দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে।
বর্তমান বাজারে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ নেই বললেই চলে। তবে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দেশি পেঁয়াজের। বাজারগুলোতে বিক্রিও হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। তবে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের মধ্যে সরবরাহ এবং মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও অজানা কারণে পণ্যটির দাম হঠাৎ বাড়তির দিকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমবে না।
পাইকারি বাজারে, প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা করে। ঈদের আগেও প্রতি পাল্লা পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০ টাকা করে। সরকারি হিসেবে বর্তমানে বাজারে খুচরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ৩৫-৪৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাস ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পাশাপাশি এ বছর আলুরও ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু তারপরও আলু নিয়ে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এ সময়ে আলুর কেজি ১৫ টাকা হওয়ার কথা, কিন্তু এখন আলু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকায়, যা খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা (সরাসরি কৃষক থেকে কেনেন) বাজারে আলু ছাড়ছে না। বেশি লাভের আশায় কোল্ড স্টোরেজে প্রচুর পরিমাণে আলু মজুদ করছে। যে কারণে মৌসুমেও আলুর দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি হিসেবে, বর্তমানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজি প্রতি ৩২-৩৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ২২-২৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এদিকে অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আলু এবং পেঁয়াজের বাম্পার ফলনেও পণ্য দুইটির অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতারা এক প্রকার বিরক্ত। আর কারণ ছাড়া দাম বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শনিবার (৬ মে) রাজধানীর পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কারওয়ান বাজারে ঘুরে দাম বাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরকারি তথ্যমতে, আজকের বাজারে মোটা চাল, আমদানি পেঁয়াজ, দেশি রশুন, দেশি ও আমদানি করা আদা, জিরা, চিনি, ডিমের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে মাঝামারি সাইজের চাল, আমদানি করা রশুন, দেশি হলুদ, ব্রয়লার মুরগির মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা ইউসুফ বলেন, বর্তমানে আমরা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছি। রোজার ঈদের আগেও ৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। এমনকি সামনে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা কেজি হতে পারে। তবে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে এলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
তিনি বলেন, বস্তা প্রতি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বস্তায় ৮০ কেজির মতো পেঁয়াজ থাকে। গাড়ি ভাড়া বেশি রাখার কারণেও পেঁয়াজের দাম বেশি। প্রতি বস্তায় গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ১১০ টাকা করে। বস্তাপ্রতি লেবার খরচ দিতে হয় ২০ টাকা এবং আড়তদারি দিতে হয় ৬০ টাকা করে। আজকে ২১ বস্তা পেঁয়াজ আনতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয়েছে ২৩০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করা আড়তদার খলিলুর রহমান বলেন, বাজারে এখন যে সকল পেঁয়াজ আসছে তার বেশিরভাগই ফরিদপুর থেকে আসা। পাশাপাশি পাবনা এবং রাজশাহী থেকেও পেঁয়াজ আসছে। আমরা যেসব জায়গা থেকে পেঁয়াজ আনি তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, গেল বছর যে পরিমাণ ফলন হয়েছে সে তুলনায় এ বছর নাকি পেঁয়াজের ফলন কিছুটা কম।
আলুর আড়তদার জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে মুন্সিগঞ্জের আলু প্রতি কেজি বিক্রি করছি ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। বগুড়ার আলু বিক্রি করছি ২৭ টাকা কেজি। আর রাজশাহীর আলু বিক্রি করছে ২৮ টাকা কেজি। আলুর দাম সামনে আরও বাড়বে, কমার কোনো সম্ভাবনা নাই। সামনে পাইকারি পর্যায়ে আলুর কেজি ৩০ টাকার উপরে যাবে।
আলুর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে এই আড়তদার বলছেন, অনেক বড় ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমাণে আলু কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করে রাখছেন। তারা বাজারে আলু ছাড়ছেন না, এ কারণে আলুর দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে।
টাইমস ডেস্ক/ ৭ মে ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur