দেশে তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আর পঙ্গুত্ববরণ করে আরো কয়েক লাখ মানুষ। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা আয়োজিত ‘ টেকসই উন্নয়নে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে সংশোধনীর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
বৈঠকে অর্থনীতিবিদ ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন,‘ তামাক কোম্পানিতে সরকারের যে মালিকানা আছে সেটা ছেড়ে দিতে হবে ।’
আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড.মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ,স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা.নিজাম উদ্দিন আহমেদ,আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থাপনায় বলা হয়, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতা এসডিজি’ র তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা- সুস্বাস্থ্য অর্জনের একটি বড় বাধা। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর মাসিক খরচের ৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারে এবং ১০ % তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়।
তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্য ব্যয় সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবমিলিয়ে তামাক ব্যবহারে দরিদ্র মানুষ, আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। যা এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা-১ অর্জনে বড় বাধা। তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমি এবং উৎপাদিত তামাক পাতার পরিমাণ- এই দুই বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৪তম ও ১২তম।
উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান তামাকচাষের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি (লক্ষ্যমাত্রা-২) ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। লিঙ্গ সমতা (লক্ষ্যমাত্রা-৫) টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলেও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার না করেও, পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হচ্ছে বিপুল সংখ্যক নারী।
এছাড়াও তামাকচুল্লিতে পাতা পোড়াতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে দেশের ৩০ শতাংশ বন। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের (লক্ষ্যমাত্রা ১৩) ঝুঁকি ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ সিগারেটের অবশিষ্টাংশসহ গুল ও জর্দার কৌটা প্রতিবছর জমা হচ্ছে সমুদ্র তলদেশে (লক্ষ্যমাত্রা ১৪)।
সুতরাং তামাক চাষ, তামাকজাতপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আমি ধন্যবাদ জানাই। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো যেন শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে।
কোম্পানিগুলোর লম্বা হাত যেন সেখানে না ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, তামাক কোম্পানিতে সরকারের যে মালিকানা আছে সেটা ছেড়ে দিতে হবে। যারা নীতিনির্ধারণ করেন তারা যেন রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে তামাকের কারণে স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হয় সেই দিকটা দেখেন।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন,‘ আমাদের তরুণদেরকে বোঝাতে হবে ধুমপান ছেড়ে দিলে তারা ভালো থাকবে। হার্টের অসুখ,ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যাবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমি মনে করি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি এরকম কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সিটিএফকে-বাংলাদেশ-এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘ তামাক কোম্পানিগুলোর জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির বিপরীতে কোনো যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নেই। তাই তারা আইন সংশোধন ঠেকাতে মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাওয়া,সরকার রাজস্ব হারানো ইত্যাদি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ।’
৫ জোনুয়ারি ২০২৩
এজি