মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সেই ঘোষণা অনুযায়ী এরই মধ্যে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল আর দুর্গম পাহাড়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। যেখানে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেখানে আলো ছড়িয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। বিদ্যুৎহীন নেই কোনো গ্রাম। এ অবস্থায় আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্থাপিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন তিনি।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য দুই বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জেলা সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এ সফরকে ঘিরে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো নির্মূল হয়নি, সে কারণে জনসমাগম এড়িয়ে অনুষ্ঠান করার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ জন্য কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াদের করোনা-ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় যাদের নেগেটিভ আসবে, তাঁরাই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মন্ত্রিপরিষদের অন্তত ২০ জন সদস্য, সংসদ সদস্যরা, ৩০ জনের বেশি সচিব এবং বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত থাকবেন। এই সুধী সমাবেশ থেকেই তিনি সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট রয়েছে। বর্তমানে দুই ইউনিট থেকেই মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মওলা।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চি পিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের প্রথম অংশের আওতায় নির্মিত দুটি ইউনিটে সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অত্যাধুনিক ঢাকনাযুক্ত কোলডোম ব্যবহার করেছে, যার কারণে পরিবেশের ওপর এর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
তবে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে কয়েক দফা ব্যয় বাড়ে। সর্বশেষ ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করলেও তা থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে আরও ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এটি নির্মাণ শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে পায়রা থেকে মোট ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।