রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ১০ বছরের এক শিশু গৃহকর্মী শুক্রবার নিজের শরীরে আগুন দিয়েছে। এতে শিশুটির শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
জবা নামের ওই শিশুটি জানিয়েছে, বাড়ির দুই নারী তাকে শারীরিক নির্যাতন করায় সে নিজের শরীরে আগুন দিয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জবার বাসার গৃহকর্তাসহ কয়েকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে শিশুটি।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, জবার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে হাসপাতালে ভর্তির পর গৃহকর্তা মেহেদী হাসান কল্লোল জানান, জবা নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তবে কেন সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এর জবাব জানতে কথা হয় জবার সঙ্গে। আগুন দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জবা বলে, ‘ওরা মারে।’ কে মারে? জবাবে জবা বলে, ‘সিনথিয়া আর পলি।’
সিনথিয়া আর পলি মারে-এ জন্য আগুন দিয়েছ? জবাবে জবা ‘হ্যাঁ’ বলে।
সিনথিয়া কে জানতে চাইলে জবা যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এরপর আর তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক জানান, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৃহকর্তা কল্লোলসহ কয়েকজন জবাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে শিশুটিকে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে নেওয়া হয়।
জবা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার আটপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে বলে জানিয়েছেন এসআই।
এদিকে জবার আগুনে দগ্ধ হওয়ার বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, সিদ্ধেশ্বরীর ৫/এ অবসর অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কল্লোলের বাসায় কাজ করে জবা। ওই বাসায় আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি নিয়ে আজ বিকেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন গৃহকর্তা কল্লোল।
গৃহকর্তা কল্লোল ও তাঁর স্ত্রী পলি দাবি করেন, তিন বছর আগে তাঁদের বাসায় কাজ করতে আসে জবা। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে জানতে পেরে সে সময়ই জবাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসেন কল্লোল। পরে জবার স্বজনদের অনুরোধে ছয় মাস আগে কল্লোল তাকে আবার বাসায় কাজে নেন।
তবে জবা কীভাবে গায়ে আগুন দিল তা বলতে পারেন না বলে দাবি করেছেন কল্লোল।
তবে হাসপাতালের চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢামেকে নেওয়ার পর জবা ‘পানি পানি’ বলে আকুতি জানাতে থাকে। একপর্যায়ে শিশুটি বলে, ‘আমি বাঁচতে চাই না’।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু জবা। বীভৎসতার কারণে ছবি ও ভিডিও ঝাপসা করে দেওয়া হলো।
- এনটিভি অনলাইনের সৌজন্যে
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:০১ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৬, শনিবার
এমআরআর