Home / চাঁদপুর / মেঘনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম : বাড়ছে জনদুর্ভোগ ও শঙ্কা
মেঘনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম : বাড়ছে জনদুর্ভোগ ও শঙ্কা
মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপরে। ছবি- মিজানুর রহমান রানা

মেঘনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম : বাড়ছে জনদুর্ভোগ ও শঙ্কা

দেলোয়ার হোসাইন | আপডেট: ০১:১৪ অপরাহ্ণ, ৩১ আগস্ট ২০১৫, সোমবার

মেঘনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাঁদপুরে নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মেঘনার পানি বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীতে রয়েছে তীব্র স্রোত, বেড়েছে ভাঙ্গন আশঙ্কা।

এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে। এরই মধ্যে শহরের নি¤œাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের নিত্যদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এক প্রকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে তাদের মাঝে।

গত শনিবার মেঘনায় জোয়ারের সময় বিপদসীমা ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সর্বোচ্চ পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৪.৩৪ সেন্টিমিটার। শুক্রবার পানির পরিমাণ ছিলো ৪.১৬ সেন্টিমিটার এবং এর আগের দিন বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৭ আগস্ট ৪.০০ সেন্টিমিটার।

গত চারদিন ধরেই চাঁদপুরের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পানি বৃদ্ধির ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন বীজতলা, শাক-সবজির জমি তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে বাড়ির উঠান এমনকি চাঁদপুর শহরের অনেক রাস্তা ডুবে গেছে। শহরের নিচু এলাকার মানুষজনকে পানি ভেঙ্গে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি নৌ-রুটে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। শরিয়তপুর ঘাটের র‌্যাম ডুবে যাওয়ায় ভাটার জন্যে অপেক্ষা ছাড়া ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করতে পারছে না।

ইতোমধ্যে মতলবের ফেরীঘাট ডুবে যাওয়ায় ফেরী চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

সরজমিনে দেখা যায়, মেঘনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকার পুরাণবাজারের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এছাড়া মধ্যে ইচলী, দক্ষিণ গুণরাজদী, ট্রাকরোড, গাজী সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, রঘুনাথপুর, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, মুখার্জিঘাট, বড়স্টেশন, ১০নং, ৫নং ও কয়লাঘাট এলাকায় রাস্তার উপর পানি উঠে গেছে। শহরের ড্রেনগুলো নদীর জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে রাস্তা এবং নিচু এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। অনেকেই আবার বন্যার আশঙ্কা করছে। এখন দেখার অপেক্ষা, মেঘনার পানি বৃদ্ধিতে তা বন্যায় রূপ নেয় কি-না।

মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক ভূঁইয়া জানান, “আমি এক জন নতুন মৎস্য ব্যবসায়ী। এবার ধান ক্ষেতে মাছ চাষ শুরু করেছি হঠাৎ এভাবে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আমার আশঙ্কা হচ্ছে। জাল দিয়েও রক্ষা করতে পারছি না।”

ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান, “বিকেল হলেই মুরগির ফার্মে জোয়ারের পানি উঠে; এতে করে আমার ফার্মের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে কোনো রকম রক্ষার চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকউল্লাহ জানান, মেঘনার পানি বিপদসীমার উপরে অতিক্রম করলেও বাঁধের আপাতত কোনো সমস্যার খবর তারা পাননি। বাঁধ ও নদীর ভাঙ্গন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন রোববার রাতে মুঠোফোনে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপ অনুযায়ী বিপদসীমা ৮.২৫ সেন্টিমিটার, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তা ছিল ৮.২৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের আসামে কিংবা আমাদের দেশের নদীঅঞ্চলে যেদিন বৃষ্টি বেশি হয়, সেদিন পানির চাপ বেশি থাকে। তবে আমরা এ মুহূর্তে বন্যার কোনো আশংকা করছি না।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রতি ৩ ঘণ্টা পরপর মেঘনা নদীর পানির উচ্চতার পরিমাপের তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।”

বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ইমরান খান জানান, র‌্যামের পরিধি হাই ওয়াটার লেভেলে যে পরিমাণ থাকার কথা শরিয়তপুর ঘাটে তা নেই। এ কারণে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটের র‌্যামটি জোয়ারের সময় নিমজ্জিত থাকছে। এ সমস্যার কারণে ফেরি চলাচলের ট্রিপ কমে গেছে এবং দু’পাড়ে আটকা পড়ছে অনেক গাড়ি।

 

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫