বিশ্বে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমলেও মাছের বাইপ্রোডাক্ট খাতে রপ্তানি তুলনামূলক বেড়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পাঙাশের পোনা রপ্তানিতে সম্ভাবনা বেড়েছে কয়েকগুণ। গত বছর পরীক্ষামূলক ১ লাখ পোনা ভারতে পাঠানো হলেও এবার সেখান থেকে ১১০ কোটি পোনার চাহিদা পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া সফট সেলের কাঁকড়া, জীবন্ত কাঁকড়া, চিংড়ির খোসা ও মাছের আঁশ রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন রপ্তানিকারকরা।
জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ৪ হাজার মেট্রিক টন। ইউরোপীয় দেশগুলোতে চাহিদা কম থাকায় চিংড়ির রপ্তানি কমছে। তবে রপ্তানির ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে অপ্রচলিত মৎস্য খাতে সম্ভাবনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট যশোরের বাগআঁচড়ার মেসার্স জনতা ফিশ পরীক্ষামূলক ১ লাখ পাঙাশের পোনা ভারতে রপ্তানি করে। ৩৩.৪ কেজি ওজনের ওই পোনার মূল্য ছিল মাত্র ৩৩৪ ইউএস ডলার। কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে ভারতের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পিআর ফুডস নতুন করে ১১০ কোটি পোনার চাহিদা দিয়েছে।
যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩৬ লাখ ইউএস ডলার। পাঙাশের পোনা আমদানির সময় বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। মাছে জেনেটিক টেস্ট, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া টেস্ট করা হয়। সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পোনার রপ্তানি বেড়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন,ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব কম থাকায় পাঙাশের পোনা রপ্তানির পর সেখানে পোনার মৃত্যুহার অনেক কম। খুলনা অঞ্চল থেকে পাবদা ও গুলশা পোনাও ভারতের পশ্চিমবাংলায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া করোনার কারণে জীবন্ত কাঁকড়ার রপ্তানি বন্ধ থাকলেও তা নতুন করে চালু হয়েছে। বাগদা ও গলদা চিংড়ির হেড (মাথার খোলস) চীনে রপ্তানি হচ্ছে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস খুলনার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চল থেকে সফট সেল কাঁকড়া রপ্তানি বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে খুলনা অঞ্চল থেকে সফট সেল কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ৩৩৩ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ লাখ ইউএস ডলার। একই সময় চিংড়ির খোসা ও মাছের আঁশ রপ্তানি হয়েছে ৩৮৭ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য ৩ লাখ ৩০ হাজার ইউএস ডলার।
চিংড়ির খোসা ও মাছের আঁশ রপ্তানি হয় চায়না, হংকং,থাইল্যান্ডের বাজারে,সফট সেল কাঁকড়া যাচ্ছে সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে।
এদিকে হিমায়িত চিংড়ির চাহিদা না থাকায় রপ্তানিতে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে নিতে অপ্রচলিত মৎস্য খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর কথা বলছেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন,‘ ভারতের সঙ্গে দূরত্ব কম হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন মাছের পোনা সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। এতে পোনার মৃত্যুহার কম ও গুণগত মান ভালো থাকবে। পোনা রপ্তানিতে বিদেশের আস্থা অর্জন করা গেলে এ খাতেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ’
৪ জানুয়ারি ২০২৩
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur