল-কাদেরী (মাঃজিঃআঃ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মাহমুদ ভূইয়া মানিক, গাউছিয়া কমিটি চাঁদপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহজামাল তালুকদার, জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত চাঁদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফজলুল কাদের বাগদাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ আব্দুর রাহীম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নোমান, সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম বাদদাদী, যুবসেনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রশিদ সোহেল, সাধারণ সম্পাদক যুবনেতা নবাব খান, যুবনেতা ফরুদ্দিন আহমাদ, যুবনেতা জহিরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা লায়ন সাকিউল কাউসার, ছাত্রসেনার সাবেক জেলা সভাপতি সভাপতি নূরে আলম মামুন।

প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন স্বাধীন সার্বভৌম সর্বজনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ২০২৪ সালেও একই উদ্দেশ্য নিয়েই ছাত্রজনতাকে লড়াই করতে হয়েছে। কারণ, বৈষম্যহীন, সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার আলোকে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের প্রত্যাশার বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমলাতন্ত্রের সমন্বয়ে লুটেরা, ধনিক ও বণিক শ্রেণির স্বার্থকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। তাই এ আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদি রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে এখন আমরা আদর্শ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে রাজনীতির নামে হানাহানি, দলাদলি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থাকবে না। এ রকম বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ছাত্রজনতার আন্দোলনে ১৫ বছরের একদলীয় সরকারের পতনের পর বর্তমানে নতুন আরেক চক্র তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২৪’র অর্জন কোনো নির্দিষ্ট দলের অর্জন নয়, ইহা সর্বস্তরের ছাত্রজনতার অর্জন। তা কুক্ষিগত করে নিপীড়ন করা জনগণ মেনে নেবে না। এ দেশে ইসলাম এসেছে আউলিয়া কেরামের মাধ্যমে, অথচ মহান আল্লাহর অলিদের মাজারে একদল উগ্রবাদি জঙ্গি হামলা করছে, সূফিবাদি শিক্ষকদের হেনস্তা করছে, ব্যাংক দখল করতেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছেড়ে দেবো না। আমরা দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে অন্তবর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এজন্য সকল অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জাহিদ ও সদস্য সচিব খাজা নুরুল আমিনের যৌথ সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাশিমপুর দরবার শরীফের পীরে তরীকত শায়খ আশফাক আহমাদ, পীরজাদা মাহফুজ উল্লাহ ইউসুফি, মাওলানা আব্দুর রহিম, কারী বিলাল হোসাইন পাটোয়ারী, মাওলানা হাসানুজ্জামান, যুবনেতা আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা সপ্ত মূলনীতি ও পঞ্চ কর্মসূচির আলোকে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান ৪৫ বছরের ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত অহিংস ইতিহাস। এ দীর্ঘ পথচলায় ছাত্রসেনা কর্মী হালিম, লিয়াকত, সাইফুল, নঈম, জিঁতু, সাদেকসহ অনেকে প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু কারো উপর আক্রমণ করে নি। ছাত্রসেনা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলো সরব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন, শিক্ষাসামগ্রীর দাম কমানো, শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দসহ ছাত্রদের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রভৃতি আন্দোলন এবং দেশ-জাতি, মাযহাব-মিল্লাতের স্বার্থে ছাত্রসেনা রাজপথে ভূমিকা রেখেছে। স্বতন্ত্র ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাত্রসেনার আন্দোলনের ফসল। ২৪’র আন্দোলনে ছাত্রসেনা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে অংশ নিয়ে সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী মামলা-হামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে। অথচ কয়েকটি দল ছাত্রজনতার এ অর্জনকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। বক্তারা আরো বলেন, চাঁদপুর জেলার প্রতি প্রত্যেক ক্ষমতাসীন দল বিমাতাসুলভ আচরণ করেছিল। এবার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও ২৪’র বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রভৃতি আন্দোলনে বিজয় এসেছে ছাত্রদের মাধ্যমে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণেও ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাবেশ শেষে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি প্রেসক্লাস থেকে শুরু হয়ে কালী বাড়ি, ছায়াবাণী মোড় হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫