চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্প মৌসুমের যথাযথ সময়ে চালু না হওয়ায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচসংকট তৈরি হয়েছে। ফলে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, কচুয়াসহ কুমিল্লার বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫০ হাজার কৃষক আসন্ন বোরো মৌসুমে বোরো ধান রোপণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ১৯৯১ সালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, কচুয়া, কুমিল্লার বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের জন্য শাহরাস্তি উপজেলার ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপন করে খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্প। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বর্তমানে ওই প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতিবছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেচ প্রকল্পটি চালু হলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি। ফলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এলাকায় পানিসংকটে বোরো চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কৃষকেরা।
শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর মাঠের কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার পাম্প চালু না করায় আমরা ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। আশপাশের খাল ও পুকুরের পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করলেও চারা রোপণের পর পানি না পেলে জমি শুকিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।’
একই মাঠের কৃষক মো. রবিউল হোসেন জানান, তিনি ইতিমধ্যে বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে রেখেছেন, পানির অভাবে তা রোপণ করতে পারছেন না। ওই ইউনিয়নের বিজয়পুর মাঠের কৃষক মো. হুমায়ুন কবীর জানান, পৌষ মাসের শেষের দিকে এসেও পানির অভাবে ধান রোপণ করতে পারছেন না তিনি। সেচ প্রকল্পের পানি না এলে এবার হয়তো ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।
সেচ প্রকল্পের বিজয়পুর শাখা স্কিমের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সেচ চালু হয়নি। কেন্দ্রীয় সেচ থেকে শাখা স্কিমের মাধ্যমে কৃষকদের পানি সরবরাহ করা হয়।
সরেজমিনে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে স্থাপিত খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের পাম্প সংলগ্ন নদীর পাড়ে গেলে দেখা যায়, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় পানিতে অর্ধমগ্ন হয়ে আছে ২টি পাম্প। সেখানে কর্মরতরা জানান, পানিতে অর্ধেক ডুবে থাকা পাম্প ২টি বিএডিসি কর্মকর্তারা নিয়ে যাওয়ার কথা। সাড়ে ১২ কিউসেক ডিজেল চালিত পাম্পটি ১০ বছর ধরে এখানেই পড়ে আছে। ৫ বছর আগে পার্শবর্তী চিতোষী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে ১০ কিউসেক ডিজেল চালিত আরেকটি পাম্প এখানে এনে রাখা হয়েছে যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পন্টুনসহ নদীতে ডুবে যাচ্ছে। প্রকল্পের শ্লুইচ গেটের অবস্থা খুব নাজুক। পানির চাপে তা বেশ ফাঁক হয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে। সাড়ে ১২ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত পাম্পটি পাশের ২টি পাম্প না সরানোর কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ টি সেকেন্ডারী পাম্প স্কীম ম্যানেজারদের জন্য প্রস্তুত রাখার পরও কেন্দ্রীয় পাম্প চালু না হওয়ায় তা কাজে আসছে না।
মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কেন পাম্প চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়নি জানতে চাইলে সেচ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় ম্যানেজার ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোঃ আবু হানিফ জানান, বিএডিসির অসহোগিতার কারণে পাম্প চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে তাঁদের কোন জনবল নেই বললেই চলে। জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী বার বার আমার কাছে টাকা দাবি করেন অথচ বিএডিসি আমার কাছে কোন টাকা পাবে না। গত বছর তিনি আমার নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন, এবছর আবার ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু পাম্প চালুর বিষয়ে কিছু বলছেন না। শ্লুইচ গেইটটি যেকোন সময় ভেঙ্গে সেচ প্রকল্প স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ব্যপারে বারবার মেরামতের কথা বললেও তিনি সাড়া দেন নি।
আবু হানিফ আরো বলেন, বর্তমানে অচল ২টি পাম্প না সরালে সেচ শুরু করা সম্ভব হবে না। যা ডিসেম্বরে চালু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। অকেজো হয়ে যাওয়া ৪টি মোটর বারবার ফেরত নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি সেটি ফেরত নিচ্ছেন না। অথচ বছর শেষে নষ্ট মেশিনের ভাড়া ঠিকই নিচ্ছেন। ওনার অনৈতিক দাবী পুরন করতে পারছিনা বলেই সেচ কার্যক্রম বন্ধের পথে।
চাঁদপুর জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আসিফ কামরুল আশ্রাফী জানান, অচল পাম্পগুলো সরানোর দায়িত্ব সেচ ম্যানেজারের নিজের। সেগুলো তিনি নিজে নিয়েছেন নিজ দায়িত্বে দাফতরিকভাবে ফেরত দিবেন। ২ বারে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন টাকা দিয়ে থাকলে ম্যানেজার বৈধ ডকুমেন্ট দেখাক। এ প্রকল্প বাবদ বিএডিসি ম্যানেজারের কাছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবে। তিনি কৃষক থেকে ঠিকই টাকা নিচ্ছেন কিন্তু বিএডিসিকে পরিশোধ করছেন না। বিজয়পুর স্কীম ম্যানেজারের কাছ থেকে ডাবল লিফটিং পাম্প বাবদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত ডিমান্ড নোট পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফজলু সাহেব কথা বললেই হবে।
প্রতিবেদক: মো: জামাল হোসেন, ৯ জানুয়ারি ২০২২