জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ (বুধবার)। বছরজুড়েই বিএনপির আন্দােলনে সমর্থন দেয়া তো দূরের কথা, এখনো সংগঠনটির কমিটিতে থাকা বেশিরভাগ নেতাই রয়েছেন পলাতক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কমিটি গত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইউনিটের কমিটি গঠন করতে পারেননি। ফলে এসব ক্যাম্পাসে বড় ধরনের কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়েছে ছাত্রদল।
এছাড়া পদ বাগিয়ে নিয়ে নেতা হওয়ার পর বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতাই গা-ঢাকা দিয়ে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে আবার আন্দােলন সংগ্রামে অংশ না নিলেও নিজেদের ব্যবসা ও পরিবার পরিজন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে গত কমিটিতে পদ না পাওয়ায় ছাত্রদলের একটি অংশ বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে মাসব্যাপি তুমুল আন্দােলন শুরু করেছিল। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তখন পদবঞ্চিত নেতারা দাবি করেছিলেন যাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পকেটের লোক। তাই এদেরকে দিয়ে কােনো আন্দােলন সফল করা সম্ভব নয়।
পদবঞ্চিত এরকম একজন ছাত্রদল নেতা রাকিবুল ইসলাম রয়েল বলেন, এই কমিটি যে অথর্ব সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমরা যৌক্তিক দাবিতেই তখন আন্দােলন করেছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি রাজিব অাহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান দলের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন এটা সবাই জানে। তারপরও তাদেরকেই ছাত্রদলের দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনকে ধ্বংসের সব আয়োজন ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন টুকু ও অ্যানী।
এই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানসহ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। তবে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন যখনই আন্দােলনের ডাক দিয়েছেন আমরা অংশ নিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দােলনে এককভাবে ব্যর্থতার দায়ভার ছাত্রদল নিতে রাজি নয়। সার্বিক বিষয়টা ছাত্রদলের উপর চাপানো দুঃখজনক। সংগঠনটির আরেক সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি হওয়ার পরেই বর্তমান অবৈধ সরকার-বিরোধী আন্দােলন শুরু হয়েছে। খালেদার নির্দেশে আমরা আন্দােলন সফল করার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, ছাত্রদল এবারের আন্দােলনে রাজপথে অনেক ভালো ভূমিকা রেখেছে। আন্দােলন, সংগ্রাম, ধরপাকড়ের কারণে সাংগঠনিক বিষয়টি নজর দেয়া গত এক বছরে সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কমিটি না করায় সংগঠনটি কর্মী সংকটে পড়েছে। একটি হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে কর্মী খুজে পাচ্ছেেন না তারা।
অন্যদিকে যেসব স্থানে কমিটি করা সম্ভব ছিল সেসব স্থানেও কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত রাজপথের এই সংগঠনটি ভ্যানগাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন পদ প্রত্যাশি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে কোনো চাকরিতে না গিয়ে এখনো তারা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এখনো পরিবার থেকে টাকা এনে রাজনীতিতে খরচ করছেন।
কিন্তু গ্রুপিং আর সিনিয়র নেতাদের নানা দ্বন্দ্বের কারণে তারা এখনো সংগঠন থেকে কোনো স্বীকৃতি পাননি। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রদল একসময় বাম সংগঠনে মতো হয়ে যাবে বলেও ধারণা করেন তারা।
ক্ষােভ প্রকাশ করে তারা বলেন, যথাসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর হল এবং গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে কমিটি গঠন করা সম্ভব হলে সরকার-বিরোধী আন্দােলন সফলতার মুখ দেখা সম্ভব হতো। কিন্তু পদ বাগিয়ে নেয়া বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতার কোনো হদিস নেই। সংগঠনে সমন্বয়হীনতার কারণে আজ বিএনপিকে এই করুণ অবস্থা বরণ করতে হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।
বর্তমান কমিটি এক বছর পার করেছে, আপনার হাতে গড়া এই কমিটির সফলতা কী? এরকম প্রশ্নের জবাবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নানা কারণে আমরা বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠন করতে পারিনি। তবে ম্যাডাম দেশে ফিরলেই বাকি কাজগুলো শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বর্তমান কমিটি সভাপতি রাজিব আহসান কারাগারে আটক রয়েছেন। তাই ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন। মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান কমিটির এক নেতা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন মামুন ও আকরাম বর্তমানে যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে নেটওয়ার্ক খুবই কম। তাই তারা অন্যদের সঙ্গে কম যোগাযোগ করে আপাতত নিজেদেরকে রক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ১৪ অক্টোবর রাতে রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ১৫৩ জনকে দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৫৩ জনের কমিটি গঠন করার পর এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৪:৫৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৫,বুধবার
এমআরআর