Home / চাঁদপুর / উজানের ঢলে চাঁদপুরের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি
উজানের

উজানের ঢলে চাঁদপুরের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি

উজানের ঢলে গত কয়েকদিন চাঁদপুরের বিভিন্ন নদী নালা ও খাল বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার নদী তীরবর্তী কোন এলাকার নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত হয়নি। উত্তর থেকে ধেয়ে আসা বানের পানির তীব্র শ্রোত দেখা দিয়েছে মেঘনা নদীতে। এতে চাঁদপুর ভাঙ্গন প্রবণ এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ভাঙ্গন আতঙ্ক। পাশাপাশি ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী দিয়ে খাল বিলের ভিতরে ঢুকছে পানি। ‘নদীর জল ঘোলাও ভালো’ এই প্রবচন এখন আর সঠিক বলে মানছেন না সাধারণ মানুষ। কারণ বর্তমানে ঘোলা পানির সংস্পর্শে এসে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরের সর্বত্র দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। অসতর্কার কারণে বন্যার দুষিত পানির সংস্পর্শে এসে বর্তমানে শিশুরা অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারত থেকে ধেয়ে আসা ডলের পানি তিস্তা নদী ভাসিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে সুনামগঞ্জের অসংখ্য হাওর। ঐসব এলাকার ফসলি জমি ডুবে যাচ্ছে ধেয়ে আসা পানিতে। প্রতিদিনই হাওড় রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কোন অবস্থাতেই হাওরের বাঁধ রক্ষা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সুনামগঞ্জের পাহাড়ি নদ-নদীতে অস্বাভাকিভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওড়সংলগ্ন ২৭নং পিআইসির অধীন গলগলিয়া বাঁধ ভেঙে হাওড়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে বাঁধটির ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এভাবে সুনামগঞ্জে ইতোমধ্যে অসংখ্য বাঁধ ভেঙ্গে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
এদিকে উত্তরের উজানের পানির চাপ পড়ছে চাঁদপুরের নদী নালাতেও। এতে দেখা দিয়েছে বন্যার মতো পরিবেশ। উজানের পানি নিস্কাশনের স্থান হলো এই পদ্ম-মেঘনা। এই নদী দিয়ে যদি পানি সঠিকভাবে ধাবিত হতে না পারে তাহলে আশাপাশের নিম্নাঞ্চ প্লাবিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ জন্য ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তাছাড়া ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ দিনগুনছে ভাঙ্গনের শঙ্কায়। প্রতিবছর পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে থাকলে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গনের শিকার হন অসহায় মানুষ। এতে বাস্তহারা হন শত শত পরিবার। ঐসব মানুষকে সরকার আশ্রয়হীন উল্লেখ করে আবাসনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ঐসব মানুষ চান তাদের তাদের বসত ভিটা রক্ষার জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। তারা মনে করছেন সরকার আশ্রয়নের জন্য সরকার যেমন তৎপরতা দেখান সেই পরিমান তৎপরতা ভাঙ্গন রক্ষায় দেখান না। যার কারনে নিজের বসত ভিটা হরিয়ে আশ্রয়নে গিয়ে পরবাসী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।

দীর্ঘদিন শহর রক্ষা বাঁধ ব্যবহার, বর্ষা মৌসুমে নদীর ঢেউ ও স্রোতের আঘাতে নির্মিত প্রতিরক্ষা কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৯ সালে শহরের পুরান বাজার হরিসভা এলাকায় প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখন সেখানে জরুরিভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক কাজ সম্পাদন করা হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর তাৎক্ষনি ব্যবস্থার নেয়ার মাধ্যকে শহর রক্ষা বাঁধের সংস্কার করে আসছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তবে জানাযায় চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের নতুন বাজার ও পুরান বাজার সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী ও শাক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ৪২১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, এর আগে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে চাঁদপুর শহরকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে অর্থাৎ ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তবে চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভাঙ্গনের ব্যাপারে সব সময় অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখার কারণে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নদী রক্ষা কমিশন ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। নদীর কবল থেকে চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।

এদিকে এব্যাপারে চাঁদপুর পুরান বাজার রনাগোয়াল এলাকার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা খ্যাত এর বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র চাঁদপুর সময়কে বলেন, ‘পানি বাড়লে আমরা আতঙ্কে থাকি, কারণ পানি বাড়লে আমাদের এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ভীষণ ক্ষতি হয়।’

ঐ এলাকার গোবিন্দ দাস বলেন, ‘নদীর ভাঙ্গন থেকে আমাদের বসত ভিটা রক্ষা করা জরুরী, এর জন্য প্রতিবছর বাঁধ মেরামতের পাশাপাশি, টেকশই ও দীর্ঘ মেয়াদী উন্নত বাঁধ নির্মানে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। ভাঙ্গন দেখা দিলে শুধু সংস্কারের মাধ্যমে এই গুরুত্বপুর্ণ জনপদ রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ভাঙ্গনের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। কারণ প্রকৃত কারণ চিহ্নিত না করে শুধু সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রের ক্ষতিই হয় না বরং অর্থ জলে ফেলার শামিল।

এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা বলছেন তারা সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যে কোন দুর্ভোগ মোকাবেলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। তারা জনান, ‘আমরা সব বিষয় প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষন করছি।

এদিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের নদী নালায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এতে কিছু কিছু এলাকার ফসলি জমির ক্ষতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয় বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

তবে উত্তরের বন্যার খবরে সকলের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে চাঁদপুরের মেঘনা নদী যদি ডলের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে এসব এলাকায় বন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে করছেন অনেকে।

তাছাড়া হানারচর ইউনিয়ন, কাটাখালি, হাইমচর, চরভৈরবী এলাকায় নদীর ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছেন তীরবর্তী এলাকার সাধারন মানুষ। তাছাড়া আর কিছু পানি বৃদ্ধি পেলেই অনেক ফসলের ক্ষতি হবে বলে মনেকরছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে হানারচর ইউনিয়নের মোক্তার হোসেন বলেন, ‘একদিকে খরা, অন্যদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধি দুটাই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়বো।

নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় পানি বৃদ্ধি পেলে যেসব ফসল ক্ষতির মধ্যে পড়বে তার মধ্যে, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন প্রকার শাক, সবজি উল্লেখযোগ্য।

প্রতিবেদক: ফরিদুল ইসলাম,১৯ এপ্রিল ২০২২