চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনের বদলী বা অপসারণের দাবিতে এবার জেলা প্রশাসক বরাবর স্বরপলিপি প্রদান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ৭ অক্টোবর সোমবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করে এই স্বরপলিপি লিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন, অম্লান সাহা, মুসফি করিম, মোসাদ্দেক হোসেন, ওয়াইছ, মুজাহিদ শিহাব।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, মোঃ দেলোয়ার হোসেন গত ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।যোগদান করেই তিনি নিজেকে শেখ রাসেলের বন্ধু পরিচয়ে বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করেন। বিদ্যালয়ের প্রতিটি মিটিং, অভিভাবক সমাবেশে দলীয় শ্লোগান দেন। ডা.দীপু মনির দলীয় এজেন্ট এবং পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের সরাসরি পৃষ্টপোষকতায় স্কুল পরিচালনা শুরু করেন। একক সিদ্ধান্তে মাষ্টার রোলের কর্মচারীদের বাদ দেওয়া ও সরকারি শিক্ষকদের বদলির ভয় দেখিয়ে স্কুল চালান। দলীয় আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য ডা.দীপু মনির নির্বাচনে প্রচার, উঠান বৈঠক স্কুলের অভ্যন্তরে করার সুযোগ দেন। জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন সকল শিক্ষক নির্বাচনে কাজে চলে গেলে তিনি বিদ্যালয়ের ৩ ট্রাক লৌহ জাতীয় মালামাল অপসারণ করেন।
আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর তিনি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে এবং কার্যক্রম বাদ দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তার বিরূপ আচরণে স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদিকে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের বাধা প্রদান করেন। আন্দোলনে অংশ নিলে টিসি দেয়া ও আইনানুগ পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার জন্য দুজন শিক্ষককে অংশ নিতে বাধ্য করেন।
স্মারকলিপিতে আর উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ৮ আগষ্ট সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে পূবের কার্যকলাপের জন্য তার বদলি/অপসারণ দাবি করলে তিনি অস্বীকার করেন। চলমান আন্দোলন থামানোর জন্য গত ১৫ আগষ্ট তিনি স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে চলে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে ১ মাস সময় চান। এই সুযোগে তিনি বিএনপি নেতাদের সাথে গোপনে আঁতাত করে বিদ্যালয়ে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যান। তার নির্দেশিত একটি নিম্নমানের হোটেল থেকে টিফিন না আনায় বিএনপি নেতাদের দিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষককে হুমকি দেন। নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখতে তিনি একজন বিএনপি ছেলেকে অবৈধভাবে ভর্তি করান। সব শেষ ২৭ আগষ্ট থেকে মোবাইল বন্ধ রেখে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ অবস্থায় আমাদের বিদ্যালয়ের শতবর্ষের ঐতিহ্য রক্ষায় প্রধান শিক্ষকের বদলি/অপসারণ দাবি করছি।
এ সময় জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের বলেন, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিষয়গুলো আমি অবগত। তিনি নিজেও চাচ্ছেন এই বিদ্যালয় থেকে বদলি হয়ে যেতে। তবে এখনো পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যেহেতু তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, সেহেতু তার বদল বা অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু সময়ের প্রয়োজন আছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি আশা করছি তোমরা সেই সময়টুকু আমাদের দিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তার বদলি হচ্ছেন না, আমি চাই তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে তার অসম্মান হয়, তোমারা এমন কোন কাজ করবে না। কারণ তিনি তোমাদের একদিন পড়িয়েছেন। তাই তোমরা একজন শিক্ষককে অপমান করবে না। তোমরা আগের মতো লেখাপড়া মনোযোগী হও। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ৭ অক্টোবর ২০২৪