ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দায়িত্ব নিয়েই এমন বার্তা দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আবদুুর রউফ তালুকদার।
সাম্প্র্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে পরিদর্শন প্রায় বন্ধ ছিল। তবে গভর্নর এসে প্রথম দিনই জানান দিলেন,ব্যাংক পরিদর্শন বড় পরিবর্তন আসছে।
মঙ্গলবার ১২ জুলাই সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান,একেএম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো.সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২তম গভর্নর হিসাবে মঙ্গলবার সকালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আবদুর রউফ তালুকদার। নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন।
আগামি চার বছরের জন্য গভর্নরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এদিন সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে তিনি নতুন কর্মস্থলে পৌঁছান। এ সময় ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রিয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি গ্র“পের কাছে একাধিক ব্যাংক চলে গেছে। নানা অনিয়মও হচ্ছে।
বেশকিছু ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নড়বড়ে অবস্থায় আছে এসব বিষয়ে উলেখযোগ্য পরিদর্শনও হচ্ছে না এ বিষয়ে নতুন গভর্নরের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘আজকে আমি জয়েন্ট করে ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান,নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। পরিদর্শন বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চাই। তা শিগগিরই দেখতে পাবেন।’
কোন কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেবেন-জানতে চাইলে নতুন গভর্নর বলেন, আমাদের প্রধান কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এটাই এখন বেশি গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয় কাজ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। এজন্য আমদানি-রপ্তানি যে ব্যবধানটা আছে তা কীভাবে কমিয়ে এনে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে চেষ্টা করব। তৃতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করব।
এক সময় রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। মহামারি করোনা ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে তা এখন নিচে নেমে এসেছে। রিজার্ভকে একটা সন্তোষজনক অবস্থায় নিয়ে যাব, যা দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা যাবে।
এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অর্থাৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে। তিনি জানান, বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে, দু-একটি ছাড়া। এগুলো সংস্কার করব। এর বাইরে খেলাপি ঋণ একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায় নিয়ে আসা ও মূলধন ঘাটতি সমস্যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার চেষ্টা করব। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। তা কীভাবে আবার ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করব। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না,সপ্রবৃদ্ধিও হবে না। তা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেব। বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে কোন ধরনের চাপ অনুভব করছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন গভর্নর বলেন, ‘সরকারে থাকা অবস্থায় অনেক চাপে ছিলাম। করোনার মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাব না। আর কোন সময় কী সিদ্ধান্ত নিতে হয় এটা আমরা ভালো করেই জানি।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে চাচ্ছে-এ বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে,জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আইএমএফের শর্তের বিষয়টি সরকার দেখবে।’
আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসেছি। এখন সরকারে নেই। সরকারের বিষয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আর কেন্দ্রিয় ব্যাংক কী করবে তা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কেমন কেন্দ্রিয় ব্যাংক দেখতে চান এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমি কেন্দ্রিয় ব্যাংককে বুদ্ধিবৃত্তিক,পেশাদারিত্ব ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে দেখতে চাই।’
১৩ জুলাই ২০২২
এজি