চাঁদপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে একের বিরুদ্ধে অপরের প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়ায় গ্রুপিং এখন চরমে পৌঁছেছে। সাধারণ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মনে করছেন এর মূল কারণই হচ্ছে জেলা ছাত্রদল আহ্বায়কের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। ছাত্রদলে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রনেতারা জেলা ছাত্রদলের দায়িত্ব পাওয়ায় ওই সময়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতারা।
আর এ কারণেই ব্যক্তির ইচ্ছা আর অনিচ্ছায় চলতে থাকায় চাঁদপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার সাংগঠনিক চরিত্রই হারাতে বসেছে বলে দাবি উঠেছে সর্বত্র। ফলে জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়করা। এসব গ্রুপিংয়ে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন মামলা-হামলায় নির্যাতিত শত শত ত্যাগী নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।
অপরদিকে সাধারণ ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছে, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন না হলে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি চাঁদপুরে পুরোপুরি পথ হারাবে।
পাশাপাশি দুর্বল হয়ে পড়বে জেলা বিএনপিও। তাদের মতে দীর্ঘ ৮ বছর পর ছাত্রদল কেন্দ্রিয় সংসদের সাবেক সভাপতি আবদুর কাদির ভূঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের ৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই।
কমিটির সদস্যরা হলেন আহ্বায়ক ফয়সাল গাজী বাহার, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাঝি, যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুজ্জামান হাসনাত, শামছুল আলম সূর্য, আবু সায়েম মিয়াজি, মো. শারেফিন হোসাইন, মো. আবদুল মতিন ও জিয়াউল মাওলা কচি।
অনুমোদিত আহ্বায়ক কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে সব ইউনিট কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার নির্দেশ থাকলেও কেবল আহ্বায়কের ইচ্ছায় কমিট গঠনে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ উঠে শুরু থেকেই সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে।
তাদের অভিযোগ, নিজের একক ক্ষমতাকে জাহির করতেই আহ্বায়ক গত ৩ অক্টোবর ৫টি ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেন। তাদের অভিযোগের সাথে একমত পোষণ করে সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা ছাত্রদলের অপর ৪ যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুজ্জামান হাসনাত, শামছুল আলম সূর্য, আবু সায়েম মিয়াজি ও মো. শারেফিন হোসাইন।
তাদের দাবি চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর ছাত্রদল এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও মতলব দক্ষিণ পৌর ছাত্রদল শাখার কমিটি অনুমোদনে আহ্বায়ক কোন লিয়াজোঁ করেননি, এমনকি কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্রনেতাদেরও মূল্যায়ন করা হয়নি। আর এজন্যেই ৪ যুগ্ম-আহ্বায়ক সম্মলিতভাবে নেতাকর্মীদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে বিভিন্ন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই ভিত্তিতে গত ৩ অক্টোবর চাঁদপুর সরকারি কলেজের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুজ্জামান হাসনাত জানান, এ পর্যন্ত যে কয়টি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে তার কোনটি কীভাবে হবে তা অপর ৬ যুগ্ম-আহ্বায়কের সাথে লিয়জোঁ করেনি আহ্বায়ক। তিনি একাই স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়েই আহবায়ক কমিটিগুলো ঘোষণা করেছেন।
এদিকে গত ৩ অক্টোবরের ৫টি ইউনিট কমিটিতে ৭০ শতাংশ যোগ্যতাসম্পন্ন ও ত্যাগী ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলা আহ্বায়ক ফয়সাল গাজী বাহার।
তার মতে, বড় ছাত্র সংগঠন হিসেবে চাওয়া-পাওয়ার চাপ থাকবেই। তবে এমন সংগঠনে প্রত্যেকেই মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। আর যারা এসব ইউনিট কমিটির সমালোচনা কিংবা পাল্টা কমিটি দিচ্ছে তারা মূলত সরকারি দলের অনুগত হয়ে কাজ করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এখনই সময় সংগঠনকে ঢেলে সাজানো। কিন্তু জেলা ছাত্রদলের দুর্বল সাংগঠনিক চিন্তা, অভ্যন্তরীণ বিভেদকে উৎসাহিত করা ও মামলায় কারা নির্যাতিত কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও অর্থের বিনিময়ে কমিটি বিক্রির কারণে যেমন গ্রুপিং আর অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে, তেমনি চাঁদপুরে ছাত্রদল মাথা তুলে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়ছে।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর টাইমস || আপডেট: ১১:২০ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫, বুধবার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫