চাঁদপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ধমীয় ভাব-গম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ৪০ তম মহাসমাধি দিবস এবং তাঁর মানসকন্যা মহাসন্ন্যাসিনী শ্রীশ্রীমামনি সংহিতা দেবীর ১৬ তম মহাসমাধি দিবস পালিত হয়েছে। ২৭ এপ্রিল শনিবার দুপুর অযাচক আশ্রম প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।
আশ্রম অধ্যক্ষ ব্রহ্মচারী স্বরূপের সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাৎ, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় ভৌমিক, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এডভোকেট বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রনজিৎ চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ, জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, পৌর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার জয়, চাঁদপুর পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিপ্রা দাস প্রমুখ মহোদয়গণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড-অব-ট্রাস্টের সদস্য দুলাল চন্দ্র দাস, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সদস্য তাপস কান্তি সরকার।
চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড-অব-ট্রাস্টের সদস্য-সচিব মৃনাল কান্তি দাস এবং চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড-অব-ট্রাস্টের সদস্য প্রণব সাহার যৌথ পরিচালনায় স্মৃতিচারণ সভায় আলোনায় অংশ গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগরী সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সভাপতি ডা. ভজন তলাপাত্র, সহ-সভাপতি বিমল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার দাস, বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সম্মেলনের আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর রাধেশ্যাম কুরী, যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম সাহা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব সমগ্র বিশ্ববাসীর অমূল্য সম্পদ। তাঁর জন্ম না হলে সমগ্র বিশ্ববাসী তাঁর “চরিত্রগঠন আন্দোলন” সম্পর্কে ধারণা পেত না। তাঁর অসমাপ্ত কার্যক্রম তাঁর মানসকন্যা মহাসন্ন্যাসিনী সংহিতা দেবী বাস্তবায়নে কাজ করেছেন।
স্মৃতিচারণ সভায় অতিথিবৃন্দরা বলেন- যুগস্রষ্ঠা ঋষি অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব ছিলেন অভিক্ষু, কর্মযোগী, সংযম, ব্রহ্মচর্য্য, স্বাবলম্বন, জগৎকল্যান এবং মহান “চরিত্রগঠন আন্দোলনের” প্রবর্তক। স্বামী স্বরূপানন্দ চাঁদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করে সমগ্র বিশ্ববাসীকে আধ্যাত্নিক জীবনে “চরিত্রগঠন আন্দোলনের” মাধ্যমে উর্দবুদ্ধ করেছেন। তিনি জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শ্রীশ্রী সমবেত উপাসনার মাধ্যমে ১টি মিলন মঞ্চে এনেছেন। তিনি মানব জাতির কল্যাণের লক্ষ্যে শতাধিক (১০০ একশতের অধিক) গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনে বিশ্বে বহু অযাচক আশ্রম এবং শত শত অখণ্ড উপাসনা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বামী স্বরূপানন্দ ভারতের ঝাড়খন্ড প্রদেশে পুপুনকিতে ১০০০ (এক হাজার) বিঘা জমির উপরে “দি-মাল্টিভার্সিটি” প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বেনারসে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশাল আয়ুবের্বদীয় ঔষুধের ফ্যাক্টরী। সেখান থেকে সমগ্র বিশ্বব্যাপী সর্বগুন সম্পন্ন মহৌষুধ গুলি কমমূল্যে বিক্রি ও বিতরণ করা হচ্ছে। স্বামী স্বরূপানন্দের প্রয়াণের পর তাঁর শ্রীদেহ কলিকাতার কাকুর গাছিস্থ কেন্দ্রীয় আশ্রম “গুরুধামে” সমাধীস্থ করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য মানসকন্যা মহাসন্ন্যাসিনী শ্রীশ্রীমামনি সংহিতা দেবী বিশ্ব অখণ্ড সংঘকে আরো সুসংহত ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। চাঁদপুর শহরের পুরাতন আদালত পাড়ায় স্বামী স্বরূপানন্দের জন্মস্থান হলেও সমস্ত জন্ম ভিটা একসময়ে দখল হয়ে যায়। শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দের সুযোগ্যা মানসকন্যা মহাসন্ন্যাসিনীর শ্রীশ্রী সংহিতা দেবীর সুদক্ষ্য নেতৃত্বে তৎকালীন চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রী সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর মাধ্যমে চাঁদপুরের পুণ্য জন্মস্থানের কিছু ভিটা বাড়ী উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তাঁকেই কেন্দ্র করেই এই পুণ্য জন্মস্থান চঁাদপুর অযাচক আশ্রম প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বক্তারা আরো বলেন, মহাসন্ন্যাসিনী শ্রীশ্রী সংহিতা দেবীর প্রয়াণের পর তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী বর্তমান বিশ্ব অখণ্ড সংঘ প্রধান শ্রীশ্রীদাদামণি তপন ব্রহ্মচারীজি মহারাজ ২০১৭ ইংরেজী সনে জানুয়ারী মাসে শতাধিক প্রতিনিধি নিয়ে চাঁদপুর শহরে তথা বাংলাদেশে ভ্রমণে এসে পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রম প্রাঙ্গণে বিশ্বমানের মন্দির নির্মানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমানে মন্দির নির্মান কার্যক্রম প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে সংঘে বি-শৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি পরমারাধ্য গুরুদেব স্বামী স্বরূপানন্দের পুণ্যজন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব অখণ্ড সংঘ প্রধান এবং তাঁর একমাত্র অনুমোদিত “বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠন” এর মূল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে যারা সংঘ-শৃঙ্খলা বিরোধী বা পরিপন্থী কর্মে যুক্ত ও লিপ্ত আছেন তাদেরকে কেন্দ্র বা সংঘ নেতার প্রতি পূণ্য আনুগত্য বজায় রেখে সংঘ শৃঙ্খলায় ফিরে আসার জন্য উক্ত স্মৃতিচারণ সভা থেকে বক্তারা আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বরূপানন্দ সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট স্বরূপানন্দ সংগীত শিল্পী মানিক রায় ও চট্টগ্রামের শিল্পী উত্তম ঘোষ, চিরঞ্জীব চৌধুরী ও নির্ঝর ঘোষ প্রমুখ। হরিওঁ কীর্ত্তন পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের ভ্রাতা চিরঞ্জীব চৌধুরী, স্বপন ঘোষ, উত্তম ঘোষ প্রমুখ।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২৭ এপ্রিল ২০২৪