বাংলাদেশের সব জায়গায় কম বেশি দেখা মিলত টুনটুনি পাখির। চাঁদপুরের কচুয়ায় প্রচুর দেখা মিলত দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট পাখিটির। গাছ-পালা তরুলতা,ঘোগড়া ও তেতৈয়ার জলাসহ বিভিন্ন খাল-বিল নিয়ে গড়া কচুয়ার প্রধান আকর্ষন ছিল নানা জাতের পাখপাখালি,জানা-অজানা পাখিদের কিচির মিচিরে মুখরিত থাকত কচুয়া। এতো পাখির ভিড়ে অতি পরিচিত পাখি ছিল টুনটুনি। আজ কচুয়া থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দর্জি পাখি টুনটুনি।
বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ওপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর “টুনটুনি আর রাজার গল্প” (এক টুনটুনি টুনটুনাল সাত রানীর নাক কাটাল) সহ বাংলার শিশু সাহিত্যিকদের রচিত অসংখ্য ছড়া,গল্প ,গানে শক্তভাবে জায়গা করে নেয়া টুনটুনির বাস্তবে খুবই কম দেখা মিলছে। বসতঘরের গা-ঘেষা ঝোঁপ-জঙ্গলে সব সময়ই লাফিয়ে বেড়ানো,লেজ উচিয়ে নাচানাচি করা,টিন-টিনা,টিন-টিন শব্দ তোলা গান বেশ উপভোগ্য ছিল। ছোট পাখি টুনটুনি দর্জি পাখি নামেও পরিচিত। এরা গাছের পাতা ঠোঙার মতো মুড়িয়ে ঠোটের সাহায্যে সেলাই করে বাসা বানায়।
টুনটুনি আকারে প্রায় ১৩ সে.মি. পর্যন্ত হয়। বুক ও পেট সাদাটে। ডানার উপরিভাগ ও মাথা জলপাই লালচে। চোখের মনি পাকা মরিচের মতো,লেজ খাড়া এতে কালচে দাগ থাকে। ঋতুভেদে পিঠ ও ডানার রং কিছুটা পাল্টায়।
পৃথিবীতে ১৫ জাতের টুনটুনি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে কালোগলা,পাহাড়ি ও পাতি এ তিন প্রজাতি। টুনটুনির কন্ঠ ভারী মিষ্টি। দূর থেকেও শোনা যায় ওদের টুইট-টুইট, চিপ-চিপ, টুন-টুন সুরের ডাকাডাকি। টুনটুনি পাখি স্বভাবে খুবই চঞ্চল। এক জায়গায় কখনো বসে থাকে না। এই আছে তো,এই নেই। শিম, লাউ, কাঠবাদাম, সূর্যমূখী, ডুমুর, বাশঁঝাড়,তেতুল গাছ,বুনোগাছ,বন-জঙ্গলে ও ঘরের কোনে এদের দেখতে পাওয়া যেত। তবে গাছ-পালা ঝোঁপঝাড়,খালবিল,নদী-জলাশয় ধ্বংসে ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এ পাখি।
কচুয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাওকাত হোসেন সুমন বলেন, টুনটুনি পাখি পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। এক সময় গ্রাম-শহর সর্বত্রই এ পাখি দেখা যেত। এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। যথেচ্ছারে পাখিটির আবাসস্থল গাছ-পালা,ঝোঁপঝাড় ইত্যাদি ধ্বংস করার কারনে মূলত এ পাখিটি বিলীন হতে চলেছে। এ পাখিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে আবাসস্থল বিনষ্ট করা যাবে না। আবাসস্থল বিনষ্টের কারনে ওরা ঠিক মতো ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে পারছে না।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ১৮ জুলাই ২০২৩