২০২৫ সালের হজ নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। আর হাতে সময় আছে মাত্র তিন দিন। এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজের নিবন্ধন করেছে মাত্র ২৩ হাজার ৭ শ ৯ জন।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১ শ ৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে এখনো কোটা খালি রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৪ শ ৮৯ জনের। যা শতকরা হিসাবে ৮১ শতাংশের বেশি। চলতি বছর ১ অক্টোবর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
এতে তিন মাসের মতো নিবন্ধনের সময় চললেও হজযাত্রীদের প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। এবার হজ প্যাকেজের টাকা কমানো হলেও নিবন্ধনের অর্থ বেশি চাওয়া হয়। প্রতি হজযাত্রীকে প্রাথমিক নিবন্ধনে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। মানুষ নানামুখী অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। এবারও হজ প্যাকেজে অযৌক্তিক বিমান ভাড়া নির্ধারণ করায় এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে হজযাত্রীদের মাঝে। এসব কারণে এবার হজযাত্রীর সাড়া কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ৬ মাস আগে এত টাকার প্রস্তুতি সবার থাকে না।সামনে রমজান এ সময় মানুষের টাকার খুব দরকার হয়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যাংকের জমা টাকাও তো অনেকে তুলতে পারছেন না। তা ছাড়া প্যাকেজ মূল্য খুব বেশি কমেনি। স্বাভাবিক বিমান ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি খরচ ধরা হয়েছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নয়। সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। গতবার এ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ন্যূনতম খরচের টাকা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে।
নিবন্ধনের সময় বাড়ানো নিয়ে তিনি বলেন, শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতির আলোকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে। এছাড়া বিমান ভাড়া আরও কমানো যায় কিনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাহের নামে এক হজ এজেন্সির মালিক বলেন, আমরা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে দু লাখ টাকা নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে হজযাত্রীদের তিন লাখ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করার মতো সক্ষমতা সবার নেই। তাই হজযাত্রীর সাড়া কম। এছাড়া এ নিবন্ধনের সময় আরও এক মাস বৃদ্ধি করা উচিত।
গত ৩০ অক্টোবর সরকারিভাবে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত সাশ্রয়ী সাধারণ প্যাকেজ-১ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২ শ ৪২ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর চলতি বছরের প্যাকেজ-১ এর চেয়ে এক লাখ ৯ হাজার ১ শ ৪৫ টাকা কম খরচ হবে। অন্য প্যাকেজে (প্যাকেজ-২) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬ শ ৮০ টাকা।
এ হিসাব খাবার খরচ ছাড়া। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শ ৮৭ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এবার বিশেষ প্যাকেজ করা হয়নি। সরকার বেসরকারি মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১ শ ৫৬ টাকা (খাবার খরচ ছাড়া) নির্ধারণ করে দিয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সি একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
পরে ৬ নভেম্বর হাবের বাতিল হওয়া কমিটি বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা’ ব্যানারে তারা এ প্যাকেজ ঘোষণা করে। খাবার খরচ যুক্ত করে সাধারণ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
পরদিন ৭ নভেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকরা’ তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে। তাদের ঘোষণা করা প্রথম প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা,দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৮৫ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। এতে এজেন্সি মালিকরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। পরে তারাও আলাদা করে প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৫ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১ শ ৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১ শ ৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি এক লাখ ১৭ হাজার হজযাত্রী যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭০৯ জনের মতো হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছে ৩ হাজার ৮শ ৫৯ জন। আর বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছে ১৯ হাজার ৮ শ ৫০ জন। যা কোটার প্রায় ১৯ শতাংশ।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান,প্রাথমিক নিবন্ধনের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। তবে শেষ সময়ে নিবন্ধনের হার বেড়ে যায়। তাই পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২৭ নভেম্বর ২০২৪
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur