”একটা সময় শুনতে পেতাম পুলিশের চাকুরী পেতে কাড়িকাড়ি টাকা গুনতে হয়। নিজের সন্তান যখন পুলিশে চাকুরীতে যাবার আগ্রহপোষণ করলো তখন থেকে ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। নিজের যা রোজগার হয় তার সবটাই ব্যায় হয় সংসারে। ছেলের পুলিশের চাকুরীর জন্যে এতো টাকা পাবো কোথায়? পাহাড়সম চিন্তা এসে মাথার উপর ভর করে। কিন্তু কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই আমার ছেলে পুলিশের চাকুরী পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমার অতীতের সমস্ত ধারণা পাল্টে গেলো! মাথার উপর থেকে যেন চিন্তার একটা পাহাড় সরে গেছে!” -এমনটাই বলছিলেন সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় পুলিশের চাকুরী পাওয়া মো: আসাদুজ্জামানের বাবা, নবীনগর উপজেলার হাজীপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন। গত ১৩ তারিখ পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পায় ইকবাল হোসেন এর ছেলে মো: আসাদুজ্জামান। এজন্যে তিনি সকল কৃতিত্ব দিতে চান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা পুলিশ সুপার মো: শাখাওয়াত হোসেনকে।
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘‘আজ বিভিন্ন ফেইসবুকে দেখতে পেলাম ‘‘মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশের চাকুরী পওয়া’’র কথা। মূলত: এই কথাটি ভুল। কেননা, আমার ছেলের চাকুরীর আবেদন অনলাইনে প্রেরণ বাবদ খরচ হয়েছে ১২০ টাকা। এছাড়া আর কোনো খরচ হয়নি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এই ১২০ টাকাতো পুলিশের ফান্ডে যায়নি। সুতরাং বলতে হবে টাকা ছাড়াই পুলিশের চাকুরী পেয়েছে আমার ছেলে।’’
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘‘পুলিশ সুপার মো: শাখাওয়াত হোসেন এর মতো এমন সজ্জন কর্মকর্তারাই সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশে ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করছে।’’
উপরের কথাগুলো এমন একজন ইকবাল হোসেনের নয়, এ যেন ৭১জন অভিভাবকের অন্তরের কথা। যাদের সন্তানরা গত ১৩ তারিখ বিনে পয়সায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পেয়েছেন। শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ায় নিয়োগ প্রাপ্তরা এবং তাদের অভিভাবকগন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য যে, বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায় বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ জানুয়ারি ২০২৪ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ জেলায় শতভাগ মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নিয়োগ কার্যক্রমের সব গুলো ধাপ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৭১ জন চাকরি প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৬০জন পুরুষ আর ১১ জন নারী।
সেবার ব্রতে চাকরি’ এই স্লোগানে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের চাকরি পেয়েছেন ৭১ জন ছেলে-মেয়ে। চাকরি পেতে অনলাইন আবেদন খরচ বাবদ জনপ্রতি খরচ হয়েছে ১২০ টাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনস্ ড্রিল শেড নতুন চাকরি পাওয়া ছেলে-মেয়েদের মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বিপিএম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ শাখাওয়াত হোসেন বিপিএম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইন্স ড্রিল শেডে আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরসি নিয়োগ কার্যক্রমের সকল ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারী শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। মোট ১৭৩৮ জন প্রাথমিকভাবে আবেদন করলেও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পর্বে উপস্থিত হন ১২৩৮ জন। পরীক্ষা কমিটি ৪৬৩ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচিত করেন। গত ১৩ মার্চ সকালে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ২৮৯ জনকে রাখা হয়।
তিনি বলেন, এতে কৃতকার্য প্রার্থীদের লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী ওই দিন রাতেই চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যাতে ৭১ জন প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।
এ সময় নির্বাচিত ৬০ জন ছেলে ও ১১ জন মেয়ে রিক্রুটকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পুলিশ সুপার সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব সাথে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার আহবান জানান পুলিশ সুপার।
এ সময় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ১৪ মার্চ ২০২৪