ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে (২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে) দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ নারী ও ৫১টি শিশু রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১৪ দিনে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৫৬ জনের, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৫৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৪.৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ শতাংশ। এই সময়ে সাতটি নৌ দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ১৬.১৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১.৯৫ শতাংশ। অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেলে ধাক্কা/চাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯.০৪ শতাংশ। অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২.৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫১.৪২ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরের সময়ে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৪ জন নিহত হয়েছিল। সেই হিসাবে এ বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫.৭৪ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৬.৪১ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৩টি দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এবারের ঈদুল ফিতরে রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ৯০ লাখ মানুষ নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে যাত্রা করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৩ কোটি মানুষ যাতায়াত করেছে। ঈদের আগে-পরে যথেষ্ট ছুটি থাকায় এবং সরকারের কিছুটা তৎপরতার কারণে ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে গণপরিবহনের টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও পথেঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
ঈদযাত্রায় সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল ব্যাপক মোটরসাইকেলের ব্যবহার, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। গণপরিবহন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী না হওয়া এবং যানজট এড়াতে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা করেছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কারণ মোটরসাইকেল চার চাকার যানবাহনের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মোটরসাইকেল দূরের যাত্রায় কোনোভাবেই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না।
এদিক ঈদযাত্রা ও ঈদ উদ্যাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে। গত বছরের ঈদুল ফিতরের চেয়ে এ বছরের ঈদুল ফিতর উদ্যাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৮.৪১ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৭৪ শতাংশ।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তাঁরা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, ফলে দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। এটা সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার মোটরসাইকেলের ব্যবসা করতে গিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার জনসম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে এবং রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ করে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করা। অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে, সে জন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ এ বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।’
বার্তা কক্ষ, ১২ মে ২০২২