চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজশ্বর ইউনিয়নে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না পেরে একাধিক নিরীহ পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারামারি এবং আহতদের মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে চাঁদপুর এবং শরীয়তপুর আদালতে দুটি পৃথক মামলা করা হয়। দুটি মামলাতে দুই রকম তথ্য দেওয়া এবং ২ জন প্রবাসীকেও আসামি করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪ নং রাজরাজশ্বর ইউনিয়নের বন্দুকশী বাজার এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য মরহুম ইব্রাহিম বন্দুকশীয় সাড়ে ১২ একর সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তিনি মৃত্যুর পর তার ৫ ছেলে এবং ছয় ৬ মেয়ে উক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশসূত্রে মালিক হন। এর মধ্যে প্রত্যেক ছেলে ১একর ৫৪ শতক এবং প্রত্যেক মেয়ে ৭৭ শতক সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে পায়। তারা হলেন, মরহুম সামসুল আলম, মরহুম সেরাজল বন্দুকশী, মরহুম জাফর বন্দুকশী, মরহুম ইলিয়াছ বন্দুকশী, শাহজাহান বন্দুকশী, মরহুমা তফুরা খাতুন, মরহুমা ছামছুন্নাহার, মরহুমা শরীয়তনেছা, মরহুমা আয়েশা খাতুন, মরহুমা আশফুন্নেছা ও মরহুমা ফিরোজা খাতুন।
ভুক্তভোগী পরিবারেরা জানায়, মরহুম ইব্রাহিম বন্দুকশী মৃত্যুর পর তার সকল ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি বড় ছেলে মরহুম শামসুল ইসলাম বন্দুকশী জোরপূর্বক নিজের আয়ত্তে নিয়ে যায়। এরপর বহু বছর চেষ্টা করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পায়। মূলত এই সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না পেরে মরহুম শামসুল ইসলাম বন্দুকশীর ছেলেরা আপন চাচাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। যার মধ্যে চাঁদপুর আদালতে দায়ের করা মামলা নং সিআর ৮৮১/২০২৪ ইং, বাদী হানিফ বন্ধুকশী এবং শরীয়তপুর আদালতে দায়ের করা মামলার নং সিআর ২৯৬/ ২০২৪ ইং, বাদী বিল্লাল বন্ধুকশী।
মামলায় ১ নাম্বার আসামি করা ভুক্তভোগী পরিবারের অন্যতম সদস্য শাহজালাল বন্দুকশী জানান, দাদার মৃত্যুর পর আমার জ্যাঠা শামসুল ইসলাম বন্দুকশী আমাদের বাপ-চাচা এবং ফুফুদের মারধর করে সম্পত্তি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছিল। তিনি কাউকে স্টাম্পের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে, আবার কাউকে মারধর করে সবার সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেয়। বর্তমানে আমার জ্যাঠার পরিবার ০০. ৪০ শতাংশ জমির মালিক হলেও তারা ৫০ বছর ধরে সাড়ে ১২ একর জমি ভোগ দখল করে আসছে। এরমধ্যে ৫ একর জমি ভুয়া কাগজ দেখিয়ে নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে। এ অবস্থায় আমার পরিবার এবং চাচা-ফুফুদের সন্তানরা বড় হওয়ার পর সম্পত্তি ফিরে পেতে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করি। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর আমরা আমাদের সম্পত্তিগুলো ফেরত পাই এবং আমাদের নামে বিএস খারিজ করি। আমাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার জ্যাঠা মরহুম শামসুল ইসলামের ছেলেরা মিথ্যে মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছে। আমার জ্যাঠা মরহুম শামসুল ইসলামের এক ছেলে ২৯ তম বিসিএস ক্যাডার (আনসার) । তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছে।।
তিনি আরো বলেন, বিল্লাল বন্ধুকশী নামের আমার জেঠাতো ভাইকে মারধর করে আহত করেছি এমন একটি গায়েবি ঘটনা সাজিয়ে তারা এই মামলাটি করেছে। তারা শরীয়তপুর হাসপাতালের যে সার্টিফিকেট দিয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এ বিষয়ে আমরা শরীয়তপুর সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ জমা দিয়েছি। শুধু তাই নয়, তারা হাসপাতালের সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য মাথায় আঘাতের যে ছবি ব্যবহার করেছে সেটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া। আরো অবাক করা বিষয় হলো, তারা এই মামলাতে রুনু মিয়াসহ দুইজন প্রবাসীকে আসামি করেছে। অথচ ঘটনা দিনের কয়েক বছর পূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই দুজন সৌদি প্রবাসী। শুধু তাই নয় তারা শরীয়তপুর আদালতে দাখিল করা মামলায় আমাদের ঠিকানা শরীয়তপুর এবং চাঁদপুর কোর্টে দায়করা মামলায় আমাদের ঠিকানা চাঁদপুর লিখেছে। এসব মিথ্যা এবং ভুলভাল তথ্যই প্রমাণ করে যে এই মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক। আমরা এই মিথ্যা এবং হয়রানি মামলা থেকে মুক্তি পেতে মহামান্য আদালতসহ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার চাই।
এ বিষয়ে চাঁদপুর আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী হানিফ বন্দুকশির সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪