কেউ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কেউ দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, কেউ করতেন সামান্য চাকরি। কুমিল্লায় ধর্মগ্রন্থ কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার অভিযোগে তাদের আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাউকে আবার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিনিয়ে দেবার কথা বলে থানায় নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ৫ মাস পার হলেও ছাড়া পায়নি কেউ। তদন্তাধীন মামলায় বিচারহীন জেল খাটছে উক্ত ঘটনায় আটক প্রায় ২শতাধিক আসামী।
২ মার্চ বুধবার সকালে আটক আসামীদের মুক্তির দাবীতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন নারী এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে তাদের আর্তনাদ তুলে ধরেন। কেউ কেউ আবার প্রিয় সন্তান, স্বামী কিংবা ভাইয়ের মুক্তি চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের কান্না আর আকুতিতে সেখানে এক বেদনাঘন আবহ তৈরি হয়, ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ।

পারভিন বেগম নামে পঞ্চশউর্ধো এক নারী বলেন, ‘আমার ২ ছেলে ইব্রাহিম ও গোলাম রাব্বী এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। তারা জেলে থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমি আমার নির্দোশ ছেলেদের মুক্তি চাই। আমার ছেলেদের আমার বুকে ফিরিয়ে দেন, না হয় আমারে গুলি করে মাইরা ফালান’
ফাতেমা-তুজ-জোহরা নামে একজন বলেন, আমার স্বামী তানজিল হোসাইন বাজারে তরকারি বিক্রি করতো। ঘটনার দিনও সে বাজারে তরকারি বিক্রি করতে গিয়েছিলো। পুলিশ বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা বলেছিলো সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিনিয়ে দেয়ার জন্যে থানা যেতে। এরপর ৫ মাস হলেও তাকে ছাড়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, একটি পরিবারের কর্মজীবী মানুষটি যদি ৫ মাস জেলে থাকে তাহলে সেই পরিবারের মানুষগুলো কি খেয়ে বাঁচে। আমরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। দয়া করে আমাদের নিরীহ স্বামী-ভাইদের ছেড়ে দেওয়া হোক।

স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তারা অপরাধী করে থাকেন তাহলে তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। কিন্তু, এভাবে মাসের পর মাস বিনাবিচারে জেলে রাখবে- এটি মেনে নেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, ৫ মাস হয়ে গেছে, অথচ এখনো মামলায় চার্জসিট দেয়া হয়নি। চার্জসিট সম্পন্ন হলে মহামান্য আদালতের রায়ে নির্দোশ প্রমানিত হয়ে অনেকেই ছাড়া পাবেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মন্দীর-পূজা মন্ডপে যারা হামলা করেছে তাদের শাস্তি আমরাও চাই। কিন্তু যারা নিরাপরাধ তাদেরকে কেন আটক রাখা হয়েছে। পুলিশ শুধুমাত্র সিসিটিভির ফুটেজের ছবি দেখাতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং অভিযুক্তদের চিনিয়ে দেওয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে যায়। অথচ ৫ মাস হয়ে গেলেও তাদের ছাড়া হয়নি। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ৪/৫টি করে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে আটকদের পরিবারের কয়েক শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করে।
প্রসঙ্গগত : গত ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় মন্দিরে পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে চাঁদপুর হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন উপজেলায় মোট ১২টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। গুলিতে নিহত হয় ৪ জন। উক্ত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি ও মন্দির ভাঙার দায়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। এই তিন মামলায় দুই হাজার জনকে আসামি করা হয়।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম, ২ মার্চ ২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur