শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশ গড়তে চাই জনগণের কর্মসংস্থান। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের চাকরি। সৎ উপায়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন। আমাদের দেশ অত্যন্ত জনবহুল দেশ। এ দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ স্বভাবতই দেশের জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। তাই শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে রয়েছে হতাশা ও উৎকণ্ঠা।
একটি জাতীয় পত্রিকার পরিসংখ্যানে দেখেছি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের প্রায়ই ৬৪ শতাংশ বেকার থাকছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও চাকরিবিহীন গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। শিক্ষিত হওয়ার ফলে তরুণ প্রজন্মের দ্বারা খেতে খামারে কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে, আবার চাকরিও দুর্লভ।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পিয়ন পোস্টে চারটি পোস্টের জন্য ১ হাজার ৬শ জন আবেদন করেছে। তাদের মধ্যে আবার অসংখ্য আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনার্স-মাস্টার্স। একটি সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে দেখেছিলাম ২১টি পৃথক পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ১ লাখ ২১ হাজার। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সরকারি চাকরির জন্য মানুষ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে তদবির করছে,যা দেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের শামিল।
এমন কঠিন প্রতিযোগিতাময় পরিবেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে থাকছে চরম হতাশা। এখান থেকেই মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার মতো মানসিক সমস্যা বেড়েই চলেছে। আবার এসব তরুণকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাজের স্বার্থান্বেষী ও দুর্জন ব্যক্তিগণ অপকর্মে ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি জাতীয় পত্রিকার একটি খবরে দেখলাম, শিক্ষিত একজন তরুণকে ব্যবহার করা হয়েছে একজন রাজনীতিবিদকে খুন করার জন্য। বিনিময়ে তার আগের সব মামলা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ যত বাড়ানো যাবে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ততই কমবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুব একটা কঠিন নয়,দরকার কর্তৃপক্ষের প্রজ্ঞা ও শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
আমাদের বিশ্বাস,আমাদের দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষই দেশটির নাম জানেন। দেশটি ওসেনিয়ার অন্তর্গত একটি দেশ। নাম তার ‘পালাও’। ৪৬৬ বর্গকি.মি আয়তনের দেশটিতে ২২ হাজার লোকের বসবাস। যার মধ্যে ২ হাজার লোকই বাংলাদেশি। ২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সুপারি বাগানের সুপারি তোলা ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত।
এ ছাড়া বাঙালিরা সেখানে সমুদ্রে সার্ফিংয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশটির মাথাপিছু আয় ১৭ হাজার ৪৩৮ মার্কিন ডলার। এমন নাম না জানা দেশে জনসংখ্যার ১০ ভাগই বাঙালি।
পৃথিবীতে এমন নাম না জানা বা কম পরিচিত অনেক দেশ আছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা, পরিস্থিতি,বসবাসের পরিবেশ আকর্ষণীয়। এসব দেশে বেঁচে থাকার মতো কর্মসংস্থান তৈরি করার উদ্যোগ, চেষ্টা ও প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটানো যেতে পারে। তাহলেই বহুলাংশে দূর হবে বেকার সমস্যা।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর সবাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভিনদেশে নিজেদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপনিবেশ তৈরি করেছিল।
উপনিবেশগুলো থেকে আহরিত অর্থ জ্ঞান বিজ্ঞানচর্চা ও শিল্পোত্পাদন ব্যবহার করে তারা উন্নত ও ধন সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথমে এসে একটি বিষয় লক্ষণীয় তা হলো ইউরোপ এবং আমেরিকার উন্নত দেশগুলি প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
ইউরোপ ও আমেরিকার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের চাহিদার বিরাট অংশ আসে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে। আফ্রিকানদেরকে মদ ও মাদকে আসক্ত রেখে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, বিগ্রহে ব্যস্ত রেখে ইউরোপিয়ানরা নির্বিঘ্নে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনা মহামারি একটি বিষয় আমাদের শিখিয়েছে তা হলো শুধু টাকা থাকলেই চলবে না।
জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণের মৌলিক প্রাকৃতিক রসদ দেশের মধ্যেই থাকতে হবে। করোনার সময় সিঙ্গাপুরে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ শিল্প ও ব্যবসায় উন্নত হলেও সিঙ্গাপুর তার মোট চাহিদার ১০ ভাগ খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে। বাকি অংশের জন্য তারা বিদেশের ওপর নির্ভরশীল।
করোনায় সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ায় সেখানে খাদ্যাভাব হয়েছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সারা পৃথিবীতে তেল, গ্যাস খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই যুদ্ধে ইউরোপের প্রাকৃতিক সম্পদের দেউলিয়াত্ব বিশ্ববাসীর কাছে ফুটে উঠেছে। তাই ইউরোপকে শুধু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে ধরলে আমাদের জন্য বোকামি হবে।
ড.মো.নাছিম আখতার ,১২ এপ্রিল ২০২২
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur