দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সমগ্র দেশে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। একদকিে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং প্রচার-প্রাচরণায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রাখছেন, আর অন্যদকিে বএিনপ-িজামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ বিরোধীদলীয় বড় রাজনীতিক দলগুলো ঘোষিত সফসীল বাতিল এবং তত্ত¡বধায়ক সরকাররে দাবীতে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী ৩০০ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল -এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পরিচালনায় সারাদেশে ৬৬জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২জন সহকারি রিটার্নিং অফিসাারের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ১৭ই ডিসেম্বর, আপিল-দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬-১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, প্রচার-প্রচারনা শেষ দিন ৫ জানুয়ারী ও নির্বাচন ৭ জানুয়ারি।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। নানান কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা ইলিশের বাড়ী খ্যাত চাঁদপুর। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী চাঁদপুর জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে। ৮টি উপজেলা, ৮টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৮৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ জেলার মোট আয়তন ১,৭০৪.০৬ বর্গকিমি এবং মোট জনসংখ্যা ২৬লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৮জন। এখানে সংসদীয় আসন রয়েছে ৫টি। এগুলো হলো- ২৬০ কচুয়া-১, ২৬১ মতলব-২, ২৬২ চাঁদপুর সদর-৩, ২৬৩ ফরিদগঞ্জ-৪ এবং ২৬৪ হাজীগঞ্জ-৫। সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর জেলায় মোট ভোটার ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৫ শ’ ৯০ জন।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া)
একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-১ (কচুয়া) সংসদীয় আসন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ আসনেও বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি হাওয়া। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনি মাঠে সরব হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরাই নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। ইতিমধ্যে তারা সভা-সমাবেশ, কর্মিসভা, দান-অনুদান, ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণসংযোগ ও নির্বাচনি প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। কচুয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিন হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব রয়েছেন। অপর দিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কিছুটা নীরবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। আর দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন না করার ঘোষণায় অনঢ় অবস্থানে থাকা বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দলগুলোর সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা এখনো আনন্দলন-সংগ্রাম নিয়ে রাজপথে রয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আসনটি ধরে রাখতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি বা জোটগত নেতারা তাদের দাবিগুলো সামনে এনে দলীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
চাঁদপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এ আসন থেকে তিনি তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা- ৩,২৫,৬২০ (তিন লাখ পচিশ হাজার ছয়শত বিশজন)। এরমধ্যে নারী ভোটার- ১৫৬৩৫৬ জন, পুরুষভোটার- ১৬৯২৬৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার- ১ জন। এবারের নির্বাচনে এখানে মোট ভোটকেন্দ্র- ১০৮টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব আলহাজ মো. গোলাম হোসেন।
অন্যদিকে নাটকীয় কোন পরিবর্তন না ঘটলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না এটি এক প্রকার পরিস্কার। বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে দলটি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবে। তারা হলেন বিএনপি থেকে দুবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তিনি দলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া হ্যাভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয়া বিএনপির মালয়েশিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আ হ ম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় প্রচার ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম শহীদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য ও কচুয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ এমদাদুল হক রুমন। ২০২৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ (কচুয়া উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির মো. মোশারফ হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৫৯ ভোট। এখানে গড়ে ভোট পড়েছিলো ৮১.০৪%
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ)
একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর আরেকটি আসন চাঁদপুর-২। স্থানীয়রা বলছেন, অতীতে এই আসন থেকে যে দলের প্রতিনিধি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলই সরকার গঠন করেছে। রাজধানীর সন্নিকটে হওয়ায় রাজনীতিতে এই আসনের গুরুত্বও অনেক বেশি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট নেতা ও সরকারের আমলাদের জন্মস্থান এখানে। প্রায় সব সরকারের আমলে এই আসন মন্ত্রী পেয়েছে। তাই উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। ২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে বর্তমানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩জন হেভিয়েট প্রার্থী এবার নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
তারা হলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চাঁদপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এবং কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও টেকনোক্যাট কোটায় বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ইসফাক আহসান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা শেফালী আক্তারের নাম আলোচনায় রয়েছে।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির দীর্ঘদিনের সভাপতি এমরান হোসেন মিয়ার নাম। তিনি এর আগেও চাঁদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-২ (সংসদীয়-২৬১) আসন। এ আসনে রয়ছে ২টি পৌরসভা ও ১৯টি ইউনিয়ন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা- ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার- ২ লাখ ২৮হাজার ৫০৯ জন (মতলব উত্তরে ১, ৩৩, ৬১৮ জন ও মতলবদক্ষিণে ৯৪, ৮৯১জন) আর পুরুষ ভোটার- ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৪ জন (মতলব উত্তরে ১, ৩৯, ৪৩৫ ও মতলব দক্ষিণে ৯৯, ০৭৯জন)এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার-২জন (মতলবউত্তরে ১জন ও মতলবদক্ষিণে ১জন)। এখানে মোট ভোটকেন্দ্র-১৫৪টি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নুরুল আমিন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। তিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৫ ভোট। তার প্রধান প্রতি দ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১০ হাজার ২৩৯ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছিলো ৮০.০০%।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর)
সদর ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৩ আসন। এ আসন গঠিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয়বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলোতে জয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত ছয়টি নির্বাচনে দুটি দলের প্রার্থীরা তিনবার করে সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয়ী বিএনপির প্রার্থীদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের ডা. দীপু মনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলে ডা. দীপু মনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও অন্য দলের প্রার্থীদের হারিয়ে তিনি এমপি হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। এদাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীনজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বর্তমান সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে পরাজিত করেন ডা. দীপু মনি। এবার যখন ব্যবধান বাড়ানোর পালা, তখন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনঢ় রয়েছে বিএনপির।
এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহান প্রমুখ।
বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। জাতীয় পার্টি থেকে অ্যাড. আব্দুল লতিফ শেখ ও অ্যাড. মহসীন খানের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণফোরাম থেকে চাঁদপুর জেলার সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, জামায়াত ইসলামী থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. শাহজাহান মিয়া এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদীন শেখ দলগুলোর একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে জানা গেছে।
সদর-হাইমচর উপজেলায় ২০ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১২ হাজার ৩২৬ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার- ২ লাখ ৪৬ হাজার ০৬৬জন (চাঁদপুর সদর ১, ৯৯, ৩১৩ জন ও হাইমচর ৪৬, ৭৫৩জন), পুরুষ ভোটার-২, ৬৬, ২৫৮ জন (চাঁদপুর সদর ২, ১৫, ২৪৪জন ও হাইমচর ৫১, ১৪ জন) আার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র- ১৫৭টি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. দীপু মনি নৌকা প্রতীকে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮১২ ভোটে বিজয়ী হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫০১ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছিলোঃ ৮৩.০৭%।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)
চাঁদপুর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ আসন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)। আসনটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বলে জেলায় পরিচিত। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনেও জমে উঠছে নির্বাচনী হাওয়া। দেশ স্বাধীনের পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও এক সময় তা হাতছাড়া হয়ে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির দখলে চলে যায়। মূলত এ আসনটিতে বিএনপির বড় অঙ্কের ভোট ব্যাংক ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তার অনেক পরিবর্তনও এসেছে। এখন আসনটিতে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম সফিউল্লাহ ৪১ হাজার ৫৫৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ছিলেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড খালেকুজ্জামান। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ২৮০টি।
পরবর্তীতে গণপরিষদ নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমানের পিতা মরহুম অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির আজম রেজার পিতা রাজা মিয়া গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর সেই সময়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ফরিদগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতা থাকাকালীন মাওলানা এম এ মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। পরে মাওলানা মান্নান জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কমরেড খালেকুজ্জামান ভূইয়াকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আলমগীর হায়দার খান টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘবছর আওয়ামী লীগের হাতছাড়া এ আসনটিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. শামছুল হক ভূঁইয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। ৯ম সংসদ থেকে এ আসনটি নৌকার জয় জয়কার হলেও আসনটিতে এখনো বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান রয়েই গেছে। জোটগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরো যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান সাংসদ মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ড. শামছুল হক ভূইয়া, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ সাগর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, কাতারস্ত আওয়ামী লীগের নেতা সিআইপি ও শিল্পপতি জালাল আহাম্মেদ।
অপরদিকে নির্বাচনে এলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক শিল্পপতি আলহাজ এম এ হান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিআইপি মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট আব্বাছ উদ্দীন ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মো. ইউনুছ। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির বৈদেশিক ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী সাজ্জাদ রশিদ সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল।
১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৪ আসন। আসনে মোট ভোটার সংখ্যা মোট ভোটার সংখ্যা- ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৯জন। এরমধ্যে নারী ভোটার- ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৮জন আর পুরুষ ভোটার- ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৬১জন। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার- শুণ্য আর মোট ভোটকেন্দ্র- রয়েছে ১১৮টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহম্মদ শাফিকুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৯ ভোট। তার প্রধান প্রতি দ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মো. হারুনুর রশিদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭৯৯ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছিলো ৬৯.৭০%।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি)
হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি দুই উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর-৫ নির্বাচনী আসন। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে এ আসনটি জেলার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধকালীন এক নম্বর সেক্টর কমান্ডার অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তিত্ব মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। পঞ্চমবারের মতো আসনটি ধরে রাখতে অর্থাৎ নৌকার বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টায় আওয়ামী লীগ। এখানেও বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও দলের নির্বাচন বর্জনের দাবীতে তারাও আপাতত রাজপথে আন্দোলনে রয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মো. মঈনুদ্দিন। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর, ৩৩২ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরজাহান মুক্তার পিতা পরবর্তীতে বিভিন্ন পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এ মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব ড. এম এ সাত্তারকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধকালীন ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বিএনপির প্রার্থী এম এ মতিনকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এ মতিন এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী মেজর রফিকুল ইসলাম পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর রফিকুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে সবশেষ ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর(অব:) রফিকুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হককে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
চাঁদদপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান সাংসদ মেজর(অব:) রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইন, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরজাহান মুক্তা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান।
বিএনপি নির্বাচনে আসলে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড় এগিয়ে আছেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির বিএনপির সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবির পাটোয়ারী।
অপরদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু, সৌদি আরব রিয়াদ শাখা জাতীয় পার্টির সভাপতি কামরুজ্জামান কাজল মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় কর্মীরা জানান। ২টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন, ৩৩২টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৫ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা- ৪লাখ ৮৫ হাজার ৫৯৫জন। এরমধ্যে নারী ভোটার- ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪৫ জন (শাহরাস্তি ১, ০১, ২০৬ জন ও হাজীগঞ্জ ১, ৩৬, ৪৩৯ জন), পুরুষ ভোটার-২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৯জন (শাহরাস্তি১,০১,৯৯১জন ও হাজীগঞ্জ১,৪৫,৯৫৮জন), তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার-১জন এবং মোট ভোটকেন্দ্র- ১৪০টি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩লাখ ১হাজার ৬৪৮ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৭হাজার ১৯৫ভোট। এ আসনে ভোট পড়ে ছিলো ৮৬.৭৭%।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২১ নভেম্বর ২০২৩