চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১০:৫৮ অপরাহ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে প্রতারকচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে, দেহ পসারিণী সেজে অথবা অন্য উপায়ে বাসায় এনে অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। এই অপরাধী চক্রের সাথে জড়িত কথিত সাংবাদিক, পুলিশের সোর্স ও এলাকার প্রভাবশালী মহল। এদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এসব চলে আসলেও যেন দেখার কেউ নেই। এমনটিই অভিযোগ করলেন বিভিন্ন এলাকার জণগণ।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, সাভারের মজিদপুর চুঙ্গিরপার এলাকার একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছেন স্বপ্না নামে এক দেহ ব্যবসায়ী। তিনি তার ফ্লাটে একাধিক কিশোরী ও যুবতীদের রেখে দেহ ব্যবসা করানোর পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসা করেন। স্বপ্না নিজেও ইয়াবা আসক্ত। এলাকার একশ্রেণীর ক্ষমতাশালী লোকজনের সহায়তায় তিনি বছরের পর বছর নারী ও মাদক ব্যবসা করে আসছেন। বর্তমানে ফাঁদে ফেলে টাকা উপার্জ্জন করা সহজ বলে এ উপায়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা। তার বাসায় সোনালী, পাখি, পারভীনসহ ছদ্মনামের অনেক মেয়ে রয়েছে।
স্বপ্নার বাসায় থাকা সোনালী নামে এক পতিতা ও প্রতারক এ প্রতিবেদকের কাছে জানান, রং নাম্বারে সেল ফোনে কথা বলা, খদ্দের সেজে কেনা কাটা করতে গিয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে পুরুষদের সাথে সম্পর্ক করে বাসায় এনে প্রথমে দেহবিনিময় করা হয়। এভাবে বিশ্বস্ত হয়ে উঠলে সুযোগ বুঝে হানা দেয়া হয় দেহ ভোগের মুহূর্তে। এ সময় ৪-৫ জন ছেলে রংবাজ এসে খদ্দেরকে মারধোর করে উলঙ্গ ছবি তুলে নেয়।
এরপর বেঁধে ফেলে রাখে ঘরের ভেতর। মান-সম্মানের ভয়ে খদ্দের দ্রুত বিকাশে টাকা এনে চাহিদা মেটায় প্রতারক চক্রের। পরবর্তীতেে খদ্দেররা থানায় অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারে না। কারণ তার উলঙ্গ ছবি সংরক্ষণে থাকে। বাড়াবাড়ি করলে এসব উলঙ্গ ছবি প্রকাশ করার হুমকি দেয়া হয়।
সোনালী আরো জানায়, স্বপ্না তাদের দিন দিন ইয়াবা আসক্ত করে ফেলেছে। এখন ইয়াবার টাকার জন্যও অপরাধ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি সে এ ধরনের প্রতারণা করতে গিয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানায় ধরা পড়ে বলেও জানায়।
সাভারের আঙ্গিনা এলাকায় জয়নাল নামে এক নারী ব্যবসায়ী এক সুন্দরী রমনীকে স্ত্রী বানিয়ে ভাড়া নেয় মমতাজ বেগমের বাসা। সেখানে পাতানো স্ত্রীসহ বিভিন্ন মেয়ে দিয়ে শুরু করে দেহ ব্যবসা। বিষয়টি বাড়ির মালিক বুঝতে পেরে তাকে বাসা ছেরে চলে যেতে বলেন।
জয়নাল জানায়, সে কথিত পুলিশ, পুলিশের সোর্স ও কথিত সাংবাদিকদের মাসোহারা দিয়ে নারী ব্যবসা করে আসছে। যে কারণে তার কোন ভয় নেই। এমনভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকবার ধরা পরলেও এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় গিয়ে আবার ব্যবসা শুরু হয়।
বাড়ির মালিক মমতাজ বেগম জানান, জয়নালের দেহ ব্যবসার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।
একই এলাকায় বন্যা, আসমা, পলিসহ অনেক অভিজাত পতিতারা শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। প্রকাশ্যে এদের দেহ ব্যবসার কথা সবাই জানলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে মিথ্যে মামলার শিকার হচ্ছেন। এমনি অভিযোগ রয়েছে অনেকের।
ছায়াবিথী এলাকার বাড়ির মালিক বাবু জানান, তার বাড়ির একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে আঁখি নামেে এক মহিলা বসবাস শুরু করেন। একরাতে চিৎকারের শব্দ পেয়ে নিচে নেমে দেখা যায় অনেক লোকের সমাগম। তখন তিনি জানতে পারেন, তার ফ্লাটে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। রাতেই বিষয়টি মিমাংসা করে ভাড়াটিয়াকে অন্যত্র চলে যেতে বলেন তিনি।
তিনি আরো জানান, স্বর্ণের অলংকার বানিয়ে তার টাকা পরিশোধের জন্য বাবুল নামে ঐ ছেলেকে ফাঁদে ফেলে বাসায় আনা হয়। এরপর ৫-৬ জন ছেলে মিলে তাকে আটকে উলঙ্গ ছবি তুলে ফাঁদে ফেললে ছেলেটি মুক্তিপণ দিয়ে বাইরে আসার পর বিষয়টি জানাজানিা হয়। ভাড়াটিয়াকে না করে দিয়েও অব্যাহত হুমকির মুখে পড়েছেন তিনি। মিথ্যে মামলা ও হামলার ভয়ে বাবু সাভার মডেল থানা পুলিশের কাছেও গিয়েছেন।
সাভারের কামাল গাজী জানান, পাশের বাড়িতে জোরে ন বাজতে থাকে। এরই মধ্যদিয়ে চিৎকারের শব্দ পেয়ে আবিষ্কার হয় অপহৃত এক চাকুরীজীবি। তাকে যারা অপহরন করেছিল, তারা দৌরে পালিয়ে যায়। একজনকে ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলে দেখা যায় ফ্লাটে ৩ জন যুবতী। ঘটনার মিমাংসায় তিনি জানতে পারেন, ছেলেটিকে মেয়েদের লোভ দেখিয়ে বাসায় এনে আটকে তার ব্যাংকের এটিএম কার্ড, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা লুট করা হয়।
কথিত র্যাব ও পুলিশের সোর্স রফিক জানায়, সাভার পৌর এলাকায় অনেক বাসা আছে যেখানে দেহ ব্যবসা চলে। এদের বিভিন্ন আপদে-বিপদে তিনি তাদের উপকারে আসেন। কোন ঝামেলা হলেই তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে র্যাব বা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করার কথা তিনি স্বীকার করেন। তার ডাকে র্যাব চলে আসে বলেও তিনি জানান।
কথিত সাংবাদিক ও অপহরনকারী চক্রের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাসে ২ টি কেস হলেই যথেষ্ট। সর্বনিন্ম ৫০ হাজারের নিচে ছার নেই। তবে, আমাদের সাথে যারা থাকেন সবাইকে ভাগ বাটোয়ারা দিতে হয়। পুলিশও জানে। কিন্তু আপনি বিচার দিলে তারা কিছুই করবেনা।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur