Home / জাতীয় / নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে ইসি
ec

নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে ইসি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবার ইসি তিনগুণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রায় তিন হাজার ম্যজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি হাতে পেয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে দেশের ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন হচ্ছে। সঙ্গে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য সোমবার নির্বাচন কমিশন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এবারের নির্বাচনে প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত তিনজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেয়া ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনি এলাকায় ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৭ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এতে প্রায় শত কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে বলে জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইসির চাহিদা মেটাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করার জন্য দেয়া সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিবের পাশাপাশি উপসচিবদের দায়িত্ব দিতে হবে। তাতেও সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তবে প্রয়োজন হলে যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী সচিব রয়েছেন ১ হাজার ৭ শ ১৬ জন। আর সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন ৮৯৯ জন। এ দু’ পর্যায়ের কর্মকর্তা মিলে সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৫১৫। যা চাহিদার চেয়ে কম। চাহিদা মেটাতে অবশ্যই উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও দায়িত্ব দিলে কর্মকর্তা দেয়া যাবে ঠিকই।

কিন্তু প্রশাসন কর্মকর্তা শূন্য হয়ে পড়বে। এসব কর্মকর্তাকে টানা ৩৭ দিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে দীর্ঘ এ সময় প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

সাধারণ সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারাই মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ শ ৯৫ জন ইতোমধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংখ্যা বাদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা থাকে দু হাজার ৬৩৫ জন। এদের মধ্যে একটি অংশ সচিবালয়ে বিভিন্ন মলালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আবার কেউ কেউ ছুটি দিয়ে বিদেশে কর্মরত এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরে প্রেষণে নিযুক্ত রয়েছেন।

এসব বাদ দিয়ে দায়িত্ব পালনের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দু’হাজারের কম-বেশি হতে পারে। অবশ্য সরকার চাইলে উপসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। বর্তমানে সরকারের এক হাজার ৬৫৮ জন উপ-সচিব, ৯৩৩ যুগ্ম-সচিব, ৩৭১ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ২৭ জন গ্রেড-১ ও ৮২ জন সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন (দুর্গম ও দূরবর্তী ২টি ইউনিয়নে একজন),বড় পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটিতে চারজন, প্রতি পৌরসভায় তিন জন করে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতি ৪-৫টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের ৪ হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন,৩২৮টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশনে প্রায় ৩ হাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দরকার পড়বে। এত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একসঙ্গে নিয়োগ করা কতটা সম্ভব, সেটা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পেছনে দৈনিক ভাতা, যানবাহনের জ্বালানিসহ প্রতিদিন ৯-১০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে বলে জানা গেছে। সেই হিসাবে তিন হাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলে নির্বাচন কমিশনের একশ’ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শাহীন আরা বেগম বলেন, নির্বাচন কমিশনের চিঠি এখনও আমি দেখিনি। আগে চিঠি দেখি,তার পর তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিন হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৭ দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়ার সক্ষমতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের রয়েছে বলে জানান তিনি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জোন/এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

যেসব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মরত নেই সেখানে বিভাগ/জেলা পর্যায়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে অথবা অন্য কোনো দপ্তর/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

২২ নভেম্বর ২০২৩
এজি