শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে সরকার। ফলে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা আর হবে না। পরীক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কীভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে সেটি পরবর্তীকালে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। বিভাগ অনুযায়ী ৭-৯টি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আরও তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের বিভিন্ন বিভাগের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে।
পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় এখন সব শিক্ষার্থী নিশ্চিত হয়েছে যে সবাই পাস করবে। কিন্তু কে কত নম্বর/গ্রেড পাবেন তা বোঝা যাবে ফল প্রকাশের পর। আর ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ২০ আগস্ট বলেন,‘অনেকগুলো পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। আর কিছু পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। যে পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়েছে সে বিষয়গুলোও মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া বাকি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার সঙ্গে সাবজেক্ট ম্যাপিং হতে পারে। এছাড়া আরও কোনো বিকল্প উপায় আছে কি না—সে বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।’ এভাবে ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যাবে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, কীভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সবগুলো শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে নিয়ে আজ ২১ আগস্ট সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সভায় শিক্ষার্থীদের কীভাবে ফল প্রকাশ করা হবে, মূল্যায়ন করা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এ আলোচনার পরই বোঝা যাবে আসলে কোন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।
ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেছেন, করোনার সময় পরীক্ষা না হওয়া এবং কম বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া; এসব নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে ঐ সময়ে তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করা হবে। ঐ কর্মকর্তা আরও জানান, করোনার সময় ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই আগের দুই পাবলিক পরীক্ষা (অষ্টম শ্রেণির জেএসডি ও এসএসসি) ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করার জন্য সেবার একটি নীতিমালা করা হয়েছিল। ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা আট সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি এই নীতিমালা তৈরি করে। নীতিমালা অনুসারে করা হয় ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’।
জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করার কারণে শুধু পাশ নয়, জিপিএর সংখ্যাও বেড়েছিল। এরপরের বছরও সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়। যেসব শিক্ষার্থীর পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত আছে তাদের এসব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। যারা এসএসসি দিয়েছিল তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে জেএসসি বিজ্ঞান বিষয়গুলোর সঙ্গে এসএসসির অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়। মানবিক বা কমার্স ও মানবিকের বিষয়গুলোও পৃথকভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
পরীক্ষার্থীরা নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে ইতিমধ্যে নেয়া পরীক্ষা ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার দাবিতে গত চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকের গেট দিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সচিবালয়ে ঢুকে ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বসে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরপর দাবি পূরণে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এক ঘণ্টা পার হলে বিকাল ৪টার কিছু আগে পরীক্ষার্থীরা সবাই একযোগে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ২০ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ আটকে দেয়া হয়।
চাঁদপুর টাইমস
২১ আগস্ট ২০২৪
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur