শিক্ষকতা হচ্ছে মহান ও একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এখনো সব পেশার মানুষ শিক্ষকদেরকেই বেশি ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা রয়েছে- তার মধ্যে শিক্ষকতাকে মর্যাদার চোখে দেখা হয়। পৃথিবীতে মা বাবার পরের স্থান হচ্ছে শিক্ষকের। সমাজ ও দক্ষ মানবসম্পদ বির্নিমাণে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার কারিগর।
শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের মাঝে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হয়- শ্রদ্ধাশীল হয়। শিক্ষকের এসব কৃতিত্বের স্বীকারোক্তির জন্য তাদের স্মরণ করতে ও কল্যাণ কামনার জন্য শিক্ষকের যে গুরুত্ব সেটা স্বীকার করার জন্য প্রতিবছর তাদের সম্মানার্থে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়।
প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালন করা হলেও ভারত বর্ষে পালন করা হয় ৫ সেপ্টেম্বর । ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো: “ শিক্ষকের কন্ঠস্বর : শিক্ষায় একটি নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’ ( Valuing teacher voices: towards a new social contract for education” )। সারা বিশ্বব্যাপি শিক্ষক দিবস পালন করার একমাস আগে শিক্ষক দিবস পালন করার একটি অন্যতম কারণ হলো-৫ সেপ্টেম্বর ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জন্মদিন।
শিক্ষক দিবসের ইতিহাস
১৯৬২ সালে ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জানা যায়,প্রাক্তন এ রাষ্ট্রপতি জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন তাঁর বন্ধু-বান্ধব এবং কয়েকজন ছাত্র। জন্মদিনের কথা শুনে তিনি বলেন,আলাদা ভাবে তাঁর জন্মদিন পালন না করে দেশের সমস্ত শিক্ষকদের জন্য যদি পালন করা হয়- তাহলে তিনি গর্ববোধ করবেন। রাধাকৃষ্ণণ-এর এ কথাকে সম্মান দেয়ার জন্যই তাই ১৯৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বছর পালন করা হয় শিক্ষক দিবস।
ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জীবনী
১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করেছিলেন তিনি। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়,দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এক কথায়-ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসে এ নামটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম।
শিক্ষক দিবসের অজানা তথ্য
ভারতবর্ষে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হলেও জার্মানি, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় ৫ অক্টোবর। ২৮ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া,মরক্কো আলজেরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমির শাহীর মতো দেশগুলিতে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। এছাড়া বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় আলাদা আলাদা দিনে।
১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ারেটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে কথা বলেছিলেন। ১৯৫৩ সালে এই প্রসঙ্গে কথা বলেন মার্কিং কংগ্রেস। ১৯৮০ সাল থেকে ৭ মার্চ সারা বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু হয়। সিঙ্গাপুরে সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার পালন হয় শিক্ষক দিবস। পরবর্তীকাল ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু করে ইউনেস্কো।
১৯৪৬ সালে ইউনেস্কো শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা,অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব শিক্ষক সনদ নামক একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। বিশ^ শিক্ষক দিবস পালনের যৌতিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্ত : সরকার সম্মেলনে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিশেষ সুপারিশ মালা গ্রহণ করা হয়।
১৯৯৩ সালে বিশ্বের ১৬৭ টি দেশের ২১০ টি জাতীয় সংগঠনের ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন“ এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল” গঠিত হয় এ আন্তর্জাতিক সংগঠন । জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো কর্তৃক প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ক্রমাগত অনুরোধ ও আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কোর মহা-পরিচালক ড.ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর “ বিশ্ব শিক্ষক দিবস” পালনের শুভ সূচনা করা হয়।
তথ্য সূত্র : ওয়েবসাইড থেকে সংগৃহীত
সম্পাদনা : আবদুল গনি
অক্টোবর ২,২০২৪