বিএনপি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে- এমন অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে এ জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’
৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সমাবেশস্থলে যাব। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে সরকার দায়ী। তিনি নয়াপল্টন অফিস থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে সমাবেশ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন সারা দেশের সমাবেশগুলোতে কী পরিমাণ মানুষ সমবেত হয়েছিল। বাধা দেওয়ার পরেও অন্য ৯টি সমাবেশ হয়েছে। সেসব সমাবেশে মানুষের ঢল নেমেছে। ঢাকা গণসমাবেশেও মানুষের ঢল নামবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সংবিধানসম্মত শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের। অন্যথায় এর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশাসন যদি আমাদের অন্য কোনো প্রস্তাব দেন সেটি যদি আমাদের অনুকূলে হয় তাহলে আমরা ভেবে দেখব। তবে আমরা নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নয়াপল্টন থেকে অবিলম্বে পুলিশ হত্যার করতে হবে এবং সেখানে সমাবেশ করার পরিবেশ ও তৈরি করতে হবে। এর দায়িত্ব সরকারের।
তিনি বলেন, আমরা নয়াপল্টনের সমাবেশ করার কথা বলেছি। সরকারের কাছে বলেছি বিকল্প কোনো ভেন্যু থাকলে সেটা আমাদেরকে বলুন। সেটা যদি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে আমরা বিবেচনা করব।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকাল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সড়ক বন্ধ করে দলটির নেতাকর্মীদের জমায়েত হওয়ায় পুলিশ তাদের সরাতে গেলে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। সকাল থেকেই নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার একপাশ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে পালটাপালটি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
দুই পক্ষের পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষে মকবুল হোসেন নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক বিএনপি নেতাকর্মী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন এ সংঘর্ষ শুরু হলো। আজ সকাল থেকেই পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিড় করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পল্টন এলাকা। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
বিএনপি চায় তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে। কিন্তু পুলিশ বলছে, রাস্তায় সমাবেশ বা কোনো জমায়েত হওয়া যাবে না। পুলিশ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না বলে অনড় রয়েছে। এরপর আরামবাগের আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তায় সমাবেশের জন্য বিএনপি অনুমতি চাইলে পুলিশে তাতে সাড়া দেয়নি। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইতজেমার ময়দান অথবা পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে বিএনপি চাইলে সমাবেশ করতে পারে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে পুলিশের কোনো আপত্তি নেই বলেও গতকাল (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
বার্তা কক্ষ, ৮ ডিসেম্বর ২০২২