‘চীনা অ্যাপে’ সিনেমার টিকিট কিনলেই ডলার মিলবে, এমন আশ্বাসে ওই অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকায় হিসাব খুলে প্রতারিত হয়েছেন রাজশাহীতে কয়েক হাজার মানুষ। গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে ভুক্তভোগী সকলের হিসাব টাকাশূন্য হয়েছে।
এই কার্যক্রম পরিচালনায় নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায় একটি অফিসও খোলা হয়েছিল। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, ‘ই-মুভি’ নামের ওই ‘চীনা অ্যাপ’ ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে। নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকার সাড়ে তিন নম্বর গলিতে অজ্ঞাত ‘মানিক’ নামের এক ব্যক্তি ওই অ্যাপের প্রচার শুরু করেন। সেখানে ওই অ্যাপের নামে একটি অফিসও খোলা হয়। প্রচারণা ছিল, ওই অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকার একটি হিসাব খুলতে হবে। ওই টাকায় বিভিন্ন দেশের সিনেমার টিকিট কিনলেই সঙ্গে সঙ্গে হিসাবে মুনাফা হিসেবে ডলার যোগ হয়েছে। তবে টিকিট কেনার জন্য টাকাকে ডলারে পরিণত করতে হয়েছে।
বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠালেই তা ডলার হয়ে ব্যবহারকারীর হিসাব নম্বরে দেখা গেছে। তবে যিনি যত বেশি টাকা দিয়ে হিসাব খুলবেন তার মুনাফা ততো বেশি, এমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এছাড়া অন্যজনের হিসাব খুলে দিলে নিজের হিসাবে ডলার যোগ হতো।
গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রাম পর্যন্ত এই অ্যাপ যুবসমাজে ঝড় তুলেছিল। কোনো কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য ভুক্তভোগীরা বেশি টাকার হিসাব খুলে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিলেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, গ্রামের কেউ নিজের মোটরসাইকেল, কেউ গবাদিপশু, কেউ জমি বিক্রি করে ওই অ্যাপে হিসাব খোলেন। প্রথম দিকে যারা হিসাব খুলেছেন, তাদের অনেকেই জমা টাকা নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। এই কারবারে জড়িত মানিকের অফিস থেকে ভুক্তভোগীদের কয়েক দিন আগে জানানো হয়, রাজশাহী শহরে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরীর শিরোইল কলোনীর এলাকার ওই অফিসের দরজায় তালা ঝুলতে দেখেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী নগরীর উপশহর এলাকার যুবক হিমেল জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে মানিক নামের ওই ব্যক্তি তাকে দিয়ে ১২ হাজার টাকায় একটি হিসাব খোলায়। তার হিসাবে ডলার এসেছিল। মানিক বলেছিল, ১২ ফেব্রুয়ারি টাকা তোলা যাবে। কিন্তু পরের দিনই সবার হিসাব শূন্য। এরপর ‘মু জি লি’ নামের একজন সকলের মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে বলেছে ‘যার যত টাকা জমা হয়েছিল, তার ৩০ শতাংশ টাকা আবার জমা দিলে মুনাফাসহ হিসাব থেকে ফের টাকা তোলা যাবে।
হিমেল বলেন, এই বার্তা আসার পর তারা সবাই প্রতারণাটা বুঝতে পেরেছেন।
একই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী ফাহিম জানান, তার দু’টি হিসাবের একটিতে ১১১ এবং অপরটিতে ৯৫ ডলার জমা হয়েছিল। সোমবার থেকে হিসাব শূন্য। মানিককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মোবাইলও বন্ধ। কেউ জানেন না মানিকের বাড়ি কোথায়।
বার্তা কক্ষ, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩