চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চিতোষী-চাটখিল সড়কের সিংহভাগেই রয়েছে বাঁক। এর মধ্যে কিছু বাঁক আছে, যা দূর থেকে বোঝা যায় না। সড়ক নির্দেশনা (রোড সাইন) না থাকায় এসব বাঁক বা মোড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা বলছেন, এ সড়কটিতে প্রতি মাসে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু সড়কের নরহ গ্রামের অংশে এবারই ঘটল সবচেয়ে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। সড়ক নির্দেশনা থাকলে হয়তো এমন দুর্ঘটনাটি ঘটত না।
২২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে চালকসহ ৫ আরোহীর মৃত্যু হয়েছে নরহ গ্রামের মোল্লার টেক বাঁকে। কুমিল্লা সদর থেকে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নে যাচ্ছিলেন নিহত তরুণরা। আনুমানিক রাত ১টার দিকে প্রাইভেটকারটি বাঁকে এসে ব্রেক কষলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে ডুবে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু ঘটে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউপির সদস্য ও রামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান খোকনের ছেলে মো. শাহপরান তুষার (২২), একই এলাকার নরপাইয়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে শাকিল (২৩), চাঁপনি কেশতলা গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম (২৩), যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা গ্রামের মো. আবদুল খালেকের ছেলে নয়ন (২৪) ও গাজীপুর সদর উপজেলার উত্তর খাইলকুর গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪)।
নরহ গ্রামের সড়কের মোল্লার টেকে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে যেতে নেই কোনো নির্দেশনা নরহ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কাদের দুলাল বলেন, দুর্ঘটনার সময় প্রাইভেট কারের পেছন পেছন একটি মোটরসাইকেল চলছিল। মোটরসাইকেলচালক দেখতে পেয়ে নরহ জামে মসজিদের মোয়াজিনকে এসে জানান। পরে মোয়াজিন মাইকে দুর্ঘটনার খবর জানালে স্থানীয়রা এসে গাড়ি উদ্ধার করেন। গাড়িটি পানিতে পড়ায় ভেতরে থাকা কেউ বের হতে পারেননি। পরে তাদের মরদেহ গাড়ির কাচ ভেঙে বের করা হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, চিতোষী-চাটখিল সড়কে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এর মধ্যে মারাত্মক একটি বাঁক হলো নরহ গ্রামের মোল্লার টেক বাঁক। এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়কে অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। কিন্তু কোথাও বাঁক চিহ্ন কিংবা সড়ক নির্দেশনা দেওয়া নেই। যদি নির্দেশনা দেওয়া থাকত, তাহলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনাটি ঘটত না।
স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জসিম মিজি বলেন, এই সড়কে একটু পরপর বাঁক রয়েছে। এতে আমাদেরও ঝুঁকি নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চালাতে হয়। আমরা পুরোনো হওয়ায় বাঁকগুলো জানি। কিন্তু যারা এই সড়কে নতুন, তাদের জন্য বড় সমস্যা। তার সড়কের হাল না বোঝার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য আমিনুল হক বলেন, এই সড়কের বেশির ভাগ অংশে বাঁক রয়েছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কের কোনো বাঁকে সড়ক চিহ্ন কিংবা নির্দেশিকা নেই। আমরা সড়ক বিভাগকে (সওজ) বারবার মৌখিকভাবে অবগত করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখানে দ্রুত সড়ক নির্দেশিকা ও স্পিডবেকার দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমন দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
শাহরাস্তি উঘারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার সড়কটি আঁকাবাঁকা। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ ময়নাতদন্ত করে হস্তান্তর করা হবে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ওই সড়কটি জেলা সড়ক। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা নির্দেশিকা দেওয়ার কথা ছিল কি না, আমার জানা নেই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে আমরা এসব নির্দেশিকা দিয়ে থাকি। দুর্ঘটনা এড়াতে শিগগরিই সেখানে সড়ক নির্দেশিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিবেদক: শরীফুল ইসলাম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২