চাঁদপুর শহরের মহিলা কলেজ রোডের গোল্ডেন টাওয়ারে স্বর্ণ মহরা নামে জুয়েলারি দোকানে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পরিচয়ে ৪টি স্বর্ণের চেইন প্রতারণা করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মামলার সূত্র ধরে আসামী আরাফাত রহমান সাহেদ (৫৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া।
গ্রেপ্তার আসামী সাহেদ নোয়খালী জেলার সোনাইমুড়ী থানার ৭ নম্বর ইউনিয়নের বজরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ১২ নম্বর সেক্টরের ৩নম্বর রোডের প্রিয়াংকা হাউজিং সোসাইটির ৯নম্বর বাসা।
চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ও এই ঘটনায় ৩ জানুয়ারি দায়ের করা মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, ন্যাশনাল ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮) গত ২ জানুয়ারি ব্যাংকের পরিচালকের ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কুমিল্লা জেলার বড়ুয়া থানার সোনাইমুড়ি গ্রামে যান। যে কারণে তিনি ব্যাংকের কাজে ব্যবহৃত মোবাইলটি ব্যাংকের অফিসার শামছুল ইসলামের নিকট রেখে যান। ওই মোবাইলে প্রতারক সাহেদ সন্ধ্যা ৭টার দিকে একাধিকবার ফোন দেয়। তিনি ওই কল রিসিভ করতে পারেননি। পরে প্রতারক সাহেদ পুনরায় প্রায় রাত ৮টার দিকে দ্বিতীয়বার হোয়াটসঅ্যাপে কল দেন। প্রতারক সাহেদ তখন তার নাম মো. জুলকার নয়ন এবং ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দেন। একই সাথে ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। প্রতারকের মোবাইল নম্বর ও ছবির সাথে ব্যাংকের পরিচালকের মিল পেয়ে তিনি তথ্য প্রদান করেন।
পরবর্তীতে মামলার বাদী ব্যাংকের ম্যানেজার সাইফুল ইসলামকে প্রতারক সাহেদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। সে আলোকে তিনি তার দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দেন। ওই সময় প্রতারকের সাহেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন স্ব পরিবারে তিনি চাঁদপুরে এক বিয়েতে অংশগ্রহণ করবেন এবং তিনি মৎস্য গবষেণা ইনস্টিটিউটের রেষ্ট হাউজে রয়েছেন। ম্যানেজারকে বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেন এবং বলেন অনুষ্ঠানে আসলে তাকে ডিসি এবং এসপির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন।
কিছুক্ষণ পরে প্রতারক সাহেদ আবার ম্যানেজার সাইফুলকে ফোন দিয়ে বলেন-আমার স্ত্রী কিছু স্বর্ণের গহনা কিনবে তার পরিচিত কোন জুয়ালারি দোকান আছে কিনা। তিনি সরল মনে ব্যাংকের গ্রাহক মোজাম্মেল হক ও স্বর্ণ মহরার স্বত্তাধিকারী মো. নাজির আহম্মেদ এর কাছ থেকে স্বর্ণ কেনার পরমার্শ দেন।
এরপরই প্রতারক সাহেদ ওই দোকানে গিয়ে ৩ভরি ৯.৫ আনা ওজনের ৫টি স্বর্ণের চেইন ক্রয় করেন এবং টাকা পরিশোধ করার জন্য তার ক্রেটিড কার্ড প্রদান করেন। ওই দোকানে ক্রেটিড কার্ড থেকে টাকা নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় দোকানের কর্মচারীকে তার গাড়ীতে করে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিয়ে যা। ওই কর্মচারীকে সেখানে বসিয়ে রেখে কৌশলে গাড়ী নিয়ে পালিয়ে যান প্রতারক সাহেদ।
এই ঘটনায় ন্যাশনাল ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ম্যানেজার মামলা করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন নন্দী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে প্রতারক সাহেদকে রাজধানীর উত্তরা থেকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। রাতে তাকে চাঁদপুর সদর মডেল নিয়ে আসা হয়।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, ওই প্রতারক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর তার দেয়া তথ্যে মামলার আলামত হিসেবে ৬টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, নগদ ৯লাখ ৮১ হাজার টাকা, বিজিটিং কার্ড, ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্ট ও স্বর্ণের খালি বক্স জব্দ করা হয়। প্রতারণা করে নেয়া স্বর্ণের চেইনগুলো সে বিক্রি করে দেয়। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এবং আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৯ জানুয়ারি ২০২৪