চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০২:১২ অপরাহ্ন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার
আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীতে আসে। তখনই জেলেরা এসব মা ইলিশ নিধনের উৎসবে মেতে উঠেন। যার জন্য ইলিশ ডিম ছাড়তে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণেই ইলিশ দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
সরকার এসব মা ইলিশ রক্ষায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ তৎপর হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল, পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমানসহ অন্যান্যরা জেলার ৬০ কিলোমিটার এলাকায় জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করেছের। যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
জেলেরাসহ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা ওয়াদা করেছেন এবার মা ইলিশ নিধন করবে না এবং করতেও দেবে না। জেলা প্রশাসকসহ সবাই মা ইলিশ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চেয়েছে। এদিকে এ কর্মসূচির সময় জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় লাখ লাখ জেলে মানবেতর দিন কাটানোর ভাবনায় হতাশ হয়েছেন। তারপরও এ কর্মসূচির বাস্তবায়ন যেন সফল হয় সেজন্য জেলেরা নৌকাগুলো ডাঙ্গায় তুলে জাল শুকিয়ে রাখছেন। এবার জেলেরাও মা ইলিশ না ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
তবে মা-ইলিশ রক্ষায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেল-জরিমানা ও দণ্ডের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল জানান, “এবার মা ইলিশ রক্ষায় জিরো টলারেন্স। নদীতেই যাতে মা ইলিশ নিধন না হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে র্যাব ও বিজেবি মোতায়েন করা হবে। আর কোস্টগার্ড ও পুলিশতো রয়েছে। এছাড়া যাদের কাছে মা ইলিশ পাওয়া যাবে, তাদেরকেও জেল-জরিমানার আওতায় আনা হবে। তিনি এ ব্যাপারে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন।”
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার জানান, “মা ইলিশ রক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। মা ইলিশ নিধনকারী ও বহনকারী সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি জাতীয় এ কর্মসূচি সফল করতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।”
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্র ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিছুর রহমান জানান, “গত বছর মাত্র ৩৬ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছিল। যে কারণে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন ইলিশ আহরিত হয়। এ বছর সঠিকভাবে ডিমওয়াল মা ইলিশ রক্ষা করা গেলে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন চার লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে। যার দাম হবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।”
এদিকে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, “নিষেধাজ্ঞার সময় এ বছর ১১ থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। এসময় জেলেদের ভিজিএফের মাধ্যমে চাল দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এখনো এর অনুমোদন পাইনি। যদি এ বছর নাও পাওয়া যায়, তবে আগামী বছর থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫