চাঁদপুরে ইপসার উদ্যোগে ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগীতায় বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-৩০ বাস্তবায়নে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৫ মার্চ বুধবার দুপুরে চাঁদপুর রোটারি ক্লাব মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় চাঁদপুরের সিভিল সোসাইটি সংগঠন, ইমাম, কাজী, আইনজীবী, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং যুব ও কিশোর-কিশোরী নেটওয়ার্ক সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বশির আহমেদ। তিনি বলেন, নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নারীকে মানুষের চোখে দেখতে হবে। নারী অবশ্যই একজন মানুষ, নারীর জন্য আলাদা কোন কাজ নেই। নারী-পুরুষ উভয়ে সকল কাজ করতে পারে। শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেয়া নারীর আলাদা একটি কাজ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ পুরুষরা মনে করেন, রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিস্কার করা এমনকি সন্তানের যত্ন নেয়া কেবলমাত্র স্ত্রী’র কাজ। সে স্ত্রী চাকুরীজীবী হোক কিংবা অসুস্থ্য হোক। এই চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতো হবে।
তিনি আরো বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধে আমাদের চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আপনি আপনার ছেলেকে ১৫ বছরে বিয়ে করাচ্ছেন না, অথচ ১৫ বছরের মেয়েটাকে বিয়ে দিচ্ছেন বা বৌ-করে আনছেন। আপনার ধারণা ১৫ বছরের একটা ছেলে বিয়ের উপযুক্ত নয়, কিন্তু একই বয়সের মেয়েটাকে ঠিকই বিয়ের উপযুক্ত মনে করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। যে মেয়েটা আপনার ঘরের বৌ, সে মেয়েটা অন্য কারো সন্তান। এটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ইপসার চাঁদপুর জেলা সমন্বয়কারী গোলাম ছরওয়ার। মহিলা বিষয়ক অধিপদপ্তর চাঁদপুর সদর উপজেলা জেন্ডার প্রমোটর খায়রুল আলমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ, আত্মনিবেদিতা মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আলাদা আলাদা টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, নোটারি পাবলিক অ্যাড. ফরিদা ইয়াসমিন আলো,জেলা কাজী সমিতির সভাপতি ফজলুল করিম পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সুফিয়ান, চাঁদপুর ব্যাপিস্টিস চার্চের সম্পাদক রসি বর্মণ, সাংবাদিক ও লেখক আশিক বিন রহিম, ইমামদের পক্ষে মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সিমা ইসলাম হ্যাপী প্রমুখ।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিয়ে বিরোধে সবার আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। বর্তমানে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বিল্য বিয়ে হয়। এটি বন্ধ করতে হবে। কারন। স্থানীয়ভাবে বাল্যবিয়ে বন্ধ হলেও নোটারীর মাধ্যে বিয়ে পড়ানো হয়। অথচ নোটারির মাধ্যমে বিয়ে আইনসম্মত নয়। তাছাড়া অনেক অভিভাক প্রবাসী ছেলে পেলে মেয়েকে বিয়ে দিতে অনিয়মের আশ্রয় নেন। চাছাড়া এই কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে বাল্যবিবাহ কমে আসবে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৫ মার্চ ২০২৩