সেই ৮১ সালে আব্বা আম্মাকে না বলে এক শান্ত ভোরে বেরিয়ে পরেছিলাম বাসা থেকে। গুলবাগিচা স্কুলের বন্ধু আবু সুফিয়ান রুবেলের সাথে বন্ধুত্ব জমে উঠেছে। সুফিয়ান একদিন বললো- চল আমার গ্রামের বাড়ীতে, বলাখাল। সময়টা ছিল এমনই মধুমাসের, এগারোদিন কাটিয়ে দিলাম তাঁর পরিবারের সাথে। সেই ডাকাতিয়া নদী পার হয়ে সুফিয়ানের গ্রাম। বাসার কেউ দূশ্চিন্তা করেনি, নিখোঁজ বালকের সন্ধানে হয়নি কোন মাইকিং। জানতো ছেলে ফিরে আসবে আবার, দূরন্তপনার জাস্ট একটা স্যাম্পল রেখে দিলাম আর কি!
একচল্লিশ বছর পর আবার এলাম চাঁদপুরের বলাখালে। রেলষ্টশনের লম্বা প্লাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম শেষ মাথায়, চঞ্চল বাতাসের উদ্দামতায় মনের ভিতর জেগে উঠেছিল নষ্টালজিয়া, মাঝখানে চলে গেছে একচল্লিশটা বছর। প্লাটফর্মের শেষ মাথায় বাংলা এবং ঊর্দুতে লেখা আছে- বলাখাল।
হোটেলে ফিরে বেগমকে ছবি পাঠাতেই তিনি বললেন বলাখাল তার নানার বাড়ী। বিয়ের একত্রিশ বছর পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে একটু হতচকিত হয়ে গেলাম। বেগম ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন সময়ে তার মা ইন্তেকাল করেছেন। কখনো কখনো বেগমের আচরনে মনে হয় সে আমার মধ্যেই হয়তো তাঁর মাকে খুঁজে পায়।
বলাখাল ইস্যূতে বেগমের আজ নিশ্চয়ই প্রয়াত মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে! আমি উনাকে দেখিনি, তবুও এখন মনে হচ্ছে তিনি আমাকে দেখেছেন, তাঁর আদরের ছোট মেয়ের জামাইকে বরন করে নিয়েছেন ছন্দহীন বাতাসের অস্থির চঞ্চলতায়! মায়ের গল্প শোনানোর সময় বেগম খুব উচ্ছসিত থাকেন। শ্বশুরবাড়ীর জামাই আদর সংক্রান্ত কোন দূর্ঘটনা আমার সাথে ঘটেনি, তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো গল্পটা হতো অন্যরকম! তবুও এখন কল্পনায় শ্বাশুড়ীর ঘোলা অবয়ব যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার মানসপটে।
আহা জীবন ! তুমি কিভাবে কখন কাকে কি দীক্ষা দাও সেটা সময় না গড়ালে আসলেই বোঝা মুশকিল! সাদাকালো এই ছবিটা সেই সময়কার, মাঝখানের একচল্লিশ বছরে জমে গেছে অনেক আনন্দ বেদনার গল্প।
সংগৃহীত- ফেসবুক পেজ আসিফ আকবর