চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার
“কাপড়টা তুইলা কথা ক, অর্ধেক তুইলা কথা কস ক্যা?”
অনুষ্ঠান শেষে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে শামীম ওসমান আইভীকে। টিভিতে যারা টকশোটি দেখেছেন তারা ব্রেকের সময়ের ঘটনাগুলো দেখতে বা শুনতে পাননি। ৭১ টিভির ক্যামেরায় ধারনকৃত ‘অফ এয়ার’ এর কয়েকটা দৃশ্য ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে নারায়ণগঞ্জের দুই নেতা শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর আক্রমনাত্মক বক্তব্য ও অশালীন ভাষা প্রয়োগের বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমগুলোতে। ওই টকশো অনুষ্ঠানের বিরতিতে দুই নেতা বাদানুবাদে জড়ান এবং একে অন্যকে আক্রমন করে কথা বলেন। দুই জনের উত্তেজনাকর বাদানুবাদের সময় টেলিভিশনটির দুই সিনিয়র কর্মকর্তা আলোচনার টেবিলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। টেলিভিশন ক্যামেরায় ধারণ করা অপ্রচারিত ওই অংশের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবের মাধ্যমে।
একজন বললেন, ‘তুই নারায়ণগঞ্জে চল, তোরে দেখাইতেছি।’ সঙ্গে সঙ্গে অপরজনের জবাব, ‘চল নারায়ণগঞ্জ, কি করবি?’ এটি কোন সিনেমার সংলাপ নয়। নারায়ণগঞ্জের দুই নেতা শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর টক শো আলোচনার অংশবিশেষ। মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত টক শোতে তারা দু’জন আলোচক ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরেক অতিথি সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা। দীর্ঘ এ টক শোতে শামীম-আইভীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একজন আলোচনার টেবিল ছেড়ে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একজন অন্যজনকে উদ্দেশ করে অশালীন কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের বিরতিতেও চলে এমন পরিস্থিতি। ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়ান দু’জন। অনুষ্ঠান শেষে আইভী যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শামীম তাকে মারতে ছুটে যান। তখন উপস্থিত লোকজন শামীম ওসমানকে নিবৃত্ত করেন। আলোচনা চলাকালে অনুষ্ঠান উপস্থাপক শাকিল আহমেদও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় কয়েক দফায়। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় টক শোতে। আগের দু’দিনে আইভী ও শামীম ওসমান ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির মুখোমুখি হন। দুই নেতাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। টক শোতে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই আক্রমণে যান মেয়র আইভী। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার একজনই সেটা এ কে এম শামীম ওসমান এবং তার সৃষ্টি আরও কিছু গডফাদার। ৭ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যদি বলতে হয় তবে হ্যাঁ এটা র্যাব দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। র্যাবের যে কর্মকর্তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এটা সত্য। কিন্তু তাদের বিহাইন্ডে কারা। কি কারণে করা হলো। কার সঙ্গে নজরুলের দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু র্যাবের সঙ্গে তো নজরুলের কোন সম্পর্ক ছিল না। র্যাবকে কে ব্যবহার করলো। তার পেছনে কে? যখন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো কার কাছে আগে ছুটে গিয়েছিল নূর হোসেন? নূর হোসেনকে প্রথমে গণমাধ্যমের সঙ্গে কেন কথা বলতে দেয়া হলো না? গণমাধ্যমকে ফেস করলো কে? নজরুলের মৃত্যুর পরও যখন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ওখানে গিয়ে বক্তৃতা করলেন তখন উনিই বললেন, নূর হোসেনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তার পরদিনই উনি টেলিফোনে বলছেন, ‘তুমি চলে যাও। গৌড়দার সঙ্গে দেখা করো। তাহলে গডফাদার বলাটা তো আমার ভুল হয়নি। আমি আমার অবস্থানে অনড়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে র্যাব। র্যাবের যোগানদাতা কারা?
আইভীর এমন বক্তব্যের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, সে গডফাদার মিন করেছে শামীম ওসমানকে। এটা ওর মিনিংয়ের ব্যাপার না। যাকে আমি দেখি করাপশনের একজন নায়িকা হিসেবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড, তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছু মিলে তার প্রশ্নের উত্তর আমি সরাসরি তাকে অ্যাটাক করে দিতে চাই না। এটা আমার রুচিতে বাধে। প্রতিটা জিনিসের একটা সৌজন্যতা, একটা ভদ্রতা, কথা বলার স্টাইল- সবকিছুর মধ্যে একটা মানুষের ব্লাডের পরিচয় পাওয়া যায়। সে এখানে বলল, ‘তাকে (শামীম ওসমান) গডফাদার মিন করি।’ সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বলেছেন কি কি প্রমাণ আপনার কাছে আছে? উনি প্রমাণ দেননি। উনি কিছু কথা বলেছেন। ওনার বক্তব্য দিয়ে আমি ওনাকে খণ্ডন করি। প্রথমেই নজরুল কার লোক? নজরুল অবশ্যই শামীম ওসমানের লোক। নজরুলকে শামীম ওসমানই ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি বানিয়েছেন। নজরুল রাজনীতিতে তার থেকেও সিনিয়র। সে হিসেবে আমার লোক। নূর হোসেন কার লোক। সে অবশ্যই আমাদের দলের লোক। এরপর তিনি নজরুল অপহরণের পর তার উদ্বেগ ও তৎপরতার বর্ণনা শুরু করেন। তিনি বলেন, নজরুলের কিছু হতে পারে এটা আশঙ্কা করছিলাম। এ সময় আইভী অভিযোগ করে শামীম ওসমান প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছেন। তাকে সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলানোর জন্য সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শামীম ওসমান জানান, তিনি নজরুলের পরিবারের সামনেই নূর হোসেনের কাছে জিজ্ঞাসা করেন নজরুল কোথায়? নূর হোসেন নজরুলের বিষয়ে কিছু জানে না বলে দাবি করলে তাকে শামীম ওসমান ধমক দিয়ে বের করে দেন। এপর্যায়ে সঞ্চালক গৌড়দার বিষয়ে শামীম ওসমানের কাছে জানতে চাইলে এবং প্রাসঙ্গিক কথা বলার অনুরোধ করলে শামীম ওসমান বলেন, আপনারা বইলা আনছেন এক গেস্টের নামে, আনছেন আরেক গেস্ট। কথাও শেষ করতে দেবেন না- তাহলে তো হবে না ভাইজান। এটা খুব সেনসিটিভ একটা জায়গা। শামীম ওসমানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আইভী বলেন, ‘আমি তাহলে চলে যাব। এক্সকিউজ মি… এক্সকিউজ মি… সঞ্চালক সাহেব আমি জানতে চাচ্ছি আপনি কি উনাকে অন্যের কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন? তাহলে আমি উনার সঙ্গে বসব না। নিজের কথা শেষ হতে না হতেই নাটকীয়ভাবে ফাইল হাতে উঠে দাঁড়ান আইভী। সঞ্চালক আইভীকে ম্যানেজ করতে গিয়ে বলেন, উনি কিন্তু আলোচনা শুরু করেছেন। আইভী বলেন, নো… নো… উনি শুরু করে আবার বলেছেন উনাকে একজনের কথা বলে আরেকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে… এ ধরনের একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বসা যায় না।
জবাবে শামীম ওসমান বলেন, মিথ্যাবাদী তুমি। কিছু বলতে হয় অনুষ্ঠানের পরিচালককে বল, আমাকে বলবা না। এ সময় তিনি বলেন, ওর (আইভী) সাহস নেই। আইভী সঞ্চালকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আপনি কেন আমার কথা উনাকে বলেননি? কেন মিথ্যা বলে উনাকে এনেছেন?
সঞ্চালক বলেন, তাকে বলা হয়েছে। আপনি যখন হ্যাঁ বলেছেন তখন থেকে তার ফোনটা বন্ধ ছিল। ওনাকে অসংখ্যবার ফোর দেয়া হয়েছে। ওনার মাইগ্রেনের ব্যথা ছিল। কিছুক্ষণ আগে উনি ফোনটা ধরেছেন। এখানে আসার পরপরই জানিয়েছি আপনার কথা। উনি এটা জানেন।
পাশ থেকে শামীম ওসমান বলেন, আমি মোটেই জানি না। আইভীকে উদ্দেশ করে বলেন, তুমি উঠে যাচ্ছ উঠে যাও, বেয়াদবি করো না। ফেস কর। আইভীও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘শামীম ওসমান। বেয়াদব ইউ।’ এবার সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বুঝতে পেরেছেন তো ফ্যামিলির পরিচয়। এ ধরনের কালচারের মেয়ে… চাক্কু মারা ওহেদ আলীর নাতনি তো, চুনকার মেয়ে তো, এ জন্যই মুন্সীগঞ্জে ভেগে গিয়েছিল, চার বছর ছয় মাস ছিল ওখানে। সঞ্চালক তাদের শান্ত করার চেষ্টায় গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। আইভী সঞ্চালককে বলেন, আপনি জানেন উনি কি বাজে লোক? তার দিকে তাকিয়ে শামীম ওসমান ধমকের সুরে বলেন, ‘অ্যাই শাট-আপ, জাস্ট শাট-আপ।’ আইভী সঞ্চালকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হোয়াই? হোয়াই? সে কেন বলল আপনি তাকে মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন?’ শামীম ওসমান কিছুটা স্বর নামিয়ে বলেন, মিথ্যা কথা বলি নাই। তুমি আর কোন সময়, ফারদার এভাবে কথা বলবা না, বেয়াদবের মতো। জাস্ট বেয়াদব। আইভী ফের বসেন। বলেন, আমি দু’টা কথা বলে চলে যাব। পরে বলেন, কথা বলব না কেন? অবশ্যই বলব। এই বলে আলোচনা শুরু করেন।
এ সময় শামীম ওসমান বলেন, আমি বলেছিলাম তার যে ন্যাচার এতে তো টেবিলটক হয় না। আমি মিথ্যা বলিনি। আমি বলেছি আই অ্যাম নট টোটালি ইনফর্মড। আমি এ টেবিলে এসে ইনফর্মড হয়েছি। এরপর শামীম ওসমান ও আইভী কথা বলতে রাজি হলে সঞ্চালক বিরতিতে চলে যান। বিরতির পর যোগ দেন সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা। এ পর্যায়ে সঞ্চালক আলোচকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে আলোচনা করে সমাধান টানার আহ্বান জানান। এবার শামীম ওসমান কথা বলার শুরু করেন।
তিনি বলেন, নজরুল অপহরণের পর নূর হোসেনকে নজরুলের পরিবারের অনুরোধেই ডেকে আনা হয়। সে অস্বীকার করার পর প্রশাসন, র্যাবসহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ঘটনাটি জানাই। তিনি বলেন, আমার দায়িত্ব সবাইকে জানানো। আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে জানতে পারি এ ঘটনার সঙ্গে র্যাব জড়িত। বিশেষ করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা। আপনি কিভাবে জানতে পারেন- সঞ্চালক প্রশ্ন রাখলে শামীম ওসমান বলেন, রাস্তা থেকে জানতে পারি। ওপেন রাস্তা থেকে। আমি জনপ্রতিনিধি। আমার কাছে সবাই আসবেই। পুলিশের কাছে যায় না। আমাকে বিশ্বাস করে। আমার নির্বাচনী এলাকা। এটা তো কোন জঙ্গল না। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড। প্রথমে ৭ জন এটা জানতাম না।
আমি প্রথমে জানতাম নজরুলকে নিয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত জানতাম নজরুলকে নিয়ে গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি টেন্সড ছিলাম। কিন্তু যখন শুনেছি নজরুলের সঙ্গে আরও ৫ জন তখন টেনশন কমে গেছে। যখন শুনেছি আরও দু’জন তখন আমি কনফার্ম হয়েছি কারও কিছু হবে না। কারণ নজরুলকে যদি কারও ধরার কথাও থাকে তবে একজনের জন্য ৭ জনের ক্ষতি হতে পারে না। বাট, তারপরও আমি সবাইকে ইনফর্ম করেছি। তিনি এ সময় বলেন, তদন্ত কমিশন কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গেলে আমাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। কারণ আমিই প্রথম বলেছিলাম সর্ষের ভেতরে ভূত আছে। কিছুসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক ওপরকে না জানিয়েছে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এটা কিন্তু আমার ফার্স্ট ডায়ালগ ছিল। এ জন্য আমাকে পেইন পেতে হয়েছে। হুমকি এসেছে। এ সময় সঞ্চালক বলেন, র্যাবের সঙ্গে খুন হওয়া ব্যক্তিদের শত্রুতা ছিল না। কথা উঠেছে তৃতীয় কারও ইন্ধন রয়েছে। এর জবাবে শামীম ওসমান বলেন, নজরুল কিভাবে খুন হলো সে ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি হয়েছে। নূর হোসেনের সঙ্গে যদি আমার খাতির থাকত তাহলে তো আমি তাদের পিনপয়েন্ট করতাম না। কয়েক দিন পর পত্রিকায় এসেছে এ মেয়র ও রফিউর রাব্বি বলেছেন, র্যাব এ ঘটনা ঘটায়নি। কাকে সেভ করার জন্য? সে যদি খারাপ ছেলে হয় তাহলে নূর হোসেনকে কেন দু’টা ইমপরট্যান্ট কমিটির সভাপতি করা হলো। নজরুলকে তো দেয়া হয়নি। এ সময় আইভীর বিরুদ্ধে টেন্ডার নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলেন শামীম ওসমান। নজরুলকে নূর হোসেন শাসিয়েছে বলে জানান।
এ পর্যায়ে আইভী বলেন, নূর হোসেন বা নজরুল আমার কাউন্সিলর এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তারা নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিলর হয়েছে। আইভী বলেন, ওপেন ফ্লোরে কমিটি করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে কে কোন কমিটিতে যেতে চায় সেভাবে দেয়া হয়েছে। আমি নিজে কমিটি করে দেব এমন বিধান নেই। একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ভোটাভুটি বা সমঝোতার মাধ্যমে হয়। এ সময় তিনি শামীম ওসমানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন কাগজপত্র বের করেন। কাগজ অনুসারে তিনি বিভিন্ন সময়ে দেয়া টেন্ডার নিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বপক্ষে যুক্তি দেন। শামীম ওসমান বলেন, এসব কাগজপত্রের কোন ভিত্তি নেই। তিনিও প্যাকেট খুলে বেশ কিছু কাগজ টেনে বের করে বলেন, ‘এই যে… এই যে দুর্নীতির প্রমাণ’।
দু’জনই যার যার কাগজপত্র আলোচনার টেবিলে রাখেন। এ পর্যায়ে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, হত্যা-খুন দুটি আলাদা বিষয়। কেউ দুর্নীতি বা চাঁদাবাজি করলে দুদক বা বিচারালয়ে আমাদের যাওয়া উচিত। একসময় যারা নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করতেন তারা এখন ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হয়ে গেছে। নূর হোসেন ঘটনার পর শামীম ওসমানের কাছে গেলে তখন তিনি বলেছিলেন নূর হোসেন এ ঘটনা ঘটাতে পারে না। শামীম ওসমান প্রতিবাদ করে বলেন, উনি এটা পারসেপশন থেকে বলছেন।
তখন সাংবাদিক মোর্তোজা বলেন, কেন পারসেপশন তৈরি হয় সেটি শোনেন। টেলিফোনে সংলাপ শোনা গেল নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের যে তুমি আগায়া যাও পালিয়ে যাও। তখন একটা পারসেপশন তৈরি হয়ে যায় যে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। মোর্তোজাকে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেন, আপনি আমাকে এটাক করে কথা বলছেন। আমি যখন
বললাম র্যাব জড়িত তখন মেয়র বললেন র্যাব জড়িত না। তিনি বলেন, নূর হোসেন জড়িত এটা আদালতে প্রমাণ হয়নি। তাহলে কিভাবে বলছেন। এ সময় তিনি নূর হোসেনের ফোনালাপের ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি দাবি করেন, এখানে আরও কথা ছিল। কাটিং করা হয়েছে। গৌড়দা হাইকোর্টের লোক। আমি তাকে ইয়াসিনের কথা বলেছি। আমি জানতে চেয়েছি কোন ভিসা আছে কিনা। এটা জানা দরকার ছিল। খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, সেই রাতে আমার ভাই মারা গেছে। সেই সুযোগ নিয়ে সিটি মেয়র নগ্নভাবে, সব মানবতার ঊর্ধ্বে উঠে কন্টিনিউয়াসলি আমার ফ্যামিলিকে দায়ী করেছে। বাধ্য হয়ে ভাইকে দাফনের পর আমার কথা বলতে হয়েছে। তিনি বলেন, ও (আইভী) যে করাপশনের কথা দুদকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, করাপশন যদি দুদকেই নিয়ে যাব শুধু তাহলে সেভেন মার্ডার নিয়ে আপনি-আমি আলোচনা করছি কেন? এ জন্য আইনও আছে, পুলিশ আছে। হু আই অ্যাম। আইনের ভাষায় তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। আমি যদি বলি সেলিনা হায়াৎ আইভী খুনের সঙ্গে জড়িত তাহলে পৃথিবীর সভ্য দেশে ও বাংলাশে আইনে আছে এটা প্রমাণ দিতে হবে সে জড়িত। ত্বকী হত্যার কথা উনি বললেন। ত্বকী হত্যার তদন্ত র্যাবের কর্মকর্তারাই করেন। তখন তিনি আইভীর দুর্নীতির প্রমাণস্বরূপ কিছু কাগজ দেখান।
সঞ্চালক দুর্নীতির বিষয়ে আইভীর কাছে জানতে চাইলে আইভী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে তিনি কি দেখালেন বুঝলাম না। যদি দুর্নীতি করে থাকি উনি (শামীম ওসমান) যে কোন সময় মামলা-মোকদ্দমা করতে পারেন। আমি সেভেন মার্ডারের পর নাকি রফিউর রাব্বিসহ বলেছি র্যাব এ কাজটি করেনি। উনি কোথায় পেলেন সে প্রমাণ দিতে হবে। উনি কি করেছেন আমি কি করেছি সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রেকর্ড আছে তারা দেখবেন। কিন্তু উনি কথায় কথায় নূর হোসেন কোথায় গেল কি করলো সে কার লোক? নূর হোসেন যদি আমার কাউন্সিলর হয়ে থাকেন তাহলে একটা ফোন তো করার কথা। সেটার প্রমাণ উনি দেখাক। পারভেজকে অপহরণ করা হলো উনি লিখলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে গেছে। সার্জেন্ট ফিরোজ নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর যখন জিডি করলো তখন কারও নাম উল্লেখ করেনি। দু’মাস পর যখন মামলা করলো আমার মামাতো ভাইকে আসামি করলেন বিএনপি নেতাদেরসহ।
মোর্তোজা বলেন, নূর হোসেনকে তৈরি করেছে গিয়াসউদ্দিন। নূর হোসেনকে তৈরি করেছেন শামীম ওসমান। শামীম ওসমান মাঝে কথা বলতে চাইলে মোর্তোজা বলেন কথা বলতে দেন।
শামীম ওসমান বলেন, কথা বলতে দেব যখন সত্য বলবেন। তখন মোর্তোজা বলেন, আপনি সত্য-মিথ্যা যাচাই করার কেউ না।
শামীম ওসমান স্বীকার করেন অবশ্যই আমি সত্য-মিথ্যা যাচাই করার কেউ না। কিন্তু আমি সত্য কথা বলার কেউ না? মোর্তোজা বলেন, টেলিফোন সংলাপ ও নূর হোসেনের পালিয়ে যাওয়া মানুষের কাছে সাত খুনের ঘটনা পরিষ্কার। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আজমেরি ওসমান জড়িত। র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি রয়েছে।
কে বলেছে শামীম ওসমান প্রশ্ন রাখলে মোর্তোজা বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ সময় তিনি প্রথম আলো ও সমকালের সংবাদ দেখালে শামীম ওসমান বলেন, কুলডাউন কুলডাউন। পক্ষ নেবেন ঠিক আছে। আপনি সাংবাদিক। আপনি পক্ষ নেবেন কেন? কে বলেছে, র্যাব বলেছে। ১৬৪ হয়েছে। ১৬৪ প্রত্যাহার হয়েছে। এ তদন্ত কারা করেছে। যারা দিন-দুপুরে সাতটা মানুষকে তুলে নিয়েছে তারাই কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা। তখন মোর্তোজা বলেন, তখন এ র্যাব নারায়ণগঞ্জে ছিল না। তখন কর্নেল সাঈদ সিইও ছিলেন না। জাহাঙ্গীর ছিলেন সিইও। শামীম ওসমান বলেন, প্রমাণ দিন। আমি এমপি হিসেবে রিজাইন দেব যদি না হয় আপনি কোন দিন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেবেন না। যে দিন ১৬৪ গড়িয়েছে ওইদিন র্যাবের সিইও হিসেবে গিয়েছেন তারেক সাঈদ। দু’জনের কথা বলার একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন সঞ্চালক। অনুষ্ঠান শেষ হলেও শামীম-আইভীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলে আরও কিছুক্ষণ। একপর্যায়ে আইভী বের হতে যাওয়ার সময় শামীম ওসমান তাকে মারতে উদ্যত হন। তখন উপস্থিত লোকজন তাকে নিবৃত্ত করেন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক গোলাম মর্তোজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওই ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বিরতির মধ্যে দু’জনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় আক্রমণাত্মক অবস্থানের কারণে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫