জানুয়ারির শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন বই দেওয়ার বিষয়টি সরকারের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শিক্ষা কারিকুলামে বড় পরিবর্তন এনেছে বর্তমান সরকার।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা সমালোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার চালু করেছিল নতুন কারিকুলাম।
এ কারিকুলাম বাতিল করে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষায় ২০১২ সালের কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে আওয়ামী আমলের কারিকুলাম বহাল থাকলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে কনটেন্টের। তবে নতুন বেশ কিছু কনটেন্ট যোগ করা হয়েছে সেখানে। বাতিল করা হয়েছে আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই ছাপানোর টেন্ডারও। তাই সব প্রক্রিয়াই নতুন করে সম্পন্ন করতে হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে। এতে চলে গেছে বড় একটি সময়।
তথ্যমতে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বছরের শেষ দিকে এসে নানা পরিবর্তনের ফলে নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের সব বই পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এনসিটিবির তথ্যমতে, আগের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ায় বেশি বই ছাপতে হবে। গত কয়েক বছর ৩২ থেকে ৩৪ কোটি বই ছাপা হলেও আগামী বছরের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপতে হবে। এতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে। সূত্র জানান, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বইগুলোয় শেখ মুজিবুর রহমানের অতিরিক্ত বন্দনা করা হয়েছিল। এবারের নতুন বইয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক অতিকথন ও অতিবন্দনা। বাদ দেয়া হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালসহ বিতর্কিত বিভিন্ন লেখকের লেখাও।
বই সম্পাদনা না করেও অতীতে অধ্যাপক জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ছিল এনসিটিবির বইয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতানোর অভিযোগ। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপা হবে ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী। বইয়ে স্থান পাবে জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস। তবে সময়সাপেক্ষ হওয়ায় শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়ন নিয়ে এবারের বইয়ে কিছু থাকবে না। বইয়ের ব্যাক কভারে এর আগে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বিভিন্ন উক্তি থাকলেও এবার সেগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাক কভারে স্থান দেওয়া হবে জুলাই আন্দোলনের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিগুলো। জানা গেছে,টেন্ডার কার্যক্রম শেষ করে ইতোমধ্যে ছাপাকাজ শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির বই ছাপার জন্য টেন্ডারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সর্বনিম্ন দরদাতার মধ্যে যারা কাজ পেয়েছেন তাদের বাজেট চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ বরাদ্দ পাওয়ার পর বই ছাপাতে চুক্তিবদ্ধ হবে ছাপাখানাগুলো। চুক্তির পর বিভিন্ন শর্ত মেনে তারা বই ছাপার কাজ শুরু করবে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর বই ছাপানোর কাজ শেষ করে ডেলিভারি পয়েন্টে পাঠাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪৫ দিন দেওয়া হবে। সে হিসেবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ করতে না পারলে মাধ্যমিকের বই সরবরাহের জন্য জানুয়ারিতেও সময় দিতে হবে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে। আর নানা প্রক্রিয়া শেষ করে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ছাপাখানাগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাবছরের জন্য সব বই ছাপা শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে। কাজ পাওয়া ছাপাখানাগুলো অজুহাত না দেখালে ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই পাঠানো সম্ভব হবে। আর যারা চুক্তিবদ্ধ হবেন তারা ডিসেম্বরের মধ্যে বই দিতেই চুক্তিবদ্ধ হবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ বই সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে অন্যদের কাজ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, অতীতে কোনো বছরে দশম শ্রেণিতে বই দেওয়া না হলেও এবার দশম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হবে নতুন বই। আগামী শিক্ষাবছরে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের উজ্জ্বলতা হবে ৮৫ জিএসএম ও ৮০ গ্রাম। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের সাদাকালো বইগুলোর উজ্জ্বলতা হবে ৮২ জিএসএম ও ৭০ গ্রাম।
আকতারুজ্জামান ,
সিনিয়র সাংবাদিক
১২ নভেম্বর ২০২৪