আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে : ‘একটাই পৃথিবী, প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন।’ বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপি রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে। ১৯৭২ সালের কনফারেন্স ৫ জুন নির্ধারিত হয়। এ কনফারেন্স এর পর ১৯৭৩ সালে চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। তখন থেকেই প্রতি বছর এ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
আমাদের সরকার জাতীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে -‘ যুদ্ধ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামি প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।’
প্রতিবছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয। প্রকৃতিগত কারণে উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন ও প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশনের ফলে দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এবং জলবায়ু। যার ফলাফল স্বরূপ সমুদ্র্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে দেশের বেশ ক’টা জেলা সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছুটা জায়গা,বাংলাদেশ,মালদ্বীপ আর শ্রীলংকাসহ পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশসমূহ।
পরিবেশ রক্ষায় তথা পৃথিবী রক্ষায় আজ প্রয়োজন সচেতন উদ্যোগ। আমাদের যার যত টুকু সাধ্য তত টুকু দিয়েই চেষ্টা করা দরকার পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য রাখা। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে-গাছপালা নিধন না করা,অন্যকে নিধনে নিরুৎসাহিত করা,নিজে বেশি করে গাছ লাগানো,অন্যকে গাছ লাগানোর উৎসাহিত করা,গাড়ির ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া বন্ধ রাখার চেষ্ঠা করা ও অন্যকে এ ব্যাপারে সচেতন করা,পাহাড় কাটা বন্ধ রাখা ও সবাইকে সচেতন করা, ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা ও বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে নিস্কাশিত না করা,বাসা-বাড়ির ফ্রিজটি সময়মত সার্ভিসিং করিয়ে নেয়া ।
পারিবারিকসহ দেশের প্রতিটি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,যখন তখন গাছ কাটা বন্ধ রাখা, বেসামাল স’মিল গুলি নিয়ন্ত্রণ রাখা,ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা,ইট ভাটার কালো ধোঁয়া নির্গমন বন্ধ রাখা,পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করা,কল কারখানায় যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখা,ওয়েল্ড্রিং,সাবান,রং, ট্রেনারি শিল্প কারখানা ও হাসপাতালের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ করতে না দেয়া ও প্রয়োজনীয ব্যবস্থা নেয়া, নদী,খাল,বিল পুকুর ও ডোবা পানি দূষণ মুক্ত রাখা ইত্যাদি।এসব কারণে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। দেশের নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে মৎস্য সম্পদ ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে। জলবায়ূ পরিবর্তন হয়ে মানুষের নানা রোগ বালাই দৃশ্যমান হচ্ছে।
আমাদের দেশ প্রকৃতির লীলাভূমি। যেকটি বন রযৈছে তম্মধ্যে সুন্দর বন একটি। সুন্দরবনসহ ৪০ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপন্ন,অতিবিপন্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বন বিনাশ, পিটিয়ে মারা,শিকার,বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত, পর্যাপ্ত খাবার ও প্রাকৃতিক বন্যা,মহামারি, দুর্যোগ,ঘূণিঝড় ও আশ্রয়ের অভাব ও আগুন লাগিয়ে বন উজাড় হওয়াতে এ সব প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।
পরিবেশবিদদের মতে,জীববৈচিত্র ধ্বংসের ক্ষেত্রে নদীর মূমুর্ষতাও একটি বড় কারণ। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া ও দূষণের মাধ্যমে এদেশের অসংখ্য নদী ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছে। ফারাক্কাই তো এর উদাহরণ । এক সময়ে বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো নদী ছিল। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাসহ আশ–পাশের নদ-নদীগুলির অবস্থা করুণ। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি চাঁদপুরের ষাট নল পর্যন্ত এসে গেছে ।
বুড়িগঙ্গার দুষিত ও দুর্গন্ধ্যময় পানি আজ এ মিঠা পানির সাথে মিশে দূষিত হয়ে যাচ্ছে । ফলে পৃথিবীর বিখ্যাত ইলিশ মাছ মেঘনা ছেড়ে পালাবে। এর সাথে অন্যান্য সু-স্বাদু মাছ ও প্রাণিজ সম্পদ হারাতে হবে। এর পানি কৃষি কাজে ব্যবহার অযোগ্য বলে বিবেচ্য হবে। অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিঠা পানি হচেছ মেঘনা নদীর পানি ।
এ দিকে ভারত যদি টিঁপাইমুখ বাঁধ বেঁধে ফেলে তাহলে মেঘনা নদীর অস্তিত আর থাকবে না । ইলিশ সহ সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে । কৃষি ও জীব বৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পতিত হবে । দখলজনিত কারণে দেশের ১৫৮টি নদী এখন রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ১৭টি নদী একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্তত: ৮টির অবস্থা এখন বিলুপ্তির পথে। সারা দেশে এখন মাত্র শ’খানেক নদী আছে যেগুলো দিয়ে নৌ-চলাচল করছে।
প্রাণিজ সম্পদ ও কৃষিপণ্য আমাদের স্বনির্ভতার প্রতীক। এ দেশের নদ-নদীতে প্রচুর মৎস্য সম্পদে ভরপুর। পাশাপাশি নদী বিধৌত ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বনও। কৃষির পাশাপাশি রয়েছে আমাদের গবাদি পশু,হাঁস-মুরগি,ছাগল, ভেড়া,মহিষ ও অন্যান্য প্রাণী । যা আমাদের জীবন ধারণের অন্যতম মাধ্যম।
পৃথিবীর বৃহত্তম ৩টি ম্যানগ্রোব এর মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি। এর আয়তন ১০ হাজার কি.মি.। আর বাংলাদেশের অংশে রয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কি.মি.। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বনে ২ শ’৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাস্থল। এবছর আমাদের পরিবেশ মন্ত্রাণালয় সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম মনে করে ৩ মাস এর ভেতর যাতায়ত বন্ধ ঘোষণা করেছে ।
এর আশ-পাশের লোনা পানিতে রযেছে হাঙ্গর, কুমির, ডলপিন ও ২শ’৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ সব প্রাণীকূল ও জীব বৈচিত্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। জলবায়ূর পরিবর্তন পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ওপর রিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশের দূষণ বাড়ছে । এছাড়াও বায়ু দূষণ,শব্দদূষণ,পানি দূষণ প্রভৃতি দূষণে জনজীবন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে ।
পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার,বাউন্ড টেবিল আলোচনা, পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম, পরিবেশ অধিদফতর সম্পর্কিত বুকলেটের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রণয়ন ও প্রকাশ, ইটিপিবিহীন ও কনফারেন্স ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। তখন থেকেই প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে,আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়ে আসছে।
প্রকৃতিগত কারণে উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়। প্লাস্টিক দ্রব্য বা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার দেশের পরিবেশের ওপর মারাত্নক প্রভার ফেলছে। পলিথিন পরিবেশগত ভারসাম্যকে দারুন ভাবে ব্যাহত করে চলছে। তাই প্লাস্টিক ও পলিথিন মুক্ত দেশ গড়তে জাতি,ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসা উচিৎ। বর্তমানে প্লাাস্টিক দ্রব্যর ব্যবহার শুরুর কারণে এর দূষণও বেড়ে গেছে ব্যাপক।
যতদূর জানা গেছে, ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ প্লাাস্টিক দ্রব্যর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে আমেরিকার জনৈক বিজ্ঞানী হালকা,পাতলা ও শক্ত নমনীয় এক ধরণের পলিথিন উদ্ভাবন করেন। সে থেকে ১৯৫৮ সালের সর্বপ্রথম আমেরিকায় উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু হয়।
অপর এক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে ফিলিপাইনের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড.সোকানো গবেষণা করে ক্যারোলিনা বা এক ধরণের টেট্রন উদ্ভাবন করেন। এর ওপর ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ৮০’র দশকে প্লাস্টিক ও পলিথিন দ্রব্য বাজারজাত শুরু হয়। সে থেকেই আমাদের দেশে এর প্রচলন দেদারছে অনুপ্রবেশ করে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন পণ্য কিনে প্লাস্টিক বা পলিথিনে করে তখন তারা নিয়ে আসতে শুরু করে । ১৯৮৩ সালের ঢাকায় সর্ব প্রথম পলিথিন উৎপাদন কারখানা স্থাপিত হয়।
ধীরে ধীরে ব্যাপক চাহিদা মেটাতে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ছোট বড় পলিথিন কারখানা স্থাপিত হয়। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও পলিথিন দেশের সর্বত্র পরিবেশের ওপর মারাত্নক হুমকি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্মুখীন হচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ।
প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ব্যাপকতা যে কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে-তা বলে শেষ করা যাবে না।এক কথায় দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার মাত্রারিক্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ছোট,বড়,শহর,বন্দর নগর হাট বাজার রেলস্টেশন,লঞ্চ স্টেশনের যে কোনো দোকানেই পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক দ্রব্য পাওয়া যায়। এখন গ্রামে,শহরে ,বন্দরে গৃহিণারা ব্যাপক হারে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে। এ প্লাস্টিক বা পলিথিন পচনশীল নয় বিধায় পরিবেশের ওপর মারাত্নক হুমকি। এটা সম্পূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তৈরি।
বিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন বা প্লাস্টিক ক্ষয় হয় না এবং অনেক বছর অক্ষত থাকে। ইহা মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দেয়া হলে মাটির মারাত্নক ক্ষতি করে,মাটিতে সূর্য রশ্মি পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটায়,ফসলের জমিতে উৎপাদন ব্যহত করে,আগুনে পুড়লে জনস্বাস্থ্যের মারাত্নক ক্ষতি করে,শহর নগর ,বন্দরের সকল প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার মারাত্নক বিঘ্ন সৃষ্টি করে,নালা নর্দমা বন্ধ করে মারাত্নক দুর্গন্ধ বাড়ায় বিধায় জনস্বাস্থ্যের মারাত্নক ক্ষতিকর,শহর বা গ্রামের গৃহিণী তাদের আর্বজনা ও শিশুদের মলমূত্র পলিথিন বা ভাঙ্গাচুড়া প্লাস্টিক পাত্র ভরে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়। পশু পাখিরা তা’পা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরিবেশ দূষণ বাড়ায়।
অপর দিকে এর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দেশের সোনালী আঁশ পাটের সকল প্রকার দ্রব্য সামগ্রীর শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে বেকার সমস্যা বাড়াচ্ছে ও এসব শিল্প দ্রব্যের বিলুপ্ত ঘটিয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশেই পলিথিন বা প্লাস্টিক দ্রব্য ও ব্যাগের উৎপাদন,ব্যবহার ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত পচনশীল ও ধ্বংস হয় এমন ব্যাগ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিকল্প দ্রব্য হিসেবে উৎপাদন করছে। যাহার কোনোই নেতিবাচক প্রভাব নেই।
প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ যেমন পরিবেশ ক্ষতি করছে তেমনি দেশের চলমান অর্থনৈতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উহা সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বাজার পড়ে গেছে। বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ঐসব উৎপাদনে নিয়োজিত মাত্র কয়েক হাজার লোক দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি করে চলছে। যার ফলে ১৯৯৪ সালে পলি বা প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন,আমদানি ,ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের হুমকির ভয়ে তা আর কার্যকরি করা সম্ভব হয় নি।পরবর্তীতে সরকার দেশের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এর সকল প্রকার ব্যবহার,উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১ জানুয়ারি ২০০২। ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারা দেশে এর কার্যক্রম অব্যহত থাকে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ছিলো।
বর্তমান সরকার এরইমধ্যে দেশের উৎপন্ন ১৭ দ্রব্য প্যাকেট বা বাজারেজাত করতে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে। পাটের ব্যাগের বিপক্ষে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে এ অভিযান পরিচালনা করার লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ।
পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এ নির্ধারিত ১৭ টি পণ্য যেমন ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেয়াঁজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুড়া পরিবহণ ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষায় সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু করে।
জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ এ অভিযান সফল করতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথেও আন্ত : মন্ত্রণালয় সভা এবং পাটজাত পণ্য প্রদর্শনী অব্যাহত রাখার নির্দেশ রয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সোনালী আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়ায় দেশে-বিদেশে পাটের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন এবং এর বহুমুখী ব্যবহারকে উৎসাহিত ও জনপ্রিয় করতে ১৭টি পণ্যের পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিরোধী প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তাই সরকার এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশের সকল প্রকার সড়কপথ, জলপথ, স্থলবন্দর, মালামাল পরিবহণকারী যানবাহন,উৎপাদনকারী,প্যাকেটজাতকারী,আমদানিকারক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অভিযান স্বরাষ্ট্র,বন ও পরিবেশ, সড়ক ও সেতু পরিবহণ, নৌ-পরিবহণ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ,জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে পরিবেশের ওপর রিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশের দূষণ বাড়ছে ।
এছাড়াও বায়ু দূষণ,শব্দদূষণ,পানি দূষণ প্রভৃতি দূষণে জনজীবন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সরকার প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করে এর বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিকল্প দ্রব্যগুলোর দাম ও সহজলভ্য করার প্রক্রিয়া সৃষ্টি করায় ব্যাপক গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ হ্টা বাজারের দোকানে, মাছ বাজারে, তরি-তরকারির দোকানে পলিথিন ব্যাগে এখন সায়লব। বাজারের স্থায়ী দোকান থেকে খোলা বাজারের খুচরা যে কোনো দ্রব্য কেনা মাত্র পলিব্যাগে ঢুকিয়ে ক্রেতাকে স্ব-হাস্য বদনে দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম্য ছোট ছোট হাট বাজারের মুদি দোকানগুলোতে এ পলিথিনের ব্যবহার ও কেজি দরে অন্য দোকানীদের কাছে বিক্রি করার দৃশ্য ব্যাপকহারে দেখা যাচ্ছে। আগে ছিলো এ সব পলিথিন ব্যাগ নানা রং বেরং এর। এখন শুধুই সাদা ধব ধবে। এ প্রবণতা একইবারেই বন্ধ ছিলো। এখন পুনরায় চালূু হচ্ছে। এটা বন্ধ না করা গেলে পরিবেশে আবারও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি হবে। প্রয়োজনীয় আইন আছে। কিন্তু কতটুকু প্রয়োগ হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না ।
পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ব্যাগ ও প্ল্যাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার দেশের পরিবেশের ওপর মারাত্নক প্রভার ফেলেছে। পলিথিন পরিবেশগত ভারসাম্যকে দারুনভাবে ব্যাহত করে চলছে। পলিথিন মুক্ত সমাজ গড়তেও জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসা উচিৎ। ওয়েল্ড্রিং কারখানা,সাবান,রং,ট্রেনারি শিল্প কারখানা ও হাসপাতালের বর্জ্যে পরিবেশকে দূষণ করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নদী,খাল,বিল পুকুর ও ডোবার পানি দূষণও বাড়ছে ।
এসব কারণে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। দেশের নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে মৎস্য সম্পদ, কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত ও জলবায়ূ পরিবর্তন হয়ে মানুষের নানা রোগ বালাই দৃশ্যমান হচ্ছে।
আমাদের দেশ প্রকৃতির লীলাভূমি। যেকটি বন রয়েছে তম্মধ্যে সুন্দরবন একটি। সুন্দরবনসহ অন্যান্য বনে ৪০ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপন্ন,অতিবিপন্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বন বিনাশ, পিটিয়ে মারা,শিকার করে , রোগাকান্ত দ্বারা আক্রান্ত ,পর্যাপ্ত খাবার ও প্রাকৃতিক বন্যা,মহামারি, দুর্যোগ,ঘূর্ণিঝড় ও আশ্রয়ের অভাব ও আগুন লাগিয়ে বন উজাড় হওয়াতে এ সব প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।
পৃথিবীর বৃহত্তম ৩টি ম্যানগ্রোব এর মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি । এর আয়তন ১০ হাজার কি.মি.। আর বাংলাদেশের অংশে রয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কি.মি.। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম।এ বনে ২ শ’৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাস্থল আছে। এর আশ-পাশের লোনা পানিতে রযেছে হাঙ্গর,কুমির,ডলপিন ও ২শ’৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ সব প্রাণীকূল ও জীব বৈচিত্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে।
জলবায়ূর পরিবর্তন পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তাই জীব-বৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশ ও জাতীয় স্বার্থে এবং পরিবেশ রক্ষ্ায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে প্লাস্টিক দ্রব্য বা পলিথিন বর্জনের সিদ্ধান্তসহ পরিবেশ রক্ষার সকল বিষয়গুলো মেনে নিয়ে তা কার্যকর করতে সহায়তা করতে হবে।
পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ শিল্প কারখানা সৃষ্ট দূষণ। এসব দূষণ রোধকল্পে বর্তমান সরকারের পরিবেশ অধিদফতর সীমিত জনবল নিয়েও শিল্প কারখানাগুলো নিয়মিত মনিটর করছে এবং দূষণকারী শিল্প কারখানাগুলোকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি জমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) জারি করেছে। এ আইন বাস্তবায়ন ও পোড়ানো ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে।’
বায়ুদূষণকারী অবৈধ কারখানা ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কার্যক্রম, কালো ধোঁয়া নির্গমণকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ও মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন অধিদফতর ৭ হাজার ২শ ২০ হেক্টর সমতল ভূমি ও শাল বন পুনরুদ্ধার, ১ লাখ ৩০ হাজার ৫শ ৮০ হেক্টর পাহাড়ি বন পুনরুদ্ধার, ৫শ হেক্টর আগর বন,১৫ হাজার কি.মি. স্ট্রিপ বাগান,৫০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ অন্যান্য বাগান সৃজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়ে।
< লেখক পরিচিতি: আবদুল গনি,শিক্ষক,লেখক ও সাংবাদিক,ইন্টারনেট ভিক্তিক পরিচালিত নিউজপোর্টাল চাঁদপুর টাইমস । ৫ জুন ২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur