বর্তমানে সারাদেশে ধান গাছ সর্বোচ্চ কুশি ও ঘোড় অবস্থায় রয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও পরবর্তী অবস্থায় তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা ও গান্ধি পোকার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। সেজন্য চাষিদের ধানের পোকামাকড় দমনে করণীয় জানিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।
ধানের জমিতে নিয়মিত পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মাজরা পোকা: মাজরা পোকার কীড়া ধান গাছের ক্ষতি করে। এ পোকার হাত থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলুন। ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পোকা থেকো পাখির সাহায্যে পোকার সংখ্যা কমানো যায়।
সন্ধ্যার সময় আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ আকৃষ্ট করে মেরে ফেলুন। ক্ষেতে মরা ডিগ শতকরা ১০-১৫ ভাগ অথবা মরা শীষ শতকরা ৫ ভাগ পাওয়া গেলে নিম্নলিখিত তালিকার যেকোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-মাইনেকটো এক্সট্রা ৪০এসসি, ভায়েগো ২০ এসসি, ভায়েগো সুপার্ব ১ জিআর, বেল্টএক্সপার্ট ৪৮এসপি, বাতির ১৫ এসপি, সানটাপ ৫০ এসপি, ডার্সবান ২০ ইসি, মার্শাল ২০ ইসি, ভির্তাকো ৪০ ডব্লিউজি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
বাদামি গাছফড়িং: বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছ ফড়িং উভয়ই ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। এ পোকার হাত থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য-আলোক ফাঁদ ব্যবহার করুন। জমিতে পোকা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন।
উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন। পোকার আক্রমণ অর্থনৈতিক ক্ষতির দ্বার প্রান্তে পৌঁছলে অর্থাৎ চারটি ডিমওয়ালা পেট মোটা পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা বা ১০ টি বাচ্চা গাছফড়িং বা উভয়ই দেখা গেলে নিম্নের যেকোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-বায়ো-চমক, রাস ৪৫ এসসি, নিমাজল ১.২ ইসি, প্রিনাম ৫০ ডব্লিউজি, একতারা ২৫ ডব্লিউজি, মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি, এডমায়ার ২০ এসএল, সানমেক্টিন ১.৮ ইসি, এসাটাফ ৭৫ এসপি, প্লাটিনাম ২০ এসপি, মার্শাল ২০ ইসি, সানটাপ ৫০ এসপি সঠিক মাত্রায় গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করুন।
পাতামোড়ানো পোকাঃ ডিম থেকে ফোটার পর কীড়াগুলো মুখের লালা দিয়ে পাতাকে লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে নলাকার করে ফেলে এবং মোড়ানো পাতার মধ্যে থেকে পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।
এ পোকার হাত থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্যও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করুন। জমিতে পার্চিং করুন। ইউরিয়া সারের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করুন।
জমিতে শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিম্নের যেকোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- সাকসেস ২.৫ এসসি, এনট্রাস্ট ৪৫ এসসি, সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি, ডার্সবান ২০ ইসি, মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
গান্ধি পোকা: গান্ধি পোকা ধানের দানা আক্রমণ করে। বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয়ই ধান গাছের দানা থেকে রস শুষে খায়। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন ক্ষতি করলে ধান চিটা হয়ে যায়।
এ পোকার হাত থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার পাশাপাশি গড়ে প্রতি ২-৩টি গোছায় একটি গান্ধি পোকা দেখা গেলে নিম্নের যেকোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-ডার্সবান ২০ ইসি, মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি, সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি, ফাইফানন ৫৭ ইসি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
কীটনাশক বিকেল বেলায় প্রয়োগ করতে হবে এবং বৃষ্টির সময় কীটনাশক প্রয়োগে বিরত থাকুন।
টাইমস ডেস্ক/ ২১ মার্চ ২০২৩