চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে পিকনিকে এসে পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া নারায়নগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা (১৬) লাশ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার দুই দিন পেরুলেও একমাত্র ছেলের লাশ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বাবা সুধাংশ সাহা। গত দু’দিন ধরে নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহার বাবা সুধাংশ সাহা ও তার মা সুদিষ্ণা সাহ তাদের সন্তানের খুজে এখনো মোহনপুর পর্যটন মেঘনা পাড়ে অবস্থা করছেন। আশায় বুক বেঁধে আছেন, কখন তাঁর ছেলের সন্ধান পাওয়া যাবে । দুই দিনেও তার সন্ধান না পাওয়ায় আহাজারি চলছে পরিবারের। শেষ বারের মতো একমাত্র ছেলের মুখ আমি দেখতে পাবো এই বলে তার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তার বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করেন। তারা এক ভাই ও এক বোন। নিখোঁজ সুস্মিত সাহার বাড়ি ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর গ্রামে। তবে তারা নারায়নগঞ্জে বসবাস করতেন।
আরও পড়ুন… মতলবে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে নদীতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ১
ঘটনার পর থেকে গতকাল ৪-৫ ঘন্টা এবং আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত উপজেলার মোহনপুর নৌ পুলিশ স্টেশন ও চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৮-১০ সদস্য দুটি ডুবুরি দলের প্রাণপণ চেষ্টার পরও নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ সাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নারায়নগঞ্জের ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রায় ৭৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এমভি প্রিন্স কামাল-১ নামে লঞ্চযোগে দুপুর ১২টার দিকে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে এসে পৌছে।
দুপুর ১টার সময় সে তিন সহপাঠীদের সাথে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র নদীতে গোসল করতে নামলে তারা তলিয়ে যেতে থাকলে পাশে থাকা উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীর বাবা সাথে থাকায় তাকে উদ্ধার করতে পারলেও শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬)কে আশঙ্কজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ গতকাল রাত ৯টার সময় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নদীতে ডুব দিতে যাওয়া অপর শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা (১৬)কে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে সে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় পার হলেও এখনও সন্ধাান বা ডুবে গিয়ে মৃত্যু হলে তার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি ডুবরি দল। তবে পলাশ নামে ডুবরি দলের এক সদস্য জানিে ছে পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা পাড় গভীরতা ও স্রোত বেশি হওয়ায় তারা এখনও সন্ধান করতে পারছেন না। স্রোত বেশি থাকায় নিরাপদ বেষ্টনি না থাকায় লাশটি হয়তোবা অন্যত্র যাওয়ার ধারণা করছেন।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ সাহিদুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ২৩ ফ্রেবুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নারায়নগঞ্জ থেকে লঞ্চযোগে ক্যামব্রিয়ান স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে আসেন। এখানে তিন শিক্ষার্থী নদীতে গোসল করতে নামলে একজনকে তার স্বজনরা সাথে জীবিত উদ্ধার করে। আরেক শিক্ষার্থী শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬) আরেক জনকে আশঙ্কজনক অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু একই সাথে ডুবে যাওয়া শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা (১৬)কে নিখোঁজ ছিলেন।
গতকাল বিকেল থেকে আজ শুক্রবার দুইটা পর্যন্ত মোহনপুর নৌ পুলিশ স্টেশন ও চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৮-১০ সদস্য দুটি ডুবুরি দলের প্রাণপণ চেষ্টার পরও নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া ২৪ ঘন্টা পর এমনিতেই লাশ উপরে ভেসে উঠার কথা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) পর্যন্ত তার লাশের সন্ধান মেলেনি।
এদিকে নিখোঁজ ডুবে যাওয়া শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহার বাবা সুধাংশ সাহা ও তার স্ত্রী সুদিষ্ণা সাহা তাদের একমাত্র সন্তানের সন্ধান চান। তারা জানান,সহপাঠিদের সাথে তাদের সন্ধান নদীতে গোসল করতে নেমেছেন। এটি নিশ্চিত। তবে তারা যেভাবেই হউক তাদের সন্তানের লাশটা অন্যন্ত পক্ষে চান। এ ব্যাপারের প্রশাসন ও ডুবরি দলের সহযোগিতা কামনা করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও মোহনপুর পর্যটনে শিক্ষা সফরে এসে গোসল করতে নেমে কয়েক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতবছর অক্টোবর মাসে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও ঢাকা ডেমরা থেকে পরিবারের সাথে ঘুরতে আসা এক শিশু একই স্থানে ডুবে মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদক: কামাল হোসেন খান, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩